ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তাজকিয়া নুর মুন

আলোচিত ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজ

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৯ নভেম্বর ২০১৬

আলোচিত ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজ

রাজকোট টেস্ট দিয়ে শুরু হচ্ছে ভারত-ইংল্যান্ড পাঁচ টেস্টের দীর্ঘ সিরিজ। ক্রিকেটের দুই পরশাক্তির দীর্ঘ লড়াই ঘিরে আগ্রহের কমতি নেই। যেখানে ঢাকা টেস্টে হারের কষ্ট ভুলে আত্মবিশ্বাসী হতে চাইছে ইংলিশরা। দীর্ঘ সিরিজ সামনে রেখে দলের জন্য এটিই এখন প্রথম কাজ বলে মনে করছেন কোচ ট্রেভর বেইলিস ও তারকা ব্যাটসম্যান জো রুট। ভারতে বাইরের দলগুলোর জন্য স্পিন সমালানোটাই বড় চ্যালেঞ্জ। মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব-আল হাসানের ঘূর্ণিতে কুপোকাত ইংল্যান্ডের জন্য রবিচন্দ্রন আশ্বিন আর রবিন্দ্র জাদেজা যে বিভীষিকা হয়ে হাজির হবেন সেটি অনুমেয়। ঘুড়ে দাঁড়াতে চান অধিনায়ক এ্যালিস্টার কুকও। বিরাট কোহলির নেতৃত্বে ভারত এখন টেস্টের এক নম্বর দল। সিরিজে ফেভারিট হিসেবে মাঠে নামছে তারা। মহেন্দ্র সিং ধোনির কাছ থেকে নেতৃত্ব পাওয়ার পর কোহলির অধীনে ভারত যে উড়ছে। ঘরের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিাকে, শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দাপুটে জয়, কদিন আগে নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে দেয়া, ‘নাম্বারও ওয়ান’ টিমেরই প্রমাণ। ইংল্যান্ড ব্যাটিংয়ের অন্যতম স্তম্ভ রুট বলেন, ‘বাংলাদেশের কাছে ওই রকম একটা হার নিশ্চই যন্ত্রণাদায়ক। কিন্তু ভাল দিক হচ্ছে, শুধরানোর জন্য আমার সময় পাচ্ছি। প্রস্তুতিতে ঘাম ঝড়াচ্ছি। সবাই নিজেদের সামর্থ্য সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী হতে চাইছি। সন্দেহ নেই ভারত মারাত্মক দল। কিন্তু আমরা দেখাতে চাই, আমাদের পক্ষে এখনে ভাল করা সম্ভব।’ আর বস ট্রেভর বেইলিসের মতে,‘অতীতে দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো কঠিন সিরিজে হেরেও আমরা ঘুড়ে দাঁড়িয়েছি। এবার না পারার কোন কারণ নেই।’ বাংলাদেশ-ধাক্কার পর ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানরা কিভাবে ভারতীয় স্পিানরদের সামলবে, সেটি নিয়েই বেশি আলোচনা হচ্ছে। পাশাপাশি স্পিনে অতিথিদের ভরসা মঈন আলী ও আদীল রশীদরা কি বিরাট কোহলিদের কাছে পাত্তা পাবেন? সেই প্রশ্নও উঠছে। গ্রেট ইংলিশ স্পিনার গ্রায়েম সোয়ান মনে করেন পূর্বসূরি স্পিনারদের জন্য কঠিন বিপদ অপেক্ষা করছে। এজন্য তিনি নিজেদের মানসিকতাকেই দায়ী করেছেন। ২০১২ সালে ভারত সফরে ২-১ ব্যবধানে ইংল্যান্ডের সিরিজ জয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করা সোয়ান মনে করেন বর্তমান ভারতীয় দলের বিপক্ষে ইংলিশদের সে সফরের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর কোন সম্ভাবনাই নেই! কারণ ইংল্যান্ডে নাকি স্পিনারদের তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হয়! ‘আমি এবং মন্টি ছিলাম প্রকৃতির দান। আমরা উত্তরাঞ্চলে বেড়ে উঠেছি। তবে নন-টার্নিং পিচে ভাল করার লক্ষ্যে আমি নটিংহ্যামশায়ারে চলে আসি। ইংল্যান্ডে আমরা স্পিনকে মোটেই গুরুত্বের সঙ্গে নেইনি। তবে উপমহাদেশ সফরে আসল সত্যিটা উপলব্ধি করলাম যে, আমাদের বিশ্বমানের স্পিনার নেই।’ সে বছর ভারত সফরে ইংল্যান্ড দলের সাফল্য এনে দিয়েছিলেন সোয়ান এবং তার সতীর্থ মন্টি পানেসার। ইংল্যান্ডের এই ইংল্যান্ড দলটা চার বছর আগে মতো অত শক্তিশালী নয় ঠিকই, কিন্তু সর্বশেষ ১০ সিরিজের মাত্র একটিতে হারা ইংল্যান্ড এবার ভারতে সব কটি টেস্টে হেরে যেতে পারে, এমন কথাও উঠছে। কারণ আর কিছুই নয়। বাংলাদেশের বিপক্ষে ২ ম্যাচের সিরিজে বেশিরভাগ সময় স্পিনের সামনে তাদের কাঁপাকাঁপি। সিরিজো ঘুরে-ফিরে আসছে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ। বাংলাদেশের কন্ডিশনে নিজেদের দুর্বলতা যেভাবে প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে, তাতে ভারতের মাটিতে এসে আহামরি কিছু তারা করে ফেলবেনÑ এমনটি ভাবা বাড়াবাড়ি। বাংলাদেশের স্পিনাররা যেভাবে ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের সামর্থ্যরে সর্বোচ্চ পরীক্ষা নিয়েছেন, তাতে ভারতে রবিচন্দ্রন অশ্বিনরা ইংল্যান্ড-বধে উৎসাহিত হতেই পারেন। ভারতও স্পিন-বিষ মাখা উইকেট বিছিয়ে রাখছে নিশ্চয়ই। