ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মায় ফের ভাঙ্গন

একদিনে চার পরিবার গৃহহারা

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ১০ নভেম্বর ২০১৬

একদিনে চার পরিবার গৃহহারা

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ লৌহজং উপজেলার খড়িয়া গ্রামের আবারও পদ্মা নদী আঘাত হেনেছে। আকস্মিক পদ্মার ভাঙ্গনে বুধবার ৪ পরিবার গৃহহারা হয়েছে। হুমকির মধ্যে রয়েছে ৬ পরিবার। যে কোন সময় এই ৬ পরিবারও গৃহ ছাড়া হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছে পরিবারের সদস্যরা। গৃহহারা ওই ৪ পরিবার তাদের ঘরসহ মামামাল সরাতে পারলেও বাপ দাদার ভিটেমাটি কেড়ে নিয়েছে পদ্মা। এই পরিবার চারটি এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা তারা জানে না। বুধবার ভাঙনকবলিত খড়িয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ি সংলগ্ন পদ্মার পারে বড় বড় মাটির চাক ভেঙ্গে পড়ছে নদীতে। পদ্মা গ্রাস করছে গাছপালা আর বাড়ি-ঘর। ভাঙ্গন দেখে তড়িঘড়ি করে কাঠমিস্ত্রি ও লোকজন নিয়ে ঘর-দুয়ায় ভেঙ্গে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে ওই গ্রামের অটোরিক্সাচালক আওলাদ হোসেন, দানেশ পাহাড়, হাবিব পাহাড় ও কাঠমিস্ত্রি শহিদুল ইসলাম। পরিবারের সদস্যরা ব্যস্ত ঘরের অন্যান্য মালামাল সরাতে। এরা ঘর ভেঙ্গে কেউ কেউ আপাতত পাশের খড়িয়া জামে মসজিদের অঙ্গিনায়, কেউবা রাস্তার উপর রেখেছে। পরিবার পরিজন নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে জানে না তারা। অটোরিক্সাচালক অওলাদ হোসেন জানালেন, তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা চার। আপাতত ঘরটি ভেঙ্গে কনকসার গ্রামে সরিয়ে নিচ্ছেন। সেখানেই ভাড়া থাকবেন। দানেশ পাহাড়ের পরিবারের সদস্য সংখ্য ৭। তিনি তার ঘরখানি নিয়ে খড়িয়া জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে চালা পেতেছেন। আপাতত এখানেই থাকবেন। হাবিব পাহাড় ও শহিদুল ইসলামও তাদের ঘরের চালা পেতেছেন খড়িয়া জামে মসজিদের সামনের মাঠে। ১৫-২০ দিন আগে পদ্মায় গৃহহীন হয়ে একই এলাকার মোঃ মফিজুল ইসলাম, মোঃ বিল্লাল শেখ, মালেক দেওয়ান, আবুল হোসেন, মজিবর রহমান ও সাইফুলসহ ৬ পরিবার ওই মসজিদ মাঠের খোলা আকাশের নিচে ঘরে চালা পেতে তাতে বসবাস করছে। পরিবারগুলোর যাওয়ার মতো তেমন কোন জায়গা না থাকায় তারা এই মসজিদ মাঠে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু মসজিদ কর্তৃপক্ষও তাদের সরে যেতে বলেছে মাঠ ছেড়ে। এদিকে ভাঙনের আতঙ্কে রয়েছে মোঃ সিরাজ রফিকুল ইসলাম আজিজ শেখ হাশেম দপ্তরি নাছির মুন্সি ও মনির হোসেনের পরিবার। যে কোন সময় পদ্মা কেড়ে নিতে পারে তাদের শেষ সম্বল বাড়ির ভিটে। সকাল-বিকেল শুধু পদ্মা পারে গিয়ে দেখে আসেন নদী কতটুকু বাড়ির কাছে আসল। দিন কাটলেও রাতে ঘুম হারাম হয়ে গেছে এসব পরিবারের লোকজনে মাঝে। বিছানায় গেলেও ঘুম আসে না। কান পেতে থাকায় পদ্মায় মাটি ভেঙ্গে পড়ায় আওয়াজ পাওয়া যায় কিনা। এভাবেই এখন পদ্মা পারের খড়িয়া গ্রামের লোকজনের দিন পার হচ্ছে। লৌহজং উপজেলা ভারপ্রাপ্ত ইউএনও ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসএম শাহীন জানান, বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যান আমাদের নজরে দেননি। আমরা খোঁজখবর নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সব ধরনের সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা করব। ট্রের্নিংয়ে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান জানান, এ বিষয়ে খবর নিয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে জানাচ্ছি। স্থানীয় এমপি ও সাবেক হুইপ অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি জানিয়েছেন, পদ্মার ভাঙ্গন এ এলাকার একটি বড় সমস্য। পদ্মা সেতুর নদী শাসন হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি সেই সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে এখানে নদী শাসন করে এ এলাকাকে রক্ষা করার জন্য। এ নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে। আশা করছি এ বাঁধটি হয়ে গেলে এ এলাকার লোকজনকে আর ভাঙ্গনের কবলে পড়তে হবে না। তবে অপাতত যারা গৃহহারা হয়েছেন, তাদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা দেয়া হবে।
×