ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আমেরিকার ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হলেন ট্রাম্প;###;ট্রাম্প পেয়েছেন ২৯০ ইলেক্টোরাল ভোট, হিলারি ২১৮

সব হিসাব নিকাশ পাল্টে গেল ॥ ট্রাম্পই প্রেসিডেন্ট

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১০ নভেম্বর ২০১৬

সব হিসাব নিকাশ পাল্টে গেল ॥ ট্রাম্পই প্রেসিডেন্ট

নাজিম মাহমুদ ॥ রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষার অবসান। গণমাধ্যমের জরিপ ও সকল হিসাব-নিকাশ পাল্টে গেল। ভোটের মাধ্যমে একজন অনভিজ্ঞ রাজনীতিক ও ধনকুবেরকেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নিল মার্কিনীরা। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রেসিডেন্ট হলেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু দুদিন আগেও বিশ্বের অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ৭০ বছর বয়সী ট্রাম্পকে সেরার আসনে রাখেননি। মার্কিন প্রশাসনের নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা হিলারিকেই এগিয়ে রাখার পক্ষে ছিলেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হয়। এতে বিপুল জয় পান ট্রাম্প। কোন প্রার্থীর জয়ের জন্য ৫৩৮ ইলেক্টোরাল ভোটের মধ্যে দরকার ছিল ২৭০ ভোট। কিন্তু মোট ২৯০ ইলেক্টোরাল ভোট পেয়ে বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন পান ২১৮ ইলেক্টোরাল ভোট। পরাজয় মেনে নিয়ে ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানান হিলারি। নির্বাচনে জয়ের পর এক র‌্যালিতে সকল মার্কিনীর প্রেসিডেন্ট হওয়ার অঙ্গীকার করেন ট্রাম্প। আগামী ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেবেন ট্রাম্প। প্রথমে ট্রাম্পকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়ে পরাজয় স্বীকার করেন হিলারি। নিউইয়র্কে নিজের নির্বাচনী সদরদফতরে সমর্থকদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ফোন করে অভিনন্দন জানানোয় হিলারিকে ধন্যবাদ জানান। এ সময় বিভেদ ভুলে ঐক্যের ডাক দেন ট্রাম্প। খবর বিবিসি, এএফপি, সিএনএন, টেলিগ্রাফ ও ওয়াশিংটন পোস্ট অনলাইনের। এদিকে, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে হিলারি ক্লিনটন কিছু বলবেন না বলে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রচার শিবিরের প্রধান জন পোদেস্তা জানান। স্থানীয় সময় বুধবার হিলারি নিজের প্রতিক্রিয়া জানাবেন বলে উল্লেখ করেন জন পোদেস্তা। জয়ের পর সমর্থকদের উদ্দেশে দেয়া প্রথম ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রকে শীর্ষস্থানে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট পদের পাশাপাশি প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রেখেছে রিপাবলিকানরা। রিপাবলিকানদের এই ভূমিধস বিজয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ব বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বহু শেয়ারবাজারে দরপতন হয়েছে। দর বেড়েছে শুধু রুশ শেয়ারবাজারের। পড়ে গেছে মেক্সিকোসহ কয়েক দেশের মুদ্রার মান। পেশোর দাম কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। রয়টার্স তাদের সর্বশেষ জরিপে হিলারির জয়ের সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ বলে জানিয়েছিল। বিবিসিও বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের জরিপকে গড় করে হিলারির দিকেই জয়ের পাল্লা ভারি দেখিয়েছিল। বিতর্কিত মন্তব্য, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের বিরোধিতা, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সখ্যসহ নানা কারণে দোদুল্যমান রাজ্যগুলোর ভোট হিলারির গাধা প্রতীকেই পড়বে বলে ধারণা ছিল। কিন্তু সেসবকে উড়িয়ে দিয়ে ট্রাম্পের হাতি প্রতীকের পক্ষেই রায় দিল অধিকাংশ মার্কিন নাগরিক। নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প