ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আহলে সুন্নাতের মহাসমাবেশ ১২ নবেম্বর

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৯ নভেম্বর ২০১৬

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আহলে সুন্নাতের মহাসমাবেশ ১২ নবেম্বর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী ১২ নবেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জঙ্গীবাদবিরোধী সুন্নি মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে দেশের সুন্নি সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ জোট আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দিয়েছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত সমন্বয় কমিটি। এদিকে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সংখ্যালঘুদের ওপর হামলায় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআতের কেউ জড়িত নয়। যারা মন্দির ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করেছে তারা ইসলামের শত্রু। হিন্দুদের মন্দির, ঘরবাড়িতে হামলা করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার পেছনে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করার দাবি জানিয়েছেন তারা। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত নেতৃবৃন্দ জঙ্গীদের ইসলামের শত্রু অভিহিত করে বলেছেন, সুন্নি ও সুফি ভাবধারার চরম শত্রু জঙ্গীবাদ এখন বাংলাদেশে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। সুন্নি ও সুফি চিন্তাধারার অনুসারীদের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হওয়া জঙ্গীবাদ রুখতে জাতীয় জাগরণ অনিবার্য হয়ে উঠেছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থ্পান করেন সংগঠনের সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার। আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ওলামা-মাশায়েখের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধান সমন্বয়ক আল্লামা এম এ মতিন, পীরে তরিকত মাওলানা আলহাজ হারুণুর রশিদ, আজকের সূর্যোদয়ের প্রধান সম্পাদক খোন্দকার মোজাম্মেল হক, আলহাজ মাওলানা আ.ন.ম মাসঊদ হোসাইন আল কাদেরী, সৈয়দ মুজাফফর আহমাদ, অধ্যক্ষ আবু জাফর হেলাল উদ্দীন, মুহাম্মদ নুরুল হক চিশতী, সাকিউল কাউসার, পীরজাদা মাহবুব উল্লাহ, গোলাম মাহমুদ ভূঁইয়া মানিক, আলহাজ মুহাম্মদ ফজলুল হক সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া, ছাদেকুর রহমান, মুহাম্মদ মাসুদ হুসাইন, মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বাবুল প্রমুখএ সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার বলেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জমাআত সমন্বয় কমিটি সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি, বিশ্বব্যাপী মুসলিম গণহত্যা বন্ধের দাবি এবং ইসলামের শান্তিময় বাণী সর্বস্তরের জনতার কাছে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ১২ নবেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জঙ্গীবাদবিরোধী সুন্নি মহাসমাবেশ আয়োজন করেছে। ওই মহাসমাবেশে কয়েক হাজার দরবার, খানকাহ, দরগাহ’র পীর-মাশায়েখ-সাজ্জাদানশীন এবং তাদের লাখ লাখ অনুসারী উপস্থিত হবে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে শত শত বছর ধরে চলমান ইহুদীবাদী ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতার এক অত্যাধুনিক জঘন্যতম অধ্যায়ের নাম তথাকথিত জঙ্গীবাদ। ইসলাম ও মুসলমানদের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতকে সর্বনাশ করতে পাশ্চাত্যে এ অভিনব সন্ত্রাসবাদের প্রজনন হচ্ছে। ভারতবর্ষ খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি (রা)’র বিজয়ের পর সাতশ’ বছর মুসলমানদের হাতে শাসিত হলেও সেখানে হিন্দুরাই রয়ে গেছে সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং এখনো সেখানে মসজিদের চেয়ে মন্দিরের সংখ্যা অনেক বেশি। ইসলামে জবরদস্তি থাকলে এ পরিসংখ্যান হতো বিপরীত। সুতরাং ইসলামের এমন উদার নীতির ধারক সূফীবাদী সুন্নি ওলামা-মাশায়েখরাই পারেন জঙ্গীবাদের অসারতা প্রমাণ করে দেশ ও ইসলামের জন্য শান্তির বাণী প্রতিষ্ঠা করতে। এক প্রশ্নের জবাবে এ্যাডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর ও নাসিরনগরের ঘটনায় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআতের কেউ জড়িত নয়। দেশে আবহমানকাল ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য রয়েছে। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে যারা মন্দির ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করেছে তারা ইসলামের শত্রু। ইসলাম কোন ধর্মের ওপর হামলা সমর্থন করে না। হিন্দুদের মন্দির, ঘরবাড়িতে হামলা করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার পেছনে কারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করতে হবে। প্রধান সমন্বয়ক মাওলানা এম এ মতিন বলেন, এ পর্যন্ত এ সুফিবাদীরা শুরু থেকেই জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট ভূমিকা পালন করে আসছে এবং ২০১৩ সনের ২০ এপ্রিল চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে দশ লাখ মানুষের মহাসমাবেশ থেকে জঙ্গীবাদের স্বরূপ উন্মোচন করে দিয়েছিল। আগামী ১২ নবেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসমাবেশ জঙ্গীবাদবিরোধী সে মহাসমাবেশের ধারাবাহিকতা। তিনি আরও বলেন, সুন্নি ও সুফি ভাবধারার চরম শত্রু জঙ্গীবাদ এখন বাংলাদেশে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। সুন্নি ও সুফি চিন্তাধারার অনুসারীদের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হওয়া জঙ্গীবাদ রুখতে জাতীয় জাগরণ অনিবার্য হয়ে উঠেছে। তিনি আরও বলেন, এ মুহূর্তে জঙ্গীবাদ মোকাবেলাই হবে আমাদের দেশের নাগরিকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আর এই জন্য সরকার ও জনগণ একসঙ্গে কাজ করতে হবে। জনমত গড়তেই ১২ তারিখ মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জঙ্গীবাদবিরোধী মহাসমাবেশের উদ্দেশ্য হলো সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করা। ইসলাম জঙ্গীবাদকে সমর্থন করে না উল্লেখ করে এ ইসলামী নেতা বলেন, আমাদের উদার মুসলিম দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ নিয়ে চলছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা চক্রান্ত। সহনশীল ঐতিহ্যের মুসলমানদের নব্য সন্ত্রাসবাদী বানিয়ে- তাদের জঙ্গী নামে আখ্যায়িত করা হচ্ছে- যা বরাবরই ইহুদীবাদী ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা মাত্র। তারা ইসলাম ও মুসলমানদের ধ্বংস করতেই এ নতুন খেলায় মেতে ওঠেছে যা আজ কারো অজানা নয়। বাংলাদেশে সংঘটিত সাম্প্রতিক কয়েকটি জঙ্গী হামলার নতুন রূপ দেখে পুলিশ প্রশাসন স্বীকার করেছে যে, এসব জঙ্গীদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক রয়েছে- যা রীতিমতো আতংকের বিষয়। সন্ত্রাসবাদের এ করাল গ্রাস থেকে কেউ মুক্ত নয়- যে কোন সময় যে কোন স্থানে হামলা হতে পারে কী মসজিদ- মন্দির, বাজার, রেস্টুরেন্ট, ঈদগাহ্, স্টেশন সবখানে।
×