ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে বিএনএস ঈশা খান ঘাঁটিতে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি

সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও সমুদ্র সম্পদ আহরণে চাই শক্তিশালী নৌবাহিনী

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৯ নভেম্বর ২০১৬

সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও সমুদ্র সম্পদ আহরণে চাই শক্তিশালী নৌবাহিনী

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, বর্তমান সরকার নৌবাহিনীকে আধুনিক, ত্রিমাত্রিক ও যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। আমাদের ৭১০ কিলোমিটার উপকূল এলাকার প্রায় ৩ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জীবিকা নির্বাহের জন্য সমুদ্রের ওপর নির্ভরশীল। দেশের বাণিজ্যের ৯০ ভাগেরও বেশি সমুদ্র পথেই পরিচালিত হয়। এছাড়া সমুদ্র এলাকায় রয়েছে তেল গ্যাসের বিশাল ভা-ার, যা দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। সার্বভৌমত্ব রক্ষা, সম্পদ আহরণ ও জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমুদ্র এলাকায় নিরাপত্তা বিধানে শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তোলার বিকল্প নেই। মঙ্গলবার চট্টগ্রামে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঘাঁটি ঈশা খানকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। তিনি বলেন, ব্লু ইকোনমি জাতির ভাগ্য উন্নয়নে অপরিসীম অবদান রাখতে সক্ষম। সমুদ্র সম্পদ আহরণ এবং এর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ তাঁর বক্তব্যে মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসামান্য অবদানের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনায় একটি আধুনিক নৌবাহিনী গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। এজন্য স্বাধীনতার পরে শত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর উন্নয়নের জন্য বেশ কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ সংগ্রহের ব্যবস্থা করেন এবং নৌবাহিনীর ঘাঁটিসমূহকে একযোগে কমিশন্ড করেন। রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ইতোমধ্যে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ভূ-খ-ের প্রায় সমপরিমাণ সমুদ্রসীমা আমরা অর্জন করেছি। বহির্বিশ্বের সঙ্গে দেশের মোট বাণিজ্যের ৯০ ভাগেরও বেশি সমুদ্রপথেই পরিচালিত হয়ে থাকে এবং দেশের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই সমুদ্রের ওপর নির্ভরশীল। তাই সমুদ্র সীমানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত প্রয়োজন। আর আমাদের নৌসদস্যরা বিভিন্ন প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে সার্বক্ষণিক এই সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করছে। তিনি বলেন, নৌবাহিনীকে একটি কার্যকর ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার ইতোমধ্যেই স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে। আমাদের সমুদ্র অঞ্চলে রয়েছে অনাবিষ্কৃত মূল্যবান সম্পদ। এসব সম্পদ রক্ষা, আহরণ ও সমুদ্র এলাকার সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী, আধুনিক ও নির্ভরযোগ্য নৌবাহিনী গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। নৌবাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, বিগত দিনগুলোতে আপনারা দেশ গঠনমূলক কর্মকা-ে অংশগ্রহণ করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিভিন্ন পরিস্থিতি মোকাবেলায় নৌবাহিনীর তৎপরতা সকলের প্রশংসা অর্জন করেছে। পরিবেশ রক্ষাসহ অন্যান্য জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কর্মকা-ে ভবিষ্যতেও নৌবাহিনী বলিষ্ঠ অবদান রাখবে বলে রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন। উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর বন্দর নগরী চট্টগ্রামে অবস্থিত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সর্ববৃহৎ ঘাঁটি বানৌজা ঈশা খানের নামকরণ করা হয় ‘চট্টগ্রাম নৌঘাঁটি’। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় বীর ঈশা খানের নামে এই ঘাঁটি পুনঃকমিশন্ড করেন এবং নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণে অসাধারণ ভূমিকা রাখার জন্য সেসময় বানৌজা ঈশা খানকে নেভাল এনসাইন প্রদান করেন। যাত্রা শুরুর পর থেকে এই ঘাঁটি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ও নাবিকদের গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ এবং অপারেশনাল ও লজিস্টিক কাজে অনন্য সহায়তা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। এর আগে মঙ্গলবার সকালে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ চট্টগ্রামের বানৌজা ঈশা খান ঘাঁটিতে এসে পৌঁছলে নৌবাহিনী প্রধান এ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ তাঁকে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্যবৃন্দ, সেনা ও বিমান বাহিনী প্রধান, নৌ সদর দফতরের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ, চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের সকল নৌ প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ, মুক্তিযুদ্ধের নৌ কমান্ডোসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, দেশী-বিদেশী কূটনীতিকবৃন্দ ও উর্ধতন সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
×