ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্যাপক কর্মচাঞ্চল্যের আশা এলাকাবাসীর

ঠাকুরগাঁও চিনিকল উন্নয়নে ৪১১ কোটি টাকার প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ১০ নভেম্বর ২০১৬

ঠাকুরগাঁও চিনিকল উন্নয়নে ৪১১ কোটি টাকার প্রকল্প

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও ॥ দীর্ঘদিনের পুরনো ও নড়বড়ে ঠাকুরগাঁও চিনিকলের উন্নয়নের জন্য অবশেষে ৪শ’ ১১ কোটি ১০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প পাস হয়েছে। সম্প্রতি একনেকের সভায় দেশের দুটি চিনিকলের উন্নয়নের জন্য দুটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়। অপর চিনিকলটি হলো নাটোরের নর্থ বেঙ্গল চিনিকল। ঠাকুরগাঁও চিনিকলে আখ মাড়াইয়ের মাধ্যমে চিনি উৎপাদন ছাড়াও এলাকায় সুগারবিট উৎপাদন করে চিনি উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ‘রিপ্লেসমেন্ট অব ওল্ড মেশিনারি এ্যান্ড এ্যাডিশন অব মেশিনারি ফর সুগার বিট প্রোডাক্টশন’ নামে এ প্রকল্পের অধীনে রয়েছে সুগারবিট উৎপাদন, পুরাতন যন্ত্রাংশ পুনঃস্থাপন, ডিস্টিলারিজ প্রজেক্ট, কো-জেনারেশন পাওয়ার প্লান্ট, বায়োগ্যাস, বায়ো কম্পোস্ট, রিফাইনারি সুগার প্লান্ট। চলতি অর্থবছরে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এনায়েত হোসেন। তিনি জানান, কো-জেনারেশনের মাধ্যমে চিনিকলের বিদ্যুতের চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত অতিরিক্ত বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে। সর্বাধুনিক যন্ত্রাংশ স্থাপন করা হবে, যাতে সুগারবিট থেকে চিনি উৎপন্ন করা যায়। তাছাড়া চিনিকলটিতে বসানো হবে উন্নত বয়লার। ইতোমধ্যে মোঃ রহমতুল্লাহ নামে একজনকে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। তিনি ঢাকায় চিনিকল কর্পোরেশনে ওই পদে যোগদান করেছেন। শীঘ্রই তিনি ঠাকুরগাঁওয়ে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে যোগ দেবেন বলে জানা গেছে। তাছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে ভারতের একজন কনসালটেন্ট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রায় ৬০ বছর আগে ১৯৫৬ সালে ঠাকুরগাঁও চিনিকলটি স্থাপিত হয়। ১৫ হাজার টন চিনি উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এ চিনিকলে কয়েক বছর রেকর্ড পরিমাণ চিনি উৎপন্ন হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে চিনিকলের মেশিনারি যতই পুরনো হতে থাকে ততই চিনি আহরণের ক্ষমতা কমতে থাকে। তাছাড়া অন্যান্য ফসলের সঙ্গে আখের দামের সামঞ্জস্য না থাকায় ও নানা কারণে আখের উৎপাদনও কমতে থাকে। কোন কোন সময়ে নামমাত্র মেরামত ও ব্যাপক দুর্নীতির কারণে চিনিকলের উৎপাদনে ধস নামে ও প্রতিষ্ঠানটি একটি লোকসানী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। গত বছর (২০১৫-১৬) এ চিনিকলে মাত্র ৫৮,৪৪৫ টন আখ মাড়াই করে মাত্র ৩০০৩ টন চিনি উৎপন্ন করে। চিনি আহরণের হার ছিল সবচেয়ে কম, মাত্র ৫ দশমিক ১৪ শতাংশ। আগামী মৌসুমে ১ লাখ ১০ হাজার টন আখ মাড়াই করে ৭,৯৭৫ টন চিনি উৎপন্নের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। চিনি আহরণ হার ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। এ লক্ষ্যমাত্রা একটি অলীক কল্পনা ও শুধু কাগজে-কলমে দেখানো হয়েছে। বাস্তবে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কিভাবে সম্ভব হবে তার কোন ব্যাখ্যা নেই। অতীতে বার বার সরকারের দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধিরা এ চিনিকলটিকে আধুনিকায়ন করার প্রতিশ্রুতি দিলেও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি। অবশেষে সম্প্রতি একনেকের সভায় বর্ণিত প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে এ জেলার একমাত্র ভারি শিল্পটিকে ঘিরে ব্যাপক কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে বলে আশা করছেন এলাকাবাসী।
×