ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পের বিজয়ে বিস্ময় প্রকাশ অনেকেরই

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১০ নভেম্বর ২০১৬

ট্রাম্পের বিজয়ে বিস্ময় প্রকাশ অনেকেরই

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে চলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। একজন অপরিচিত ব্যবসায়ী থেকে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার খবরে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কেননা প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনের তুলনায় তিনি ছিলেন একেবারেই আনাড়ি। আর শুরু থেকেই বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচিতও হয়েছিলেন তিনি। তবে যাই হোক না কেন, বুধবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ শেষ পর্যন্ত তাকেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ২০১৫ সালের শুরুতেই হিলারি ক্লিনটন যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থী আর তার বিপরীতে রিপাবলিকানদের ভরসা হতে পারেন ট্রাম্প- এমন ভরসা রিপাবলিকান শিবিরেই ছিল না। প্রার্থী হলেও শেষ পর্যন্ত হিলারির সঙ্গে ভোটের ময়দানে ট্রাম্প টিকতে পারবেন, সে ভরসা করার মতোও বেশি লোক ছিল না। সেই সঙ্গে নির্বাচনী জরিপসহ সব সূচকই ছিল ট্রাম্পের বিপরীতে। অথচ দলের বাঘা বাঘা নেতাদের হটিয়ে প্রেসিডেন্ট পদে রিপাবলিকানদের প্রার্থিতা নিশ্চিত করা ট্রাম্পই হিলারিকে পরাজিত করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া অভিবাসন, মুসলিম ইস্যু ও নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা ঘটনায় পর্যুদস্তু আবাসন ও ক্যাসিনো ব্যবসায়ী ট্রাম্পেই ভরসা খুঁজেছেন মার্কিনীরা। ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৯৪৬ সালের ১৪ জুন নিউইয়র্ক শহরের কুইন্সে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ফেড ট্রাম্প ছিলেন নিউইয়র্কের ধনকুবের ও আবাসন ব্যবসায়ী। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে ট্রাম্প চতুর্থ। ১৯৬৪ সালে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন তিনি। ১৯৬৮ সালে পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটির হোয়ারটন স্কুল অব ফাইন্যান্স থেকে পান অর্থনীতিতে ডিগ্রী। ধনকুবেরের সন্তান হয়েও শুরুতে পৈত্রিক প্রতিষ্ঠানে ছোট পদেই যোগ দেন ট্রাম্প। এর আগে বাবার কাছ থেকে ১০ লাখ ডলার ধার করে শুরু করেন নিজের ব্যবসা। ক্রমে হাতে আসে বাবার ব্যবসা। ১৯৭১ সালে কোম্পানির নাম বদলে রাখেন ট্রাম্প অর্গানাইজেশন। ১৯৭৫ সালে ট্রাম্প লোকসানি প্রতিষ্ঠান হায়াত হোটেল কর্পোরেশনের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে নতুন হোটেল নির্মাণ শুরু করেন। ১৯৮০ সালে হোটেলটি চালু হওয়ার অল্পসময়ের মধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯৭৯ সালে ট্রাম্প ম্যানহাটনের ফিফথ এ্যাভিনিউয়ে জমি ইজারা নিয়ে ২০ কোটি ডলারের এ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স নির্মাণ শুরু করেন। ১৯৮২ সালে কমপ্লেক্সের নাম হয় ট্রাম্প টাওয়ার। ১৯৮৪ সালে আটলান্টিক সিটিতে ট্রাম্প নির্মাণ করেন ২৫ কোটি ডলারের ট্রাম্প প্লাজা। পরে অংশীদারী প্রতিষ্ঠান হলিডে ইনের শেয়ার কিনে ওই প্লাজায় নির্মাণ করেন হোটেল ও ক্যাসিনো। এরপর হিলটন হোটেলের ক্যাসিনো-হোটেল কিনে নিয়ে ৩২ কোটি ডলার খরচে নির্মাণ করেন ট্রাম্প ক্যাসল। ১৯৯০ সালে চালু করেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্যাসিনো ‘ট্রাম্প তাজমহল’। ২০০৪ সালে এনবিসি টেলিভিশনে ‘দ্য এ্যাপ্রেন্টিস’ রিয়েলিটি শো করে দারুণ জনপ্রিয়তা পান ট্রাম্প। এদিকে ধনকুবের ট্রাম্পের ব্যবসায়িক পরিধি মার্কিনমুলুক ছাড়িয়ে মুম্বাই, ইস্তানবুল এবং ফিলিপিন্সেও আসন গাড়ে। ঝানু এ ব্যবসায়ী বিনোদন ব্যবসাতেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৫ পর্যন্ত মিস ইউনিভার্স, মিস ইউএসএসহ বিভিন্ন সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজক ছিলেন তিনি। ব্যক্তি জীবনে ট্রাম্প তিনটি বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রী চেক এ্যাথলেট ও মডেল ইভানা জেলনিকোভা। ১৯৯০ সালে সে সম্পর্ক চুকে যায়। ১৯৯৩ সালে মারলা মেপলসকে বিয়ে করেন, সে সম্পর্ক টিকে ছিল ১৯৯৯ পর্যন্ত। ২০০৫ সালে মডেল মেলানিয়া ক্লাউসকে বিয়ে করেন ট্রাম্প। তিনি প্রেসিডেন্ট পদে লড়ার আগ্রহের কথা প্রথম প্রকাশ করেন ১৯৮৭ সালে। ২০০০ সালে রিফর্ম পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেষ্টা করেন তিনি। ২০১৪ সালে রিপাবলিকান পার্টিতে যোগ দেন ট্রাম্প। আর ২০১৫ সালের ১৬ জুন প্রথম প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন তিনি। ‘মেক এ্যামেরিকা গ্রেট এগেইন’ সেøাগানে শুরু করেন প্রচারণা। এ সময় তিনি হয়ে ওঠেন দলের সবচেয়ে বড় দাতা ও তহবিল সংগ্রাহক। ওই বছরের ১৯ জুলাই ট্রাম্প লাভ করেন দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা। নানান মন্তব্য করে বিতর্কিত ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত সব বিতর্ক পাস কাটিয়ে বুধবারের নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। ট্রাম্প গভীরভাবে ধর্মকে বিশ্বাস করেন। ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে ‘৭০০ ক্লাব’কে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ট্রাম্প বলেছিলেন, আমি একজন প্রোটেস্ট্যান্ট, একজন প্রেসবিট্যারিয়ান এবং অনেক বছর ধরে গির্জার সাথে আমার একটি ভাল সম্পর্ক রয়েছে। আমি মনে করি ধর্ম একটি বিস্ময়কর জিনিস। আমি মনে করি আমার ধর্ম অপরূপ। নির্বাচনী প্রচারণাকালে ডোনাল্ড তার শ্রোতাবৃন্দদের উদ্দেশে বলেছিলেন তার বই ‘দ্য আর্ট অব দ্য ডিল’ হলো তার দ্বিতীয় পছন্দের বই। তিনি আরও বলেন, তোমরা কী জানো আমার প্রথম পছন্দের বই কোনটি? বাইবেল! কোন কিছুই বাইবেলের সমতুল্য নয়। প্রখ্যাত মার্কিন লেখক বারবারা এরেনরিচ ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্থানের বিষয়ে বলেছেন, আমার মনে হয় না, তার উত্থানের সঙ্গে যে কোন বর্ণের শ্রমজীবী শ্রেণীর কোন সংশ্রব আছে। অথচ মহৎ কোন রাজনৈতিক নেতা উঠে আসেন বিশেষ করে এ শ্রেণীর হাত ধরেই। ট্রাম্পের উত্থানের মূলে আমার যা মনে হয়, বিশেষ করে কাজ করেছে তার ব্যবসা-বাণিজ্য ও আর্থিক আভিজাত্য। তার সমশ্রেণীর মানুষের আকর্ষণই তাকে রাজনীতির মাঠে পা রাখতে উদ্বুদ্ধ করেছে। আর তারাই তাকে লুফে নিয়েছে।
×