ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কুমিল্লাকে হারিয়ে শুভ সূচনা চিটাগাংয়ের

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ৯ নভেম্বর ২০১৬

কুমিল্লাকে হারিয়ে শুভ সূচনা চিটাগাংয়ের

মিথুন আশরাফ ॥ পনের বছর পূর্তিটা আনন্দময় হতে পারত মাশরাফি বিন মর্তুজার। যদি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স জিততে পারত। কিন্তু হলো না। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল টি২০) চতুর্থ আসরের প্রথম ম্যাচে যে চিটাগাং ভাইকিংসের কাছে ২৯ রানে হারল কুমিল্লা। মাশরাফি একজন বোলার। বিপিএলে এবারের আসরে প্রথম বলটি করেই ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ১৫ বছর উদযাপন হলো মাশরাফির। কিন্তু বল হাতেও দিনটিতে ভাল করলেন না। দলও জিততে পারল না। চিটাগাং ভাইকিংস জয় দিয়ে টুর্নামেন্টের শুভ সূচনা করল। আর হার দিয়ে কুমিল্লার শুরু হলো। কুমিল্লা টস জিতে ফিল্ডিংও নেয়। শুরু থেকেই যেন চোখ রাঙ্গায় চিটাগাং। শেষ পর্যন্ত তামিমের ৫৪, মালিকের অপরাজিত ৪২ ও অমির অপরাজিত ২৯ রানে ২০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৬১ রান করল ওয়েস্ট ইন্ডিজের দানবীয় ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইলকে ছাড়াই খেলতে নামা চিটাগাং। কুমিল্লা ৮ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৩২ রান করতে পারল। শুধু নাজমুল হোসেন শান্ত (৫৪*) একাই লড়াই করে গেলেন। শেষ ওভারেতো টানা চার বলে চারটি বাউন্ডারি হাঁকালেন। তাতেও কাজ হলো না। বল হাতে আফগানিস্তানের মোহাম্মদ নবী ৪ উইকেট শিকার করলেন। ১৬২ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে স্কোরবোর্ডে মাত্র ৯ রান যোগ হয়েছে। এরমধ্যেই বিপিএলের গত আসরে দেশী ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি (২৮.৩৬ গড়ে ৩১২) রান করা ইমরুলকে আউট করে দিলেন ডোয়াইন স্মিথ। স্মিথের সে কি আনন্দ! আকাশে উড়ে শূন্যে ঘুষি মেরে আনন্দ উদযাপন করলেন। সেই আনন্দ অবশ্য ফিকে হতে চলেছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মারমুখী ব্যাটসম্যান মারলন স্যামুয়েলস যে চার-ছক্কা হাঁকাতে থাকলেন। মুহূর্তেই ৫ ওভারে ৩০ রান যোগ হয়ে গেল। ষষ্ঠ ওভারের দ্বিতীয় বলে আব্দুর রাজ্জাকের বলে লং অফ দিয়ে বিশাল ছক্কা হাঁকালেন স্যামুয়েলস। ৩৬ রান স্কোরবোর্ডে যোগ হয়ে গেল। এরমধ্যে স্যামুয়েলসেরই ২৩ রান হলো। পরের বলেই মিডউইকেটে তাসকিনের হাতে ধরা খেলেন। ১০ রান যোগ হতেই আফগান স্পিনার মোহাম্মদ নবীর বলে আউট হয়ে গেলেন লিটন কুমার দাসও। কিছুক্ষণ না যেতেই আসহার জাইদিকেও বোল্ড করে দিলেন নবী। তখনই যেন প্রশ্ন উঠে গেল, দিনটি তাহলে কুমিল্লার নয়? গত আসরে কুমিল্লা যখন জয় পাচ্ছিল না, চিটাগাং ভাইকিংসের বিপক্ষে ম্যাচে ৫ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩২ বলে ৫৬ রানের ইনিংস খেলে কুমিল্লাকে প্রথম জয় এনে দেন। এবারও চিটাগাংয়ের বিপক্ষে টুর্নামেন্টেরই