ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আকিল জামান ইনু

মার্কিন নির্বাচন ২০১৬ কে যাচ্ছেন সাদা বাড়িতে

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ৯ নভেম্বর ২০১৬

মার্কিন নির্বাচন ২০১৬ কে যাচ্ছেন সাদা বাড়িতে

সারা বিশ্ব পাখির চোখে তাকিয়ে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। আগ্রহের কেন্দ্রে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০১৬ । কে হতে যাচ্ছেন বিশ্বের এক নম্বর ক্ষমতাবান ব্যক্তি? বিশ্ব মোড়ল যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান পাশাপাশি সবচেয়ে বড় সেনাবাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ? লিখাটি যখন পাঠকের হাতে, ততক্ষণে নির্বাচনী ফলাফলের একটি প্রাথমিক চিত্র তিনি পেয়ে গেছেন বলেই ধারনা করা যায়। কে জিতবেন? হিলারি না ট্রাম্প? কে এগিয়ে জরিপে? কাদা ছোড়াছুড়িতে কে চ্যাম্পিয়ন? বিতর্কের ফলাফল, অনুমান, মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের খেলা, আলোচনা, সমালোচনা, ভবিষ্যদ্বাণী সব এখন অবান্তর। জনতা জনার্দন তার রায় দিতে শুরু করেছে । কথা বলবে জনতার রায়। কে নিতে যাচ্ছেন ২০১৭ জানুয়ারির ২০ তারিখ সাদা বাড়ির দখল তা নির্ধারণ করবে জনতা। যে জনতার রায়ের সামনে ট্রাম্পের আস্ফালন আর হিলারির বিখ্যাত মেজাজ দুটোই অসহায়। এখন কথা বলবে গণতন্ত্র, জানিয়ে দেবে কার দখলে যাচ্ছে সাদা বাড়ি পরবর্তী চার বছরের জন্য। এবারের নির্বাচনে দুই হেভিওয়েট প্রার্থী ডেমোক্র্যাট হিলারি আর রিপাবলিকান ট্রাম্প। হিলারির রয়েছে দীর্ঘ রাজনইতিক আর প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা। অপরদিকে ট্রাম্পের আছে ব্যবসায়িক সাফল্য আর রিয়েলিটি শোর ব্যাপক পরিচিতি। কিন্তু দীর্ঘ প্রচারাভিযানে সব ছাপিয়ে গেছে নোংরা কাদা ছোড়াছুড়ি। শালীনতার সব সীমা ছাড়িয়ে একে অপরকে আক্রমণ করেছেন। হিলারির বিরুদ্ধে অভিযোগ ই-মেইল ব্যবহার নিয়ে, অভিযোগ উচ্চারিত হয়েছে ফরেন অফিসে থাকাকালীন ক্ষমতার অপব্যবহার, নীতি নির্ধারণে ভুল, বেনগাজি হত্যাকাণ্ড, মধ্যপ্রাচ্যে জটিলতা বৃদ্ধি। এমনকি ট্রাম্পের বেপরোয়া আক্রমণ থেকে রেহাই পাননি হিলারির স্বামী বিল ক্লিনটন ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও। রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প সমালোচিত তার অভিবাসন নীতি নিয়ে । হিলারি তাকে বলেছেন, স্বভাবগত মিথ্যুক। নারীদের প্রতি অবমাননাকর মনোভাব, নিজের স্বার্থে ঘুষ প্রদান, শ্রমিক ঠকানো, ট্রাম্প বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ পর্যন্ত উচ্চারিত হয়েছে তাকে ঘিরে। এক ডজনের ও বেশি নারী তাকে অভিযুক্ত করেছেন যৌন হয়রানির অভিযোগে। আর তাতে বিন্দু মাত্র পরোয়া না করে ট্রাম্প বলেছেন ওই নারীরা কেউ তার মনোযোগ আকর্ষণের মতো নন। তবে মনোযোগ আকর্ষণের মতো হলে ট্রাম্প কি করতেন সে উত্তর অজানাই রয়ে গেল! মুসলিমবিরোধী মনোভাব নিয়েও ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন ট্রাম্প, এমনকি ইরাক যুদ্ধে যুক্ত রাষ্ট্রের পক্ষে প্রাণ দেয়া এক মুসলিম সৈনিকের পরিবার পর্যন্ত রেহাই পায়নি তার আক্রমণ থেকে। মিডিয়াকে অভিযুক্ত করেছেন বার বার তার বিরুদ্ধে জনমত উস্কে দেয়ার অভিযোগে। হিলারি তাকে সরাসরি বলেছেন বর্ণবাদী। এত কাদা ছোড়াছুড়িতে চাপা পড়ে গেছে অভ্যন্তরীণ আর আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারণী বিষয়গুলো। দেশবাসীর সামনে নেই কোন পরিষ্কার চিত্র, নির্বাচিত হলে তারা নাগরিকদের স্বার্থে কি ভূমিকা নেবেন। স্বাস্থ্য বীমা, যোগাযোগ বাবস্থা, বেকারত্ব দূরীকরণ বা কর্মসংস্থান তাদের অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে অন্ধকারে রয়ে গেল মার্কিন সমাজ। অথবা এভাবেও বলা যায় যে চিত্রটি পেল তা পরিষ্কার নয়। সাধারণত ক্ষমতা গ্রহণের পরবর্তী ১০০ দিনের যে রূপরেখা প্রার্থীরা দিয়ে থাকেন তাও ডুবে গেছে নোংরা কাদায়। আর আন্তর্জাতিক নীতি নিয়ে ট্রাম্প কেবল অভিযুক্ত করেই গেছেন হিলারিকে তার বারথতার জন্য। ট্রাম্প যেহেতু এ ধরনের দায়িত্ব পালন করেননি তাই তাকে সেভাবে অভিযুক্ত করার কোন সুযোগ হিলারির ছিল না। ট্রাম্পের অভিযোগের জবাব হিলারি দিয়েছেন এক কথায়- ট্রাম্প পররাষ্ট্র নীতির কিছুই বোঝেন না বলে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সমাজের জানা হলো না তাদের বিজয় পরবর্তী ভূমিকা নিয়ে। এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী বিতর্ক ছিল কুরুচির প্রদর্শনী। বোধকরি এ নিয়ে যত কম বলা যায় ততই ভাল। ট্রাম্প হিলারিকে জেলে প্রেরণের হুমকি দিয়েছেন। নিজের বিজয় ছাড়া কিছু মানবেন না তাও জানিয়ে দিয়েছেন পরিষ্কার। হিলারি তার মেজাজ ধরে রেখে আক্রমণ করেছেন ট্রাম্পকে। বলা যায় এই মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখাটাই তার সাফল্য। বিতর্কের ফলাফল ট্রাম্পের পক্ষে জায়নি এটা পরিষ্কার। তবে শেষ সময়ে এসে হিলারি বিপাকে পরেন এফবিআই পরিচালক কোমির ই-মেইল নিয়ে নুতন করে তদন্ত শুরুর ঘোষণায়। ট্রাম্প সুযোগটি লুফে নিয়েছিলেন কিন্ত তা বোধহয় খুব কাজে লাগল না। ৬ নবেম্বর এফবিআই জানিয়ে দিয়েছে তদন্তে হিলারিকে অভিযুক্ত করার মতো কিছু পাওয়া জায়নি। এ ঘটনাকে অনেকে দেখছেন পর্দার অন্তরালে অদৃশ্য হাতের খেলা বলে! আর মিডিয়া কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তো আলোচনায় ছিলই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুজনকে নিয়ে রসিকতা রেকর্ড ছাড়িয়েছে। তবে জরিপে ধারাবাহিকভাবে হিলারি এগিয়ে ছিলেন সব সময়। তবে সব আলোচনা সমালোচনা এখন অর্থহীন, জনতা তার রায় জানাতে শুরু“করেছেন। কে হবেন বিজয়ী? উত্তর দেবেন মার্কিন ভোটাররা। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট তথা সরকারপ্রধান পদে এই প্রথম আমরা কি কোন নারীকে দেখতে যাচ্ছি? তা যদি হয় তাহলে আমরা তাদের এ কথা বলতেই পারব ‘এ বিষয়ে আমরা তোমাদের চেয়ে এগিয়ে আছি ২৬ বছর!’
×