স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, দেশে কোন ধরনের সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে দেয়া হবে না। মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাই মিলে বাংলাদেশ। যারা ধর্মের নামে নাসিরনগরে তা-ব চালিয়েছেন তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। সকল অপরাধীকে খুঁজে বের করা হবে। দেশের উন্নতিকে বাধাগ্রস্ত করতেই এমন সাম্প্রদায়িক তা-ব চালানো হয়। বাংলাদেশ হলো অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটি হৃদয়ে ধারণ করেন। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে জেলা পুলিশ আয়োজিত সর্বদলীয় সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, আমরা কোন ঘটনাকে ছোট মনে করি না। কোন ধর্মকে অগ্রাহ্য করি না। তবুও কেন রামুর মতো ঘটনা আমাদের বার বার দেখতে হচ্ছে। সেই কারণগুলো আমরা খুঁজে বের করছি। এসবের মূল কারণ হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশকে যেভাবে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন সেই উন্নয়নের ধারাকে বিপর্যস্ত করার জন্যই এসব হামলার ঘটনা ঘটছে। আমাদের সংবিধান স্পষ্ট করে বলেছে অন্যের বিশ্বাসের ওপর কোনভাবেই আঘাত করা যাবে না। আগুন সন্ত্রাস, বিদেশী হত্যা, ধর্মগুরুদের হত্যা প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্তে ব্যর্থ হয়ে একটি গোষ্ঠী নতুন করে সারাদেশে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। দেশে সংখ্যালঘু বলতে কেউ নেই। যারা জঙ্গী তারাই সংখ্যালঘু। যারা ইসলামের নামে মানুষ হত্যা করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে তারাই সংখ্যালঘু। আমরা সবাই বাংলাদেশী। সবাই বাঙালি। এসব সংখ্যালঘুরা আস্তে আস্তে গুঁটিয়ে যাচ্ছে। মানবতার জয় হচ্ছে। ধর্মের জয় হচ্ছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হককে সৎ ও দক্ষ হিসেবে অবহিত করে বলেন, তার সততার ইতিহাস দীর্ঘদিনের।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক বলেন, ঘটনার দিন পাশের জেলার মাধবপুর উপজেলা থেকে ১৪টি ট্রাকে করে হাফপ্যান্ট পরা লোকজন এসে হামলা করেছে। কারা এই ট্রাকের ভাড়া দিল লোকজন আনল তাদের খোঁজে বের করুন। মিডিয়া সবসময় চায় নেগেটিভ নিউজ। এ ঘটনায় তিলকে তাল করা হয়েছে। সমাবেশে বিশেষ অতিথি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার বলেন, এখানে যারা তা-ব চালিয়েছে তারা পশুর চেয়ে অধম। তাদের দেশ থেকে নির্মূল করতে হবে। তারা আমাদের হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যের চেতনাতে আঘাত করেছে। পুলিশের আইজিপি একেএম শহীদুল হক বলেন, আমি নিজে এ মামলা পর্যবেক্ষণ করছি। যারা হামলা করেছে তারা কোন ধর্মের লোক নয়। যারা ওই দিন সমাবেশ করেছে তাদেরও দায়িত্ব নিতে হবে। এ বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। র্যাব ডিজি বেনজীর আহমেদ বলেন, আসেন আমরা পেছনের মূল খেলোয়াড়দের ধরি। আমরা বলেছিলাম, ইঞ্চি ইঞ্চি মাটি খুঁড়ে জঙ্গীদের বের করে আনব। আজ আমরা জঙ্গীদের ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছি। এ ধরনের হামলা করতে আসলে কেউ যাতে ফিরে যেতে না পারে তা এলাকাবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছায়েদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় সুধী সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এসবি) জাবেদ পাটোয়ারী, চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোহাঃ শফিকুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেশান্দজী মহারাজ, কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত সেন দিপু, খ্রিস্টান এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও, ইসকনের উপদেষ্টা কৃষ্ণ ক্রীর্তন ব্রহ্মচারী, জামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার মোহাদ্দেস ও দারুল আহকাম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল সাজেদুর রহমান প্রমুখ। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাসিরনগরে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর পরিদর্শন করেন।