প্রথম ম্যাচে আবারও আগে ব্যাট করতে নামেন মাশরাফি। ৬ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে এবার আর কিছুই করতে পারেননি মাশরাফি। ইংল্যান্ডের পেসার টাইমাল মিলস দুর্দান্ত বল করতে থাকেন। একের পর এক বাউন্সার আর গতিতে কুমিল্লার ব্যাটসম্যানদের ভোগাতে থাকেন। যেই একটি স্লো বল দেন, মাশরাফি বোল্ড হয়ে যান। ৭২ রানেই কুমিল্লার ৫ উইকেটের পতন ঘটে যায়। ৫ রান যোগ হতেই পাকিস্তান ক্রিকেটার ইমাদ ওয়াসিমকে সাজঘরে ফেরান তাসকিন। এরপর খেলা পুরোদমেই চিটাগাংয়ের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ১০৭ রানের সময় আল আমিন ও পাকিস্তানের সোহেল তানভিরকে আউট করে দিয়ে হ্যাটট্রিকের আশা জাগান নবী। কিন্তু হয়নি। ততক্ষণে জিততে ১৫ বলে ৫৫ রান লাগে। বোঝাই যায়, কুমিল্লার জেতা কোনভাবেই সম্ভব নয়। শেষ পর্যন্ত তাই হলো। তবে শেষ ৬ বলে যে ৪৮ রানের দরকার ছিল, শান্ত ১৮ রান নিয়ে নেন। তাসকিনের করা ওভারে টানা চারটি বাউন্ডারি হাঁকান। শেষ পর্যন্ত ৫৪ রানে থাকেন অপরাজিত। শান্ত ছাড়া লিটন (১৩), স্যামুয়েলস (২৩) ও আল আমিন (১৪) শুধু দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেন। শুরু থেকেই দুর্দান্ত ব্যাটিং করতে শুরু করেন চিটাগাংয়ের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও ডোয়াইন স্মিথ। টি২০তে যেভাবে ব্যাটিং করা দরকার, সেই ধুন্ধুমার ব্যাটিংই মিলছিল। তবে সেটি শুধু তামিমের কাছ থেকেই মিলছিল। একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন তামিম। পঞ্চম ওভারের সময় পাকিস্তান পেসার সোহেল তানভিরের প্রথম ও তৃতীয় বলে চার ও ছক্কা হাঁকান। পাওয়ার প্লেতে ৩৬ রান নেয় চিটাগাং। এর মধ্যে তামিমই করেন ২৬ রান। নবম ওভারে গিয়ে ডানহাতি স্পিনার নাহিদুল ইসলামের দ্বিতীয় ও পঞ্চম বলে ছক্কা ও চার হাঁকান। ১০ ওভারে ৭৬ রান করে ফেলে চিটাগাং। এর মধ্যে তামিমের ব্যাট থেকেই আসে ৫২ রান। আর বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারেননি তামিম। ২ রান যোগ করতে পারলেন। ৩৬ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডোয়াইন স্মিথ (৯) আউটের পরও এনামুল হক বিজয়কে নিয়ে খুব ভালই খেলছিলেন তামিম। সেই বিজয়ই স্বার্থপরের মতো কাজ করলেন। তামিমকে রান আউট করে দিলেন। বিজয়ের দিকে তামিম যে রাগ ঝাড়ছিলেন, তাতেই বোঝা গেছে; খবর আছে বিজয়ের। সেই খবরতো পরের ম্যাচে বিজয়কে একাদশে না দেখলেই বোঝা যাবে। তামিমকে রান আউট করে দিয়ে নিজেও রান আউট হলেন বিজয়। এরপর আর কোন উইকেটই পড়ল না। পাকিস্তান অলরাউন্ডার শোয়েব মালিক (৪২*) ও জহুরুল ইসলাম অমি (২৯*) মিলে চতুর্থ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৬০ রানের জুটি গড়লেন। তাতে চিটাগাংয়ের স্কোর গিয়ে দাঁড়াল ১৬১ রান। ১৫ বছর পূর্তির দিনে বলটাও ভাল হলো না মাশরাফির। ৪ ওভারে কুমিল্লার হয়ে প্রথম ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ৩৪ রান দিলেন মাশরাফি। সেই সঙ্গে হারও হলো।
×