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যেমনটা করেছিল তারা। বাংলাদেশের তরুণ স্পিনার মেহেদী মিরাজের বিপক্ষেই তো ঘাম ছুটে গিয়েছিল ইংল্যান্ডের! টেস্টসেরা স্পিনার অশ্বিনের আঙুল তো নিশপিশ করবেই! ভারতের বিপক্ষে সিরিজ বেশ কঠিনই হবে বলে বিশ্বাস কুকের, ‘ভারত টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর দল। র‌্যাঙ্কিংয়ের এক, দুই নম্বর দলগুলোর বিপক্ষে তাদের নিজেদের মাঠে খেলাটা খুব কঠিন। কারণ, নিজেদের মাঠে তারা বেশ স্বাচ্ছন্দ্য। সুতরাং, এটা বিরাট বড় চ্যালেঞ্জ।’ বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজের দলটিতে বেশ কিছু পরিবর্তন নিয়েই মাঠে নামতে হবে কুকের। ইংল্যান্ড অধিনায়ক আরও বলেন, ‘আমাদের দল নির্বাচন নিয়ে বড় কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে। (বাংলাদেশে) এমন দুটি ম্যাচ হয়ে যাওয়ার পর কিছু পরিবর্তন তো আপনাকে আনতেই হবে।’ তবে কী ভারতে কোনই আশা নেই ইংল্যান্ডের। কুক মনে করেন, দলের তুলনামূলক অনভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের যে চ্যালেঞ্জর মুখেই ঠেলে দেয়া হোক না কেন তাদের ভাল খেলতে হবে। আমরা যেহেতু চ্যালেঞ্জের মুখে আছি, তাই নিজেদের আন্ডারডগ-ভাবতে আপত্তি নেই!’ অন্যদিকে কেমন হবে হাওয়ায় ভাসতে থাকা সাদা পোশাকের ভারত দল? বস্ অনিল কুম্বলেই বা কি ভাবছেন? বিশেষ করে রোহিত শর্মা-শিখর ধাওয়ানদের ইনজুরিতে ডাক পাওয়া তরুণ হারদিক পান্ডিয়া ও করুণ নায়ারের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে মধুর সমস্যায় লিজন্ডারি এই ক্রিকেটার! যে কেউ সুযোগ পেতে পারেন, তবে প্রাধান কোচের বক্তব্যে পরিষ্কার, পেস-বোলিং অলরাউন্ডার হারদিকের অভিষেকটা হয়ত সময়ের ব্যাপার। ‘হারদিক খুবই প্রতিভাবান ক্রিকেটার। প্রথম বার আইপিএল খেলেতে এসেই ও সেটি বুঝয়ে দিয়েছিল। মানছি টি-২০ আর টেস্ট এক নয়। কিন্তু ছেলেটা প্রতিভাবান। আর ভার্সন যাই হোক, সব ক্ষেত্রেই প্রতিভাবানদের একটা সম্ভাবনা থাকে। তাই ওকে প্রথমবারের মতো টেস্ট দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’ বলেন কোচ কুম্বলে। তাহলে হারদিক কি পঞ্চম বোলার হিসেবে একাদশে সুযোগ পাচ্ছেন? ভারত কোচের উত্তর, ‘টেস্ট ম্যাচে পঞ্চম বোলারের গুরুত্ব কম নয়। বিশেষ করে ওর মতো কেউ যখন ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বল করবে, আবার লোয়ার-অর্ডারে প্রয়োজনীয় রান করে দেবে। আমরা দেখতে চাই হারদিক কি করে আরও উন্নতি করে। যখনই সুযোগ পাবে ওকে স্বাধীনতা দেয়া হবে। এমন অলরাউন্ডার থাকাটা দলের জন্য বাড়তি সুবিধা।’ মনে হবে, রাজকোটেই সাদা পোশাকে হারদিকের অভিষেকটা হতে যাচ্ছে। কিন্তু তিনি ছয় নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে নায়ারকেও ফেলে দেননি। কর্নাটক ব্যাটসম্যানকে নিয়ে ইতিবাচক কুম্বলে বলেন, ‘করুণ ঘরোয়া ক্রিকেটে খুব ভাল করেছে। ধারাবাহিক রান পাচ্ছে। রোহিতের চোটে ওর সামনে একটা সুযোগ তৈরি হয়ে গেল। কম্বিনেশন কি হবে, আমরা সেটা এখনও ঠিক করতে পরিনি। তবে করুণের ওপর বিশেষ দৃষ্টি থাকবে। আমি নিশ্চিত সিরিজে সে সুযোগ পাবে।’ ২০১২Ñএর সেই স্মৃতি ফিরে আসবে না। আত্মবিশ্বাস বস্। কুম্বলে বলেন ‘আমরা এবার ভিন্ন এক দল। সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর ধরলে অনেকগুলো টেস্ট খেলেছি। প্রতিটি সিরিজেই উন্নতি হচ্ছে।
×