বলেছিলেন- আমেরিকার মাটিতে থাকা ১ কোটি ১০ লাখের বেশি নথিবিহীন অভিবাসীকে দেশত্যাগে বাধ্য করবেন তিনি। মুসলমানদের আমেরিকায় ঢোকা বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেন তিনি। এক পর্যায়ে এ বক্তব্য থেকে সরে যাওয়ার কথা বললেও অভিবাসন নিয়ে নীতি বদলাননি। ট্রাম্প আমেরিকা ও মেক্সিকো সীমান্তে দু’হাজার মাইলের বেশি দীর্ঘ দুর্ভেদ্য দেয়াল তুলে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সমালোচকরা একে অবাস্তব এবং ব্যয়বহুল বললেও রিপাবলিকান দল এ প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছে। ট্রাম্পের জয়ে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ বিশ্বনেতারা তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের চির প্রতিদ্বন্দ্বী রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন অভিনন্দন জানিয়েছেন ট্রাম্পকে। তিনি দুই দেশের মধ্যে ‘গঠনমূলক সংলাপ’ প্রত্যাশা করেছেন। দুই দেশের সম্পর্কের উন্নয়নে তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অভিনন্দন বার্তায় পুতিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সংকটপূর্ণ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে দুই দেশই কাজ করবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মোগেরিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের জয়ের পর ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে কাজ করে যাবে। টুইটারে তিনি লিখেছেন, রাজনীতিতে যেকোন ধরনের পরিবর্তনের চেয়ে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধন অটুট। ইউরোপের শক্তি আবিষ্কার করতে আমরা একসঙ্গে কাজ করে যাব।’ ইউরোপীয় পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্ট মার্টিন শুলজ বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের বিজয় আমাদের কাজকে ‘কঠিন’ করে তুলবে।’ তিনি ইউরোপ ওয়ান রেডিওকে বলেন, আগের প্রশাসকদের তুলনায় তাঁর সঙ্গে কাজ করা কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। যাই হোক তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। ইউরোপীয় কাউন্সিল প্রধান ডোনাল্ড টাস্ক ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক আশা করেন। জাপানী প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে অভিনন্দন জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নয়া প্রেসিডেন্টকে। তিনি আশা করেন, এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বহাল থাকবে। এক বিবৃতিতে আবে বলেন, ‘আমি আপনার বিজয়ে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের স্থায়িত্ব, যা বিশ্ব অর্থনীতি, শান্তি ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সমৃদ্ধি নিয়ে আসে।’ চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, চীন-মার্কিন সম্পর্ককে আমি বরাবরই মূল্য দেই। আমরা ট্রাম্পের সঙ্গে আগামীতে কাজ করতে চাই।’ এছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, তুর্কি প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইদিরিম, ফিলিস্তিনী প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস, ফিলিস্তিনের কট্টর ইসলামপন্থী সংগঠন হামাস, ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট রডরিগো দুর্তেতে ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ফরাসী প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ বলেছেন, ট্রাম্পের জয়ে বিশ্ব একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ল। খবরে বলা হয়েছে, এবার যুক্তরাষ্ট্রের মোট ভোটারের মধ্যে ৫৪ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মোট ৫০ অঙ্গরাজ্যের মধ্যে রিপাবলিকান ট্রাম্প আলাবামায় ৯, আরকানসাসে ৬, ফ্লোরিডায় ২৯, জর্জিয়ায় ১৬, আইডাহোতে ৪, ইন্ডিয়ানায় ১১, আইওয়াতে ৬, কানসাসে ৬, কেনটাকিতে ৮, লুইজিয়ানায় ৮, মিসিসিপিতে ৬, মিসৌরিতে ১০, মন্টানায় ৩, নেব্রাস্কায় ৫, নর্থ ক্যারোলিনায় ১৫, নর্থ ডাকোটায় ৩, ওহাইওতে ১৮, ওকলাহোমায় ৭, সাউথ ক্যারোলিনায় ৯, সাউথ ডাকোটায় ৩, টেনেসিতে ১১, টেক্সাসে ৩৮, ইউটাহতে ৬, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ায় ৫ ও ওয়াইওমিংয়ে ৩টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেয়েছেন। অপরদিকে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্যালিফোর্নিয়ায় ৫৫, কলোরাডোতে ৯, কানেটিকাটে ৭, ডেলাওয়ারে ৩, হাওয়াইতে ৪, ইলিনয়ে ২০, মেরিল্যান্ডে ১০, ম্যাসাচুসেটসে ১১, নিউজার্সিতে ১৪, নিউ মেক্সিকো ৫, নিউইয়র্কে ২৯, অরেগনে ৭, রোড আইল্যান্ডে ৪, ভারমন্টে ৩, ভার্জিনিয়ায় ১৩, ওয়াশিংটনে ১২ ও ওয়াশিংটন ডিসিতে ৩টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পান। ট্রাম্পের জয়ের খবরে বহু মার্কিনী কানাডা ও নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমানোর জন্য আবেদন করেছে। উভয় দেশের অভিবাসন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, মাত্র এক রাতের মধ্যে হাজার হাজার মার্কিনী কানাডা ও নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমানোর জন্য আবেদন করেন। মার্কিন ইতিহাসে মাত্র একরাতের মধ্যে এত সংখ্যক মার্কিনী অন্য দেশে চলে যাওয়ার আবেদন করেননি। ভোটের প্রাথমিক ফল প্রকাশের শুরু থেকেই ট্রাম্প ও হিলারির মধ্যে লড়াই চলছিল। তবে পরে অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যায়, হোয়াইট হাউসের উত্তরসূরি হচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাই পূর্ণাঙ্গ ফল প্রকাশের আগেই হিলারির সমর্থকদের মুষড়ে পড়তে দেখা যায়। কাঁদতে দেখা যায় অনেক সমর্থককে। সিএনএন অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, নিউইয়র্কে হিলারির প্রচার সদর দফতরের পরিবেশ বদলে গেছে। তাঁর সমর্থকরা কাঁদছেন। বিষণœ মনে অনেকে বাড়ি ফিরছেন। নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু দিকে বেশির ভাগ জরিপেই এগিয়ে ছিলেন হিলারি। ?তবে নির্বাচনের দিনকয়েক আগে হিলারি-ট্রাম্প হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মেলে। একপর্যায়ে দুয়েকটি জরিপে এগিয়েও যান ট্রাম্প। তবে বেশির ভাগ বিশ্লেষকের রায় ছিল হিলারির পক্ষেই। কিন্তু সব হিসাব উল্টে দিয়ে অবিশ্বাস্য চমক দেখালেন ট্রাম্প। খবরে বলা হয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার দিকে জোর দিতে চান ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারে তিনি বলেছেন- ইউরোপ ও এশিয়ার মিত্র দরকার আমেরিকার। আইএস-কে পরাজিত করতে সিরিয়ার মাটিতে কয়েক হাজার স্থলসেনা পাঠানোর প্রস্তাবও রয়েছে তার। তিনি বরাবর বলছেন- ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ করতে সবসময় আমেরিকার স্বার্থকে সবার উপরে রাখতে হবে। এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট বহুল আলোচিত ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ চুক্তির বিরোধিতা করছেন। ক্ষমতায় গেলে সই হয়ে যাওয়া নর্থ আমেরিকা ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (নাফটা) চুক্তি নিয়ে নতুন করে দর কষাকষি করবেন বলে বলে আসছেন তিনি। ২০১৫ সালে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখানোর পরপরই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন ধনকুবের ট্রাম্প। ওই সময়েই মেক্সিকানদের ‘ধর্ষক ও সন্ত্রাসী’ বলে আলোচনায় চলে আসেন। বিচারক, সাবেক মিস ইউনিভার্স, ফক্স নিউজের একজন উপস্থাপক, মুসলিম পরিবারের এক যুদ্ধাহতকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেও খবরের শিরোনাম হন তিনি। হিলারি শিবিরের বারবার প্রচার সত্ত্বেও এই রিপাবলিকান প্রার্থী ১৮ বছর ধরে