ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সীমানা ছাড়ানো সঙ্গীত

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ১০ নভেম্বর ২০১৬

সীমানা ছাড়ানো সঙ্গীত

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেনা স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত উৎসব-২০১৬। আয়োজক সংস্থা সান ইভেন্টস সূত্রে জানা গেছে, উৎসবে এবার বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাজ্য ও স্পেন- এই পাঁচটি দেশের শতাধিক নামী-দামী শিল্পী ও গানের দল অংশ নেবেন। এ থেকে সহজেই যা অনুধাবন করা যায় তা হলো, একদা যা ছিল নিছক কোন একটি দেশের মাটি ও মানুষের গান, কালের বিবর্তনে তা ক্রমশই আন্তর্জাতিক পরিম-লে সুপরিচিত ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটি অবশ্যই একটি শুভ লক্ষণ। লোকসঙ্গীত উৎসব শেষ হতে না হতেই বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের আসর। শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই এর বাইরেও রাজধানীর প্রায় সর্বত্র অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আরও নানা বর্ণাঢ্য গান-বাজনা-নৃত্যানুষ্ঠান, চিত্র প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র উৎসব, পিঠা উৎসব, বইমেলা ইত্যাদি। নাগরিক জীবনে দৈনন্দিন ব্যস্ততা ও কর্মক্লান্তির মাঝে এসব বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান যেমন মনকে প্রফুল্ল ও আনন্দিত করে থাকে, তেমনি মন ও মননকেও করে উন্নত, সমৃদ্ধ ও পরিপুষ্ট। আমরা এ ধরনের বিস্তৃত আয়োজনকে সাধুবাদ জানাই। তবে এই ধরনের উৎসব ছড়িয়ে দিতে হবে গ্রামগঞ্জসহ দেশের সর্বত্র। সঙ্গীতের আদি যে লোকসঙ্গীত, এ বিষয়ে বোধকরি দ্বিমতের অবকাশ নেই। মানুষ তার সভ্যতার ক্রমবিকাশে ভাষা ও সংস্কৃতির প্রয়োজনেই কণ্ঠে সুর তুলে নিয়েছে তার চারপাশের প্রকৃতি ও পরিবেশ থেকে, রকমারি পাখপাখালি ও প্রাণীকুল, নদ-নদী- ঝর্ণার কলধ্বনি থেকে, সর্বোপরি শ্যামল-সবুজ শস্যপ্রান্তর ও আদিগন্ত নির্জনতা থেকে। আর সে কারণেই বুঝি যাবতীয় লোকগান ও পল্লীগীতির সুরমূর্ছনা অত্যন্ত সহজ-সরল-সহজিয়া। এর সঙ্গে সঙ্গতকারী বাদ্যযন্ত্রও অতি সামান্য ও সাধারণ- একতারা, দোতরা, খঞ্জনী, মৃদঙ্গ, গোপীযন্ত্র ইত্যাদি। এর কোথাও তেমন আড়ম্বর নেই, বাহুল্য নেই। অতি সহজ কথা ও সুরে গীত এই গান সে কারণেই প্রায় সর্বস্তরের মানুষের মনপ্রাণ আকুল করে প্রবেশ করে মরমে। সে কারণে পল্লীগীতি ও লোকসঙ্গীত সমধিক জনপ্রিয়ও বটে। আবহমানকাল ধরে প্রচলিত জারি-সারি, ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালি, পালাগান তো আছেই। এর পাশাপাশি লালনগীতি, হাছন রাজা, রাধারমণ কিংবা শাহ আবদুল করিমই বা কম কী! অনেকেই এর সঙ্গে ব্যবহার করছেন আধুনিক বাদ্যযন্ত্র- গিটার, ড্রাম, কঙ্গো, হারমোনিকা কিংবা অন্যবিধ বাদ্যযন্ত্র। অনেকে এমনকি মিশিয়ে দিচ্ছেন সুফীগান, জ্যাজ মিউজিক, ব্যান্ডের সঙ্গীত ও সঙ্গত। তাতে করে যে আবহমানকাল ধরে প্রচলিত লোকসঙ্গীত ও পল্লীগীতির চিরায়ত মর্যাদা ক্ষুণœ হয়েছে, এমন নয়। বরং এসব গান হয়েছে আরও সমৃদ্ধ ও শ্রুতিনন্দন। সঙ্গীতের কোন সীমানা নেই, দেশ-স্থান-কাল-পাত্র নেই। সঙ্গীতের প্রভাব যে কতটা সুদূরপ্রসারী ও সর্বগ্রাসী, এবার তার প্রমাণ মিলেছে মার্কিন সঙ্গীতজ্ঞ ও গীতিকার বব ডিলানকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে। এ প্রসঙ্গে নোবেল কমিটি বলেছে, তিনি একজন মহাগীতিকার ও সঙ্গীতশিল্পী, যিনি আমেরিকার লোকসঙ্গীত ও পল্লীগীতিকে সমৃদ্ধ ও সম্প্রসারিত করেছেন। আর এখানেই নিহিত রয়েছে লোকসঙ্গীতের চিরায়ত মাহাত্ম্য, আবেদন ও সার্থকতা। আমরা ঢাকায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত উৎসবের সাফল্য কামনা করি।
×