ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ওবামার উত্তরসূরির জন্য অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ৯ নভেম্বর ২০১৬

ওবামার উত্তরসূরির জন্য অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ

এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন রিয়েলিটি টিভি শোতে পর্যবসিত হওয়ার অনেক দুর্ভাগ্যজনক পরিণতির একটা হলো অর্থনৈতিক নীতি সম্পর্কে গুরুতর বিতর্ক প্রায় সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত। পরবর্তী প্রেসিডেন্টের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারগুলো কি কি হবে সে সম্পর্কে দুই প্রার্থীর কেউ কিছুই তেমন বলছেন না। এরই পটভূমিতে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ‘দি ইকোনমিস্ট’ সাময়িকীতে দেয়া এক নিবন্ধে তার উত্তরসূরির অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৃহত্তর যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে তা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন এটা সত্য যে বিশ্বায়ন, অভিবাসন, প্রযুক্তি এমনকি খোদ পরিবর্তনের শক্তিগুলো নিয়ে আমেরিকায় কিছু উদ্বেগ আছে সেটা নতুন কিছু নয় এবং বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া অসন্তোষ থেকে তা ভিন্ন কিছু নয়। এই উদ্বেগ ও অসন্তোষের সিংহভাগ যার দ্বারা চালিত সেটা মূলত অর্থনৈতিক নয়। যেন অভিবাসীবিরোধী, মেক্সিকোবিরোধী, মুসলিমবিরোধী, উদ্বাস্তুবিরোধী মনোভাব। এগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে। তবে কিছু কিছু উদ্বেগ ও অসন্তোষের মূলে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক শক্তিসমূহ। যেমন কয়েক দশক ধরে উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি হ্রাস ও অসাম্য বৃদ্ধির ফলে নিম্ন ও মধ্য আয়ের পরিবারগুলোর আয় বৃদ্ধি মন্থর হয়ে গেছে। এই মন্থরতা দূর করে এতে গতিবেগ আনা আগামী প্রশাসনের একটা দায়িত্ব হয়ে দেখা দেবে। ওবামা মনে করেন তার উত্তরসূরি যিনি আসবেন তাঁকে অর্থনীতির ওপর আমেরিকানদের আস্থা পুরোপুরি ফিরিয়ে আনার জন্য চারটি প্রধান কাঠামোগত চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হবে। সেগুলো হচ্ছে উৎপাদনগত প্রবৃদ্ধি হার বাড়ানো, ক্রমবর্ধমান অসাম্য মোকাবেলা, চাকরি প্রত্যাশী প্রতিটি মানুষ যাতে চাকরি পায় তা সুনিশ্চিত করা এবং এমন এক সাবলীল অর্থনীতি গড়ে তোলা যা ভবিষ্যত প্রবৃদ্ধির গতিবেগ সঞ্চার করতে পারে। প্রথমত : সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইন্টারনেট, মোবাইল ব্রডব্যান্ড, কৃত্রিম বুদ্ধি, রোবোটিক্স প্রভৃতির মাধ্যমে প্রযুক্তির ক্ষেতে অবিশ্বাস্য অগ্রগতি ঘটলেও উৎপাদনগত প্রবৃদ্ধি তেমন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়েনি। অথচ দ্রুত বর্দ্ধিষ্ণু অর্থনীতি না থাকলে লোকে মজুরির ক্ষেত্রে যে সুফল চায় সেটা সৃষ্টি করাও প্রদান করা সম্ভব নয়। দ্রুত বর্দ্ধিষ্ণু অর্থনীতির জন্য প্রয়োজন সরকারী ও বেসকারী খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি। সে জন্যই ট্রান্স-প্যাসিফিক পাটনারশিপ কংগ্রেসকে দিয়ে পাস করিয়ে নিতে হবে যাতে করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ট্রান্স আটলান্টিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদারিত্ব চুক্তি সম্পাদন করা যায়। এতে করে এই দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়বে এবং ব্যবসায়ী ও শ্রমিক উভয়ের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি হবে। দ্বিতীয়ত : উৎপাদনগত প্রবৃদ্ধি মন্থর হওয়ার পাশাপাশি অধিকাংশ উন্নত দেশে অসাম্যও বেড়েছে এবং সেই অসাম্য সবচেয়ে বেশি বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। অসাম্য বেড়ে যাওয়ার একটা সমস্যা হলো এই যে এর ফলে মইয়ের একদম উপরের ও একদম তলের ধাপগুলো বেশ আঠালো হয়ে পড়ে। এর ফলে উপরে ওঠা কঠিনতর হয়, তেমনি শীর্ষ ভাগের স্থান হারানোও হয় কঠিনতর। অসাম্য বৃদ্ধির অনেক কারণ থাকে। যেমন প্রযুক্তি, শিক্ষা বিশ্বায়ন ইউনিয়নগুলোর শক্তিহীন হয়ে পড়া এবং ন্যূনতম মজুরি কমে যাওয়া। তাছাড়া সংস্কৃতি মূল্যবোধের পরিবর্তনের একটা ভূমিকা আছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান হ্রাস পেলে ও প্রবৃদ্ধি ব্যাপক পরিসরে হলে অর্থনীতি অধিকতর সফল হয় এবং অসাম্য বেশি হলে প্রবৃদ্ধি হয় অধিকতর ভঙ্গুর ও মন্দা ঘন ঘন দেখা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের অসাম্য হ্রাসে কিছু কিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও ওবামার মতে এক্ষেত্রে আরও বেশি আগ্রাসী হতে হবে। ইউনিয়নগুলোরও এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার আছে। এ ছাড়া ফেডারেল পর্যায়ে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি, নির্ভরশীল সন্তান সন্ততি নেই এমন শ্রমিকদের অর্জিত আয়ের ট্যাক্স ক্রেডিট প্রসার নারী ও পুরুষরা যাতে সমান কাজের জন্য সমান পারিশ্রমিক পায় তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিলে অসাম্য কমাতে সঠিক পথে অগ্রসর হওয়া যাবে। তৃতীয়ত : চাকরি প্রার্থী প্রত্যেকের জন্য কাজের অর্থবহ সুযোগ সৃষ্টির ওপরও অর্থনীতির সাফল্য নির্ভর করে ১৯৫৩ সালে ২৫ থেকে ৫৪ বয়সী পুরুষরা শ্রমশক্তির বাইরে ছিল আজ এই সংখ্যা ১২ শতাংশ। অধিক সংখ্যক আমেরিকানকে শ্রমবাজারে ধরে রাখার নানা উপায় আছে। ওবামা সেই উপায়গুলোকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন। যেমন নতুন চাকরি না পাওয়া শ্রমিকদের মজুরি বীমার অর্থ প্রদান করা, উঁচু মানের কমিউনিটি কলেজে পড়ার সুযোগ বৃদ্ধি করা, কর্ম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং নতুন চাকরির সন্ধানে সহায়তা করা ইত্যাদি। চতুর্থত : নতুন প্রশাসনকে আরও সাবলীল অর্থনীতি গড়ে তোলার ব্যাপারে দৃষ্টি দিতে হবে বলে ওবামা মনে করেন। এ ব্যাপারে ব্যাকিং ব্যবস্থার যেসব ক্ষেত্রে বিপদাশঙ্কা আছে সেগুলো দূর করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন করতে হবে। আবাসনের অর্থায়নের যে ব্যবস্থাটি চালু আছে সেটি ত্রুটিমুক্ত করতে হবে। তাছাড়া নেতিবাচক আঘাত আসার আগে তার জন্য প্রস্তুত থাকতে আমেরিকানদের আরও কিছু করা উচিত। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×