দেয়া তার ট্যাক্স রিটার্নের কপি দেখাননি। এড়িয়ে গেছেন তার দাতব্য সংস্থা নিয়ে করা বিভিন্ন সমালোচনাও। আর এসব কারণে হারিয়েছেন প্রভাবশালী অনেক রিপাবলিকান ও প্রতিষ্ঠানের সমর্থন। ২০১৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে রিপাবলিকান পার্টিতে যোগ দেন ট্রাম্প দলের সবচেয়ে বড় দাতা ও তহবিল সংগ্রাহকে পরিণত হন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ২ কোটি ৫০ লাখের বেশি অনুসারী আছে। খবরে বলা হয়েছে, সংখ্যালঘু ভোটারদের সমর্থন হারালেও ট্রাম্পের আশ্চর্যজনক বড় শক্তি ছিল শ্রমিক অধ্যুষিত শহর এবং ছোট কাউন্টিগুলো। হিলারি ফ্লোরিডার হিস্পানিক ভোটারদের বড় সমর্থন পেয়েছেন। অপরদিকে ফ্লোরিডার বড় মহানগরী এলাকার ভোটে জয়ী হয়েছেন ট্রাম্প। তিনি পেনসিলভানিয়ার খনি শ্রমিক অধ্যুষিত কাউন্টি ও মধ্য-পশ্চিম শিল্প এলাকায় ব্যাপক সমর্থন পেয়েছেন। ওহাইওর শিল্পাঞ্চল ট্রাম্পকে সমর্থন জানিয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব আটলান্টার রাজনৈতিক বিজ্ঞানী এলান আবরামোউইটজ বলেন, আমরা দেশজুড়ে যা দেখেছি, তা হলো ছোট গ্রামীণ এলাকা ও ছোট শহরগুলোতে সাম্প্রতিক রিপাবলিকান প্রার্থীদের ছাপিয়ে গেছেন ট্রাম্প। এক সময় ডেমোক্র্যাটিক ঘাঁটি বলে পরিচিত কিছু এলাকাতেও জয়ী হয়েছেন তিনি। এসব গ্রামীণ এলাকায় ব্যাপক ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন ট্রাম্প। ভোটে ট্রাম্প শ্বেতাঙ্গ ভোটার, পুরুষ ও কলেজ ডিগ্রী নেই এমন ভোটারদের সঙ্গে জোট করেছেন। অপরদিকে হিলারির ভোটারদের মধ্যে রয়েছে নারী, সংখ্যালঘু ও কলেজ গ্র্যাজুয়েটরা। আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মার্কিনীদের প্রায় ৮৮ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ হিলারিকে সমর্থন করেন। আতঙ্কে সংখ্যালঘুরা ॥ এদিকে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সংখ্যালঘুরা আতঙ্ক প্রকাশ করেছে। অনেক বিশ্লেষক আগে থেকেই বলে এসেছেন যে ট্রাম্পের জয়ে এসব সংখ্যা লঘু বেকায়দায় পড়তে পারে। ভয়ে মেক্সিকানরা ॥ সংখ্যালঘুদের পাশাপাশি মেক্সিকানদের মধ্যেও আতঙ্ক নেমে এসেছে। কারণ ট্রাম্প তার প্রচারের সময় বরাবরই বলে এসছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তুলে দেবেন। পাশাপাশি মেক্সিকান মুদ্রা পেশোর দামও পড়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ ॥ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার ভোরে বার্কলে ও ওকল্যান্ড শহরে কয়েক শ’ মানুষ রাস্তায় নেমে ‘ট্রাম্প আমার প্রেসিডেন্ট নয়’ বলে সেøাগান দেয়। পিটসবার্গ, সিয়াটল, পোর্টল্যান্ড ও ওরেতেও বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। বিক্ষোভকারীরা একটি সড়কে ঢোকার সময় গাড়ির ধাক্কায় একজনের আহত হওয়ার খবর জানিয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া হাইওয়ে পেট্রোল। নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ট্রাম্পের বিজয়ের পর প্রথম যেসব জায়গায় ক্ষোভ দেখানো হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম সানফ্রান্সিসকোর বে এলাকা। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ওই এলাকা। পেনসিলভেনিয়া থেকে ক্যালিফোর্নিয়া, ওরেগন থেকে ওয়াশিংটন স্টেট সব জায়গায় শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর। ওরেগনে বিক্ষোভকারীরা সড়ক অবরোধের পাশাপাশি রেল চলাচলেও বাধা সৃষ্টি করে। সেখানে প্রায় তিন শ’র মতো মানুষ ট্রাম্পকে প্রত্যাখ্যান করে ‘এটা আমার প্রেসিডেন্ট নয়’ সেøাগান দেয়। আমেরিকার পতাকায় আগুন ধরাতেও দেখা যায় সেখানে। সিয়াটলে প্রায় এক শ’ বিক্ষোভকারী ক্যাপিটাল হিলের কাছে জড়ো হয়ে সড়ক অবরোধ করে। পেনসিলভেনিয়ায় ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গেও কয়েক শ’ শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে।
×