ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ মুলতবি সভায় প্রধানমন্ত্রী

নিজের জন্য নয়, দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করুন

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১০ নভেম্বর ২০১৬

নিজের জন্য নয়, দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করুন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজের জন্য নয়, দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, যে দলের জন্মই হচ্ছে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর হাতে, যারা নির্বাচনী ব্যবস্থাকেই কলুষিত করে গেছে সেই বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের ছবক শুনলে সত্যিই হাসি পায়। দেশে নাকি গণতন্ত্র নেই! বিএনপি কী জিয়াউর রহমানের মতো প্রতিরাতের কার্ফু গণতন্ত্র চায়? এ দলটির মুখে গণতন্ত্রের কথা মানায় না। বুধবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ মুলতবি সভার শুরুতে সূচনা বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ‘বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে’- এমন অভিযোগ সরাসরি নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন মিথ্যা মামলা দেয়া হয়নি। পাল্টা প্রশ্ন করে তিনি বলেন, যারা শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে তাদের কী বিচার হবে না? প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, যারা আন্দোলনের নামে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, তা-ব চালিয়েছে, বাংলাদেশের মাটিতে অবশ্যই তাদের বিচার হবে। সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসীদেরও বিচার হবে। খুনী, মানুষ পুড়িয়ে হত্যাকারী, জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের বিচার চলতেই থাকবে। আর যারা একাত্তরের গণহত্যাকারী যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী-উপদেষ্টা বানিয়ে তাদের হাতে লাখো শহীদের রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিলেন, বাংলার মাটিতে তাদেরও একদিন বিচার হবে। কারণ যে খুন করে, আর যে আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদ দেয় তারা সমান অপরাধী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে যৌথ সভায় দলের আগামী দিনের সাংগঠনিক কর্মকৌশল নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। বৈঠকে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের নির্বাচিত অধিকাংশ সদস্যই উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ২০৪১ সালের মধ্যে কেমন বাংলাদেশ দেখতে চাই, তা লিখিত আকারে জমা দেয়ার জন্যও নতুন নেতাদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়। একইসঙ্গে সরকারের উন্নয়ন ও সাফল্যগুলো জনগণের সামনে ব্যাপকভাবে তুলে ধরার জন্যও নির্দেশ দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী পুনর্বার সম্পূর্ণ দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দিয়ে বলেন, ২০৪১ সালে বাংলাদেশে কোন দারিদ্র্য থাকবে না। বাংলাদেশ হবে সম্পূর্ণ দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ। তাই নিজ নিজ এলাকা চষে বেড়িয়ে খুঁজে খুঁজে কোথায় সত্যিকারের দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত মানুষ আছে তাদের তালিকা তৈরি করুন। কোথায় হতদরিদ্র, অসহায় ও প্রতিবন্ধী আছে তা খুঁজে বের করুন। তালিকা ধরে ধরে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন আমাদের করতে হবে। কারণ আওয়ামী লীগের রাজনীতিই হচ্ছে দেশের জনগণের জন্য। ভবিষ্যতে দেশের মানুষ আর যাতে কোন ষড়যন্ত্রের শিকার না হয় সেজন্য সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, অবৈধভাবে যারা ক্ষমতা দখল করে, তারা নিজেদের ভাগ্যে গড়তে পারে, দেশের মানুষের কোন কল্যাণ করতে পারে না। জনগণ কিছু পায় না। দেশের উন্নতি নয়, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে তারা নিজেদের ভাগ্যের উন্নতি করেছে। বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থের মালিক হয়েছে। তিনি বলেন, এ দেশের মানুষকে বার বার ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয়েছে। তাই ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে সেজন্য জনগণকে সচেতন করতে হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদসহ সকল অশুভ শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা ও প্রতিরোধ করতে হবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বাংলাদেশকে শান্তির দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। তাই এ দেশে কোন সন্ত্রাসী-জঙ্গীবাদীদের জায়গা হবে না। এ বিরুদ্ধে দেশব্যাপী অভূতপূর্ব গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে বলেই আমরা সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ দমন করতে পারছি। তবে এ গণসচেতনতা ধরে রাখতে হবে, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এদের গণপ্রতিরোধ করতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশব্যাপী ব্যাপক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশের ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখে বিশ্বের অনেক বড় বড় নেতাও হতবাক হয়েছেন আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন কীভাবে এটা সম্ভব হয়েছে। বিশ্বমন্দার মধ্যেও প্রবৃদ্ধি ৬ ভাগের ওপর ধরে রেখে এখন সাত ভাগে উন্নীত করেছি। আমরা বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে বলেছি, এত উন্নয়ন আর কিছুই না, আমরা দেশ ও জনগণের জন্য আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করি। দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নই আমাদের মূল লক্ষ্য। আর এ কারণেই দেশের এত উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর আমরা ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমরা সেই অর্জনের পথে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার ভিশন জাতির সামনে তুলে ধরেছি। ইনশাল্লাহ এই ভিশনও আমরা পূরণ করতে পারব। আজ গোটা বিশ্বই বলছে, বাংলাদেশে ঈর্ষণীয় উন্নতি হয়েছে। আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে কেন্দ্রীয় নেতা ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের কাছে ধারণাপত্র চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের সংগঠন। জনগণের কল্যাণ করাই আমাদের কাজ। এবারের জাতীয় সম্মেলনে ঘোষণা দিয়েছি আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে দেশে কোন দারিদ্র্য থাকবে না। একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। এ জন্য মাঠ পর্যায়ে তালিকা প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছি। এখন আপনাদের (দলের কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যদের) কার কী ধারণা রয়েছে তা দিন। দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত ও ক্ষুধামুক্ত করবই। কেউ গৃহহারা, স্বাস্থ্যহীনতা ও নিরক্ষর থাকবে না। নিজের জন্য নয়, দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করতে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বলেন, আমরা তৃণমূল থেকে দেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছি। দেশের গ্রামাঞ্চলের চেহারাও আজ পাল্টে গেছে। উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য দেশবাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সেদিন আর বেশি দূরে নয়, বাংলাদেশে কোন মানুষ দরিদ্র্য থাকবে না, একটি মানুষও না খেয়ে থাকবে না। দেশের কেউ নিরক্ষর থাকবে না। দেশের প্রতিটি মানুষের জীবনযাত্রা উন্নয়ন হবে, শিক্ষা পাবে, উন্নত চিকিৎসা পাবে। উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড় করানোর মাধ্যমে আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ করব ইনশাল্লাহ। বৈঠকে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও আবুল মাল আবদুল মুহিত, আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, এস এ মালেক, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, এইচ টি ইমাম, ড. গওহর রিজভী, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সৈয়দ রেজাউর রহমানসহ অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা ও উপদেষ্টা পরিষদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
×