ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধান শহরাঞ্চলগুলোতে হিলারির অবস্থান দুর্বল

ট্রাম্পের জয়ের নেপথ্যে ॥ পরিবর্তনের তীব্র আকাক্সক্ষা

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ১০ নভেম্বর ২০১৬

ট্রাম্পের জয়ের নেপথ্যে ॥ পরিবর্তনের তীব্র আকাক্সক্ষা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণের পর এক জরিপে উঠে এসেছে যে, বাণিজ্য, স্বাস্থ্যসেবা ও সরকারের ভূমিকাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দেশটিতে বিভক্তি রয়েছে। বুথ ফেরত জরিপ বা এক্সিট পোলে ভোটারদের মধ্যে পরিবর্তনের জন্য তীব্র আকাক্সক্ষা লক্ষ্য করা গেছে। এদিকে নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের বড় কারণ হলো তিনি দেশের গ্রামীণ ও শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকাগুলো চষে বেড়িয়েছেন। অপরদিকে এ অঞ্চলগুলোতে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থীরা বড় ব্যবধানে জয় পেয়ে থাকেন। খবর ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির আট বছরের শাসনের পর মার্কিন ভোটারদের মধ্যে প্রতি ১০ জনের চারজন বলেছেন, তারা চান তাদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনবেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক। এক্সিট পোল জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। যারা যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তুষ্ট ও ক্ষুব্ধ, তাদের বেশিরভাগও ট্রাম্পের পক্ষেই। এমনকি তারাও ট্রাম্পকে সমর্থন করেছেন, যাদের ধারণা, পরবর্তী আমেরিকান প্রজন্মের জীবনযাত্রা আরও খারাপ হতে পারে। তবে এক্সিট পোলের ফলাফল রিপাবলিকান প্রার্থীকে একটি সতর্কবার্তা দিয়েছে। তা হলো, তার নারীদের প্রতি আচরণের অভিযোগ নিয়ে তারা বিরক্ত। অপরদিকে প্রতি ১০ জনের ছয় জন জানিয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় হিলারির ব্যক্তিগত ই-মেইল সার্ভার ব্যবহার নিয়ে বিতর্কে তারা বিরক্ত। ন্যাশনাল ইলেকশন পোলের পক্ষে একটি টিভি নেটওয়ার্ক ও বার্তা সংস্থা এপির সহায়তায় জরিপ পরিচালনা করেছে এডিসন রিসার্চ। মোট ২৩ হাজার ৫৮৩ জনের ওপর এ জরিপ করা হয়। এক্সিট পোল ও আগাম ভোট গণনার পর দেখা গেছে, আফ্রিকান-আমেরিকান ভোটারদের মধ্যে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার যে প্রভাব ছিল, তা টানতে ব্যর্থ হয়েছেন হিলারি। তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কয়েকটি বড় ও শিল্প প্রধান অঙ্গরাজ্যে। ডেমোক্র্যাটদের শক্তিশালী ঘাঁটি ফিলাডেলফিয়ায় ২০১২ সালে ওবামা যে ভোট পেয়েছিলেন তার চেয়ে ৪৬ হাজারেরও কম ভোট পেয়েছেন হিলারি। এ কারণেই পেনসিলভানিয়ায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। হিলারি ধারণা করেছিলেন, ডেট্রয়েটে তিনি ওবামার জনপ্রিয়তার ওপর ভর করেই জয়ী হবেন। কিন্তু সেখানে ওবামার তুলনায় মাত্র অর্ধেক ভোট পেয়েছেন তিনি। এছাড়া ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রচার করা হয়েছিল যে, সংখ্যালঘু গ্রুপগুলোর মধ্যে তার সমর্থন ভেঙ্গে পড়েছে। কিন্তু তিনি এ ধারণাকে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্প মেক্সিকোর অভিবাসীদের অবৈধ ও মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ২০১২ সালের রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রমনির চেয়েও ট্রাম্প সংখ্যালঘুদের ভোট বেশি পেয়েছেন। ট্রাম্প ২৯ শতাংশ হিস্পানিক ভোট পেয়েছেন, যা মিট রমনির চেয়ে দুই শতাংশ বেশি এবং ২৯ শতাংশ এশীয় ভোট পেয়েছেন, যা তার পূর্বসুরীর চেয়ে তিন শতাংশ বেশি। তবে ট্রাম্প ২০১২ সালের চেয়ে শ্বেতাঙ্গ ভোট কম পেয়েছেন। ২০১২ সালে রমনি পেয়েছিলেন ৭২ শতাংশ ভোট আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৭০ শতাংশ ভোট। সংখ্যালঘু ভোটারদের সমর্থন হারালেও ট্রাম্পের আশ্চর্যজনক বড় শক্তি ছিল শ্রমিক অধ্যুষিত শহর এবং ছোট কাউন্টিগুলো। হিলারি ফ্লোরিডার হিস্পানিক ভোটারদের বড় সমর্থন পেয়েছেন। অপরদিকে ফ্লোরিডার বড় মহানগরীয় এলাকার ভোটে জয়ী হয়েছেন ট্রাম্প। তিনি পেনসিলভানিয়ার খনি শ্রমিক অধ্যুষিত কাউন্টি ও মধ্য-পশ্চিম শিল্প এলাকায় ব্যাপক সমর্থন পেয়েছেন। ওহাইওর শিল্পাঞ্চল ট্রাম্পকে সমর্থন জানিয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব আটলান্টার রাজনৈতিক বিজ্ঞানী এলান আবরামোউইটজ বলেছেন, আমরা দেশজুড়ে যা দেখেছি, তা হলো ছোট গ্রামীণ এলাকা ও ছোট শহরগুলোতে সাম্প্রতিক রিপাবলিকান প্রার্থীদের ছাপিয়ে গেছে ট্রাম্প। এক সময় ডেমোক্র্যাটিক ঘাঁটি বলে পরিচিত কিছু এলাকাতেও জয়ী হয়েছেন তিনি। এসব গ্রামীণ এলাকায় ব্যাপক ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন ট্রাম্প। ভোটে ট্রাম্প শ্বেতাঙ্গ ভোটার, পুরুষ ও কলেজ ডিগ্রী নেই এমন ভোটারদের সঙ্গে জোট করেছেন। অপরদিকে হিলারির ভোটারদের মধ্যে রয়েছে নারী, সংখ্যালঘু ও কলেজ গ্র্যাজুয়েটরা। আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মার্কিনীদের প্রায় ৮৮ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ হিলারিকে সমর্থন করেন। সেখানে ট্রাম্পের সমর্থন ছিল মাত্র ৮ শতাংশ। আর হিস্পানিকদের ৬৫ শতাংশ ভোট পেয়েছেন হিলারি। একই সঙ্গে হিলারি তরুণ ভোটারদের কাছে পৌঁছতেও ব্যর্থ হয়েছেন। ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী ভোটারদের মধ্যে ৫৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন হিলারি। ট্রাম্প পেয়েছেন ৩৭ শতাংশ। অথচ ওবামা পেয়েছিলেন ৬০ শতাংশ ভোট। বুথ ফেরত জরিপে ৪৪ শতাংশ ভোটার বলেছেন, তারা হিলারিকে পছন্দ করেন এবং ৩৮ শতাংশ বলেছেন তারা ট্রাম্পকে পছন্দ করেন। তবে ২০১২ সালের নির্বাচনের দিন ওবামা ও রমনির প্রতি এ হার আরও বেশি ছিল।
×