ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা মহানগরীর বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

৪০ শতাংশ এলাকা কোটার বিধান রেখে ভর্তি নীতিমালা ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৯ নভেম্বর ২০১৬

৪০ শতাংশ এলাকা কোটার বিধান রেখে ভর্তি নীতিমালা ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা মহানগরীর বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তিতে এবারও ৪০ শতাংশ ‘এলাকা কোটা’র বিধান রেখে নতুন ভর্তি নীতিমালা জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নীতিমালার আওতায় ঢাকা মহানগরী ছাড়াও দেশের সকল বেসরকারী স্কুল-কলেজে প্রাথমিক, নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে হবে। গত বছর প্রথমবারের মতো ঢাকা মহানগরীর সরকারী-বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তিতে ৪০ শতাংশ এলাকা কোটা চালু করে সরকার। মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগরীর বেসরকারী স্কুলগুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে স্কুল সংলগ্ন ক্যাচমেন্ট এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করতে হবে। অবশিষ্ট আসন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তবে একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পঞ্চম শ্রেণী থেকে ষষ্ঠ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে এলাকা কোটা প্রযোজ্য হবে না। নীতিমালা অনুযায়ী, একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একই ক্যাচমেন্ট এলাকায় থাকলে শিক্ষার্থীরা উভয় প্রতিষ্ঠানেই ভর্তির আবেদন করতে পারবে। পরিচালনা পর্যদের সহায়তা নিয়ে ঢাকা মহানগরীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের স্কুলের ক্যাচমেন্ট এরিয়া নির্ধারণ করতে বলেছে মন্ত্রণালয়। নীতিমালা অনুযায়ী, ক্যাচমেন্ট এলাকা নির্ধারণে একাধিক স্কুলের মধ্যে জটিলতা দেখা দিলে থানা/উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তার সমাধান করবেন। মন্ত্রণালয় বলছে, ক্যাচমেন্ট এলাকা নির্ধারণে কোন এলাকা যেন বাদ না পড়ে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। ক্যাচমেন্ট এলাকা নিয়ে থানা/উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার আদেশে কেউ অসন্তুষ্ট হলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে আবেদন করা যাবে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার আদেশই চূড়ান্ত। স্কুলে ভর্তি বিজ্ঞপ্তির তারিখে শিক্ষার্থী যে এলাকায় বসবাস করবে সেই এলাকায়ই তার ক্যাচমেন্ট এরিয়া হিসেবে বিবেচিত হবে। নীমিতালা অনুযায়ী প্রথম শ্রেণীতে অবশ্যই লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী নির্বাচন করতে হবে। লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের তালিকা ছাড়াও অপেক্ষমাণ তালিকা করতে হবে। নির্বাচিত শিক্ষার্থী নির্ধারিত তারিখের মধ্যে ভর্তি না হলে এই অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে। দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণীর শূন্য আসনে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাক্রম অনুসারে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী বাছাই করতে হবে। আর নবম শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে হবে জেএসসি-জেডিসির ফলের ভিত্তিতে। প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির জন্য শিশুর বয়স কমপক্ষে ছয় বছর হতে হবে। এই বয়স যাচাইয়ে ভর্তির আবেদন ফরমের সঙ্গে জন্ম নিবন্ধন সনদের সত্যায়িত কপি জমা দিতে বলেছে সরকার। শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগে পরিচালনা পর্যদ ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ও সময় নির্ধারণ করবে। তবে একই ক্যাচমেন্ট এলাকার ভর্তি পরীক্ষা ভিন্ন ভিন্ন তারিখে নিতে ঢাকা মহানগরীর বিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচী সংশ্লিষ্ট থানা বা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নির্ধারণ করবেন। ভর্তির জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটনসহ এমপিওভুক্ত, আংশিক এমপিওভুক্ত এবং এমপিও বহির্ভূত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবেদন ফরমের দাম হবে সর্বোচ্চ দুইশ’ টাকা। মফস্বল এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে সেশন ফিসহ সর্বোচ্চ ভর্তি ফি ৫০০ টাকা, পৌর (উপজেলা) এলাকায় এক হাজার টাকা, পৌর (জেলা সদর) এলকায় দুই হাজার টাকা এবং ঢাকা ব্যতীত অন্য মেট্রোপলিটন এলাকায় তিন হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। নীমিমালা অনুযায়ী, আর ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থী ভর্তিতে পাঁচ হাজার টাকা এবং আংশিক এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান আট হাজার টাকা এবং ইংরেজী মাধ্যমের প্রতিষ্ঠান ১০ হাজার টাকার বেশি আদায় করতে পারবে না। উন্নয়ন খাতে কোন প্রতিষ্ঠান তিন হাজার টাকার বেশি আদায় করতে পারবে না উল্লেখ করে নীতিমালায় বলা হয়েছে, একই প্রতিষ্ঠান থেকে বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের এক শ্রেণী থেকে পরের শ্রেণীতে ভর্তিতে পুনঃভর্তির ফি নেয়া গেলেও সেশনচার্জ নেয়া যাবে না। ভর্তি ফরম এবং ভর্তি ফি বাবদ সরকার নির্ধারিত অর্থের অতিরিক্ত অর্থ আদায় করলে এমপিও বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পাওয়া না গেলে তাদের নাতি-নাতনিদের জন্য যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে পাঁচ শতাংশ কোটা রাখতে হবে। প্রবন্ধীদের বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই শতাংশ কোটা। লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে অবস্থারত সব শিশুকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়ন সাপেক্ষে ভর্তি করাতে হবে উল্লেখ করে নীতিমালায় বলা হয়েছে, যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে তাদের জন্য শূন্য আসনের এক শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকবে। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের ভর্তিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার প্রতিষ্ঠানে দুই শতাংশ কোটা রাখা হয়েছে। কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহোদর/সহোদরা বা যমজ ভাই/বোন যদি আগে থেকেই অধ্যয়ন করে তাদের আসন শূন্য থাকা সাপেক্ষে ভর্তিতে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তবে এই সুবিধা কোন দম্পতির সর্বোচ্চ দুই সন্তারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক, কর্মচারী এবং এর পরিচালনা পর্যদের সদস্যদের সন্তানদের ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ রাখা হলেও কোন কোটা পাবে না তারা। উল্লেখ্য, ঢাকা মহানগরী, জেলা এবং উপজেলা পর্য়ায়ে শিক্ষার্থী ভর্তিতে তিনটি আলাদা কমিটিও গঠন করে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
×