ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

না খেয়ে মরছে পরিবার

পুলিশের কারসাজিতে আড়াই বছর জেলে রিক্সাচালক

প্রকাশিত: ০৪:০১, ১০ নভেম্বর ২০১৬

পুলিশের কারসাজিতে আড়াই বছর জেলে রিক্সাচালক

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে পুলিশের দোষে এক রিক্সাচালক জেল খাটছে আড়াই বছর ধরে। খুলশী ও গোয়েন্দা পুলিশের কারসাজির কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চট্টগ্রামে ২০১৪ সালের ১৬ মার্চ জোড়া খুনের ঘটনায় দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছর পর এজাহারভুক্ত আসামি গ্রেফতারে তথ্য বেরিয়েছে। তবে তাও আবার গোয়েন্দা পুলিশের ওই এসআই পিবিআইতে যোগদানের পর এই মামলার বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তাকে সহযোগিতা করতে গিয়ে আসল-নকলের প্রমাণ মিলেছে। অথচ, এই জোড়া খুনের মামলায় আড়াই বছর ধরে জেল খাটছে রিক্সাচালক নুরুল আলম প্রকাশ ভুট্টো। পুলিশের কারসাজিতে এই রিক্সাচালকের জীবনের আড়াই বছর কারাগারে, পরিবারের আর্থিক, মানসিক ও সামাজিক ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার মতো ক্ষমতা কেউ রাখে কিনা এমন মন্তব্য ওই রিক্সাচালকের পরিবারের। পুলিশের দোষেই জোড়া হত্যাকা-ের ঘটনার ২০১৪ সালের ৪ এপ্রিল এই রিক্সাচালককে শোন এরেস্ট দেখিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হত্যা মামলার আরেক আসামি গ্রেফতারের বাহবা নিয়েছে। আর পলাতক ছিল অজ্ঞাত পরিচয়ের রাসেল প্রকাশ ভুট্টো। তার পরিচয় অজ্ঞাত থাকায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রিক্সাচালক নুরুল আলমের ডাক নাম ভুট্টো হওয়ায় চুরির মামলার আসামিকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে বাহবা নিয়েছে। গত সোমবার দুই খুনের মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি রাসেল প্রকাশ ভুট্টোকে গ্রেফতার করে পিবিআই পুলিশ। কারণ এর আগে গত ১৪ মে এই মামলার সুষ্ঠু তদন্তে পিবিআই আদালত থেকে অধিকতর তদন্তের জন্য নির্দেশ পায়। ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর এই মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে খুলশী থানার এসআই রাসেল মিয়া। তবে এই অভিযোগপত্রে নারাজি দিয়েছিল বাদী। অভিযোগ রয়েছে, পিবিআইর পক্ষ থেকে মামলার বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই এনামুল হক। কিন্তু যিনি পিবিআইর অপর কর্মকর্তা এসআই সন্তোষ চাকমার কাছ থেকে এই জোড়া খুনের অনেক তথ্য পেয়েছেন। ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার কামরুজ্জামান ও এস আই সন্তোষ চাকমার নাটকীয়তার অনেক তথ্য রয়েছে গ্রেফতারকৃত আসামি জাহাঙ্গীরকে নিয়ে। তবে জোড়া খুনের নির্দেশদাতা প্রভাবশালী ও বিত্তশালী বশরকে বাঁচাতে গিয়ে ওই দুই কর্মকর্তা মিডিয়া ও নিহতদের পরিবারের সঙ্গে আসামিকে গ্রেফতার ও আটক নিয়ে নানা তালবাহানা করেছিল। কারণ এই ঘটনায় রিক্সাচালক নুরুল আলম প্রকাশ ভুট্টোকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছিল খুলশী থানা ও গোয়েন্দা বিভাগের যৌথ কারসাজিতে। তবে ২০১৪ সালের ২০ মার্চ মিডিয়াকে প্রদত্ত প্রেস রিলিজের কারণে গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তাদের এই হত্যাকা-ে কারসাজির বিষয়টি প্রকাশ পায়। কারণ প্রেসরিলিজে জোড়া খুনের ঘটনায় ডিবি অফিসে ধরে নিয়ে আসা ঘটনার মূল হোতা জাহাঙ্গীরসহ এজাহারভুক্ত আসামিদের নিয়ে নানা ছলচাতুরীর তথ্য ছিল ঐ প্রেস রিলিজে। তখন ডিবি অফিসের কয়েক কর্তাব্যক্তি ক্ষোভের সঙ্গে জানিয়েছিলেন, ওই দুই কর্মকর্তা ঘটনার নির্দেশদাতাকে বাঁচাতে এই নাটক করেছে। সিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই মামলাটি খুলশী থানার আওতায় থাকলেও ডিবি পুলিশ প্রত্যেকটি আসামি ধরতেই সহযোগিতা করেছে। এর কারণ ছিল সাইনবোর্ডধারী নেতা বশিরকে বাঁচাতেই নানা কারসাজি করেছে। এসআই সন্তোষ চাকমা ডিবিতে থাকাকালে নাসিরাবাদ বয়েজ স্কুলের এক ছাত্রকে সন্তোষের সঙ্গে পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে ধর্ষণ মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। ডিবিতে দীর্ঘ প্রায় ৪ বছরেরও বেশি সময় কাজ করার পর বর্তমানে এই কর্মকর্তা পিবিআইতেও চক্রান্ত শুরু করেছে। খুনের আসামিকে চার্জশীট থেকে বাদ দিয়ে ফায়দা লুটেছেন এমন নজিরও রয়েছে। তবে পুলিশের এমন দোষের খেসারত দিচ্ছে রিক্সাচালক থেকে সাধারণ মানুষ। অপরদিকে ডিবিতে বর্তমানে কর্মরত সিনিয়র সহকারী কমিশনার কামরুজ্জামান মাদক কেলেঙ্কারিসহ নানা ঘটনায় একবার বদলি হলেও আবারও সিএমপির ডিবিতে যোগদান করেছেন। আরও অভিযোগ উঠেছে, দুই পুলিশ কর্মকর্তার নাটকীয়তার কারণ হলো জাহাঙ্গীরকে ২০১৪ সালের ১৮ মার্চ আটক করা হলেও ডিবির দুই কর্মকর্তা ও খুলশী থানা পুলিশের সেকেন্ড অফিসার এসআই মামুন যিনি বর্তমানে চাকরি ছেড়ে আমেরিকায় রয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। তবে হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামি জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতারের বিষয়টি চাপা রেখেছিল ১৯ মার্চ পর্যন্ত। এদিকে, ১৮ মার্চ ভোরে খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি থানাধীন মাইজছড়ি বাজার এলাকা থেকে মামলার অপর আসামি শাহআলম, সাদ্দাম হোসেন প্রকাশ বাছা মিয়া প্রকাশ ব্লেড বাছা ও শাহেদ প্রকাশ শাওনকে গ্রেফতার করা হলেও ডিবি ও থানা পুলিশের ওই ৪ কর্মকর্তা ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তাদের গ্রেফতার দেখায়নি। ১৯ মার্চ দুপুরে জাহাঙ্গীরকে আদালতে সোপর্দ করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলেও ডিবি পুলিশ ২০ মার্চ আসামি জাহাঙ্গীর প্রকাশ ছোটনকে ৫ দিনের ও মোঃ সাদ্দাম হোসেন প্রকাশ বাছাকে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে বলে প্রেস রিলিজ দিয়েছে মিডিয়াকে। তবে শাহ আলম ও শাহেদ প্রকাশ শাওনকে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদানের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছিল ২০ মার্চ।
×