ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মার্কিন টেনিসকন্যা ক্যাটি লাফ্রান্স, ওয়ালটন আন্তর্জাতিক জুনিয়র টেনিস

শিরোপা জিততেই ঢাকায় এসেছি

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ৯ নভেম্বর ২০১৬

শিরোপা জিততেই ঢাকায় এসেছি

রুমেল খান ॥ ‘এ আসরের শীর্ষ বাছাই হিসেবে একটা স্বাভাবিক চাপ আছেই। কিন্তু এ নিয়ে আমি চিন্তিত নই। আমি ম্যাচ বাই ম্যাচ ধরে সামনে এগুতে চাই। আর অবশ্যই চাই এ আসরের শিরোপাটা একান্তই নিজের করে নিতে।’ কথাগুলো যার, তার নাম ক্যাথেরিন পারডিউ লাফ্রান্স। সংক্ষেপে ক্যাটি লাফ্রান্স। সোমবার থেকে ঢাকার রমনা টেনিস কমপ্লেক্সে শুরু হয়েছে ‘ওয়ালটন আন্তর্জাতিক জুনিয়র টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপ (অনুর্ধ-১৮)।’ এই আসরে বাংলাদেশসহ ১২টি দেশের ৯৬ জুনিয়র টেনিস তারকা (ছেলে ৫৯ ও মেয়ে ৩৭) অংশ নিচ্ছে। তবে ভিন্ন কারণে সবার নজর কেড়েছে ক্যাটি, যে কিনা এই আসরের মেয়েদের বিভাগের শীর্ষ বাছাই। লস এ্যাঞ্জেলসে অবস্থিত টেনিস একাডেমিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ক্যাটি বাংলাদেশে এই প্রথম এসেছে। খুব ভাল লাগছে আর উপভোগ করছি সবকিছু। এখানকার আবহাওয়াও চমৎকার। থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার আবহাওয়াও এত ভাল নয়। মঙ্গলবার ক্যাটি নিজের উদ্বোধনী খেলায় (এককে) অংশ নেয় (প্রথম রাউন্ডে সে বাই পায়)। প্রতিপক্ষ ভারতের ষোড়শী মুসকান রঞ্জনা। মুসকানকে ৬-০, ৬-৪ ব্যবধানে হারিয়ে শুভসূচনা করে ক্যাটি। প্রথম সেটে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি মুসকান। গ্যালারিতে উপস্থিত তার মা চিৎকার করে মেয়েকে উৎসাহ জোগাচ্ছিলেন, ‘লেটস গো মুসকান!’ মায়ের অনুপ্রেরণায় উজ্জীবিত হয়েই বোধহয় পরের সেটে খানিকটা প্রতিরোধ গড়ে তোলে সুদর্শনা মুসকান। তবে ক্যাটির গতি, পাওয়ার, স্ট্যামিনা আর জোরালো স্ট্রোকের সঙ্গে আর পেরে ওঠেনি মুসকান। এখানে খেলা শেষ করে ক্যাটি খেলতে যাবে মালদ্বীপের একটি টুর্নামেন্টে। তারপর যাবে প্যারাগুয়েতে। ম্যাচ শেষে আলাপচারিতায় সে জানায়, সব প্রতিপক্ষকেই সে সমীহ করে এবং সমান প্রাধান্য দেয়। স্মরণীয় ম্যাচ? এ বছরের জুলাইয়ে হংকংয়ে একটি টুর্নামেন্টে খেলতে গিয়েছিলাম। প্রতিপক্ষের (চীনের জিয়াউন ঝু) কাছে প্রথম গেমে হেরে যাই ৭-৫ এ। দ্বিতীয় গেমেও পিছিয়ে পড়ি ৫-২ এ। ওই অবস্থা থেকে আমি ঘুরে দাঁড়াই। গেম জিতি ৭-৬ এ। তারপরের পরের গেমটাও জিতি খুব সহজেই ৬-০তে। ম্যাচটা শেষ হতে সময় লেগেছিল পাক্কা চার ঘণ্টা। ক্যাটির স্মৃতিচারণ। নামের শেষ ‘ফ্রান্স’ শব্দটি থাকলেও দেশটির সঙ্গে ক্যাটির কোন সম্পর্ক নেই। তার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে। স্বর্ণকেশী ক্যাটির শখ হচ্ছে ভ্রমণ করা, পড়া (সাধারণ জ্ঞান সংক্রান্ত) এবং পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো। সে এই আসরের শিরোপা জিততে এতটাই মরিয়া যে, থাইল্যান্ড থেকে বিমান ভাড়া করে কম্বোডিয়ায় একটি টুর্নামেন্টে খেলে বাংলাদেশে নির্বিঘেœ ও স্বল্পসময়ে আসার জন্য চার্টার্ড বিমান ভাড়া করেছে এক সপ্তাহের জন্য টুর্নামেন্ট শেষ হওয়া পর্যন্ত। তার সঙ্গে এসেছেন বাবা স্টিভেন লি লাফ্রান্স, মা ওয়েনডি পারডিউ লাফ্রান্স ও কোচ সোফিয়া আলেক্সান্দা। শুধু তাই নয়, তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল সশস্ত্র দেহরক্ষীও! বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা এবারই প্রথম। গার্লস জুনিয়র এককে বিশে^ ক্যাটির বর্তমান র‌্যাঙ্কিং হচ্ছে ৪৫৭। যদিও গত সেপ্টেম্বরে এরচেয়েও ভাল অবস্থানে ছিল সে (৪২০)। এ পর্যন্ত এককে সে জিতেছে ৩৬ ও হেরেছে ৩০ ম্যাচে। চলতি বছরে তার জয়-হারের খতিয়ান হচ্ছে ১৯-১৬। আর দ্বৈতের রেকর্ড হচ্ছে ৩২-২৭ (চলতি বছরের রেকর্ড ১৬-১৪)। সর্বশেষ সে খেলেছে কম্বোডিয়ায় অনুষ্ঠিত টেপ খুন্না মেমোরিয়াল কাপ আইটিএফ জুনিয়র আসরে। সেখানে সে এককে সেমিফাইনাল এবং দ্বৈতে প্রিকোয়ার্টার পর্যন্ত খেলে। সেখানে তার পার্টনার ছিল ফিলিপিন্সের আর ভিলানুয়েভা। ক্যাটির বাবা-মা দু’জনই ছিলেন টেনিস খেলোয়াড়। বাবা শৌখিন খেলোয়াড় হলেও মা ছিলেন আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন। মাত্র তিন বছর বয়সেই তাদের অনুপ্রেরণাতেই টেনিসে হাতেখড়ি ক্যাটির। ক্যাটির আদর্শ খেলোয়াড় ড্যানিশ টেনিসকন্যা ক্যারোলিন ওজনিয়াকি। নিজের দেশের সেরেনা উইলিয়ামস কেন নয়? ‘সেরেনার সঙ্গে এখনও দেখা হয়নি। তবে তার খেলাও ভাল লাগে। তবে ক্যারোলিনই আমার বেশি প্রিয়।’ ক্যাটির ভাষ্য। এখন দেখার বিষয়, সপ্তদর্শী এই স্বর্ণকেশী সুদর্শনা ঢাকা জয় করতে পারেন কি না।
×