সরকার ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ। একাত্তরের ঘাতক, পঁচাত্তরের ঘাতকসহ দেশের বেশ কয়েকটি অপরাধ মামলার বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে শেখ হাসিনা সরকার ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করছে। অপরাধী যেই হোক, যে দলেরই হোক, যত প্রভাবশালীই হোক আইনের হাতে তাকে সোপর্দ করেছে, অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করেছে বর্তমান সরকার। সম্প্রতি নাসিরনগরে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় এই সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাটি স্থান পায়। তিনি বলেছেন, দেশে কোন রকমের সন্ত্রাসবাদ প্রশ্রয় দেয়া হবে না। উল্লেখ্য, গত ৩০ অক্টোবর ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার কথিত একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে প্রায় ১৫টি মন্দির ও শতাধিক হিন্দু বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটে। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ঘটনার পাঁচদিন পর আবারও দু’দফা নাসিরনগরে হিন্দুদের বাড়িতে আগুন ও হানা দেয়ার ঘটনা ঘটে। হামলার এই খবর সেখানেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। গত কয়েকদিনে দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় একই ঘটনা ঘটতে থাকে। হবিগঞ্জের মধুপুরে মন্দির ভাংচুর এবং বরিশালের বানারীপাড়ায় হরিসভা মন্দিরে অগ্নিসংযোগ, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, নেত্রকোনা, ঠাকুরগাঁওসহ বিভিন্ন স্থানে মন্দিরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। নাসিরনগরের ঘটনায় পুলিশ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার কথিত অপরাধী রসরাজ নামে এক জেলেকে গ্রেফতার করার পরও হিন্দুদের বাড়িঘর, মন্দিরে হামলা চালানো যে উদ্দেশ্যমূলক তা সহজে অনুমেয়। নাসিরনগরসহ বিভিন্ন স্থানে এই ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলার সুষ্ঠু বিচার না হলে সংখ্যালঘু স¤প্রদায় আরও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে। বাংলাদেশে সকল ধর্মের মানুষের মিলেমিশে বসবাসের সংস্কৃতি বাধাগ্রস্ত হবে। মানুষের জীবনযাপনের স্বাভাবিকতা হারাবে, যা কোনভাবেই প্রত্যাশিত হতে পারে না।
হামলাকারীদের বিচার দাবিতে সারাদেশের মানুষ সোচ্চার। বিভিন্ন সংগঠন রাজপথে প্রতিবাদ জানায়। এদের সঙ্গে যোগ দেয় বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠন। তারাও হামলার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়। ফেসবুকের কথিত পোস্টকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। বলা হচ্ছে, প্রশাসনের আগাম নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল। তাই নাসিরনগরের ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন দায় এড়াতে পারে না। এমনকি ক্ষতিগ্রস্তরা পুলিশকে একদিন আগে হামলার আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল বলে জানা গেছে। এটা না করে বরং টিএনও ও ওসি সমাবেশে যোগ দিয়ে বক্তব্য রাখেন। সেই সভা থেকেই উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়া হয় এবং সমাবেশকারীরা হামলায় অংশ নেয়Ñ যা কোনভাবে প্রত্যাশিত নয়। তারা যদি কোন কারণে ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হয় অথবা দায়িত্বে অবহেলা থাকে, সেটা তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া দরকার। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় এটা জরুরী।
মূলত বিভিন্ন সময় নির্বিচার হামলার শিকার হচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের নিরীহ মানুষ। যাদের সাম্প্রদায়িকতা, রাজনীতি, মৌলবাদ বা সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই। এ জাতীয় ঘটনার পেছনে হীন উদ্দেশ্য থাকে। অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে সরকারকে বিপদে ফেলা। বহির্বিশ্বে দেশের অসাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তি নষ্ট করা। অনেক সময় এ ধরনের ঘটনার নেপথ্যে রাজনৈতিক নোংরা উদ্দেশ্যও থাকে। নাসিরনগরের ঘটনায় সাম্প্রদায়িক হামলার কথা বলা হলেও ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় তিন নেতাকে বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। ঘটনা যে কারণেই ঘটুক না কেন, প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। দোষীদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে, একটি ঘটনা আরেকটি ঘটনার জন্ম দিতে পারে। এতে সামাজিক সংহতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দেশবাসী তা চায় না কোনভাবেই। তাই প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়টি নজরদারিতে নিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
শীর্ষ সংবাদ: