ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রুমেল খান

লাকীর আত্মবিশ্বাস...

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৯ নভেম্বর ২০১৬

লাকীর আত্মবিশ্বাস...

সফল হতে গেলে অনেক কিছুর সমন্বয়ের প্রয়োজন। সব উপাদান নিয়ে সবিস্তারে আলোচনা সম্ভব নয়। কেবল দুটি নিয়েই কিঞ্চিৎ বাতচিৎ করা যাক। সাফল্যের নিয়ামক হিসেবে কখনই অস্বীকার করা যাবে না সৌভাগ্যের পরশ এবং দৃঢ় আত্মবিশ্বাসকে। সৌভাগ্যের অধিকারীকে ইংরেজীতে বলা হয় ‘লাকী’। যিনি লাকী, তার তো আত্মবিশ্বাস থাকবেই। বাংলাদেশের ব্যাডমিন্টনের জাতীয় পর্যায়ে এমন এক একবিংশ বর্ষীয় সুদর্শনা শাটলার আছেন, যার নাম লাকী বিশ্বাস! খুলনার ডুমুরিয়া থানার মোনাবান্দা গ্রাম। সেই গ্রামে ১৯৯৫ সালে জন্ম লাকী বিশ্বাসের। যারা ডাক নাম রিয়া। বাবা ফুটবল কোচ শিশির কুমার বিশ্বাস। খুলনা আবাহনীর কোচ ছিলেন। এখন তিনি এলাকার অনুর্ধ-৫০ বছর বয়সী ফুটবলারদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। গৃহিণী মা মলিনা বিশ্বাস। বাবা যেহেতু ফুটবলার ছিলেন, সেহেতু মেয়েও ফুটবলে আসবে, সেটাই অনুমেয় ছিল। কিন্তু মেয়ে হলো শাটলার। এই ব্যতিক্রম ঘটনা কিভাবে ঘটলো? জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত আলাপনে লাকী মৃদু হেসে জানান, তার ব্যাডমিন্টনে আসার গল্প, ‘বাবাও একসময় ব্যাডমিন্টন খেলতেন। তার সঙ্গেই খেলতাম। এভাবেই এ খেলার হাতেখড়ি। তখন আমি সবে স্কুলে ভর্তি হয়েছি।’ লাকীর প্রতিযোগিতামূলক ব্যাডমিন্টন খেলা শুরু ২০০৯ সাল থেকে। সে বছর পাবনায় অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় জুনিয়র ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপ (অনুর্ধ-১৯)। তিনি অংশ নেন গোপালগঞ্জ জেলা দলের হয়ে। টুর্নামেন্টে এককে তেমন কিছু করতে না পারলেও দ্বৈতে শিউলী রায়ের সঙ্গে জুটি বেঁধে রানার্সআপ হন। লাকীর কোচ ছিলেন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন ও তারকা শাটলার জাহিদুল হক কচি। বর্তমান দল সেনাবাহিনীতে এলেন কবে ও কিভাবে? লাকীর জবাব, ‘আমার প্রথম ক্লাব ছিল সূর্যতরুণ ব্যাডমিন্টন ক্লাব। সূর্যতরুণে খেলি ২০১৩ সাল পর্যন্ত। ২০১৪ সালে যোগ দিই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ব্যাডমিন্টন দলে। ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সুপারিশে এবং আমার র‌্যাঙ্কিং দেখে সেনাবাহিনী আমাকে তাদের দলে নেয়। সেই থেকে এখনও আছি সেনাবাহিনীতেই।’ ব্যাডমিন্টনে লাকীর অন্য সাফল্যগুলোর মধ্যে আছে ২০১২ সালে অনুর্ধ-১৯ জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপে দ্বৈতে বিথী সরকারকে সঙ্গে নিয়ে রানার্সআপ হওয়া। এছাড়া এককে হন তৃতীয়। সর্বশেষ পারফর্মেন্স? গত অক্টোবরে সামার ওপেন (র‌্যাঙ্কিং) ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টে দ্বৈতের সেমিফাইনালে এলিনা-নাবিলা জুটির কাছে হেরে যান লাকী। তার পার্টনার ছিলেন সেনাবাহিনীর ইরিনা পারভীন রতœা। আর এককে হেরে যান প্রিকোয়ার্টার ফাইনালে। ঢাকার মিরপুরের বঙ্গবন্ধু কলেজে ডিগ্রী থার্ড ইয়ারে পড়া শিক্ষার্থী লাকীর আর কোন ভাই-বোন নেই। এ প্রসঙ্গে তার প্রতিক্রিয়া, ‘শুধু তাই নয়, আমি কন্যা সন্তান বলে কোন আক্ষেপ নেই আমার মা-বাবার। বরং তারা আমাকে নিয়ে গর্বিত।’ ব্যাডমিন্টন খেলা নিয়ে নিজের ভবিষ্যত প্রসঙ্গে লাকীর ভাষ্য, ‘জাতীয় পর্যায়ে একক ও দ্বৈতে চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও খেলার স্বপ্ন দেখি।’ বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের কার্যকলাপ নিয়ে অভিযোগও করলেন লাকী, ‘ফেডারেশন এমনিতেই ব্যাডমিন্টনের উন্নয়ন নিয়ে তেমন কাজ করে না। যাও একটু-আধটু করে, তা ছেলেদের নিয়েই বেশি করে। মেয়েদের ব্যাডমিন্টনে প্রাধান্য দিতেই চায় না! এছাড়া সুযোগ-সুবিধাও আমরা অনেক কম পাই। প্রাইজমানিও পেয়ে থাকি কম।’ লাকী আদর্শ শাটলার, একজন নয়, তিনজন! ‘দেশে আমার আদর্শ শাটলার অনেকেই। যেমন পুরুষদের মধ্যে আহসান হাবিব পরশ। মহিলাদের মধ্যে এলিনা সুলতানা এবং শাপলা আক্তার।’ কতদিন খেলতে চান ব্যাডমিন্টন, ‘যতদিন ফর্ম-ফিটনেস থাকবে, ততদিনই খেলার ইচ্ছে আছে।’ স্বগতোক্তি লাকীর। যদিও ক্যারিয়ার বেশিদিনের নয়, তারপরও সাত বছরের ক্ষুদ্র ক্যারিয়ারে এমন কোন ম্যাচ খেলেছেন কি যা স্মরণীয়? একটু ভেবে লাকী বলেন, ‘হ্যাঁ, এমন একটি ম্যাচ খেলেছি। ২০১৬ সাল। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ। আনসারের এক প্রতিপক্ষের সঙ্গে খেলছি। প্রথম গেম হেরে যাই। দ্বিতীয় গেমেও পিছিয়ে ছিলাম। কিন্তু ডিউজ করে জিতে যাই। তৃতীয় ও শেষ গেমে প্রথমে এগিয়ে গিয়েও একপর্যায়ে পিছিয়ে পড়ি। সেই অবস্থা থেকে ম্যাচে জিতে যাই।’
×