ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিনা বিচারে ১৬ বছর কেটে গেল জেলে-অবশেষে জামিন

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৯ নভেম্বর ২০১৬

বিনা বিচারে ১৬ বছর কেটে গেল জেলে-অবশেষে জামিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দীর্ঘ ২২ বছর আগের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ১৬ বছর ধরে বিনা বিচারে কারাগারে থাকা মোঃ শিপনকে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে শিপনের বিরুদ্ধে দায়ের করা হত্যা মামলা ৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে ঢাকার বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও জেবিএম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে শিপনের পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট কুমার দেবুল দে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল একেএম জহিরুল হক। আদালত আদেশে বলেছেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের দায়িত্ব দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করা। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র এবং আদালত ব্যর্থ হয়েছে। এটা আমাদের সবার জন্য লজ্জাকর। এই দায় রাষ্ট্রের এবং বিচারকের।’ এ সময় শিপন আবেদন করলে ঢাকা জেলা প্রশাসককে তার পুনর্বাসন করতে আদালত আদেশ দেন। এ ঘটনা সবার নজরে আনার জন্য বেসরকারী টিভি চ্যানেলকে ধন্যবাদ জানান হাইকোর্ট। আদালত আরও বলেন, আদেশের কপি পাওয়া সাপেক্ষে বিচারিক আদালত ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করবে। পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মামলা নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। যদি নতুন কোনো তথ্যপ্রমাণ না পাওয়া যায়, তাহলে যেসব তথ্যপ্রমাণ আছে তার মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি করবে। মামলার যাবতীয় সহায়তা করতে ঢাকা লিগ্যাল এইড অফিসকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। শিপনকে নিয়ে একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলের ওই প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে এনেছিলেন সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী কুমার দেবুল দে। আদেশের পর আইনজীবী কুমার দেবুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদেশে আদালত বলেছে, ৬০ দিনের মধ্যে এ মামলার বিচার শেষ করতে হবে। সেই পর্যন্ত শিপন জামিনে থাকবেন। ‘জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর শিপনের কোথাও আশ্রয় না থাকলে তার পুনর্বাসনের জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করতে বলা হয়েছে।’ ৩০ অক্টোবর গণমাধ্যমের ওই প্রতিবেদন নজরে আসার পর আদালত ৮ নবেম্বর শিপনকে হাজির করতে কারা কর্তৃপক্ষকে সময় দিয়েছিল। ঘটনার বিবরণীতে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে দুই মহল্লার মধ্যে মারামারিতে মাহতাব নামে এক ব্যক্তি খুন হন। এ খুনের ঘটনায় মোঃ জাবেদ বাদী হয়ে সূত্রাপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় দুই নম্বর আসামি করা হয় মোঃ শিপনকে। মামলার এজাহারে তার পিতার নাম ছিল অজ্ঞাত। পরে ১৯৯৫ সালে দেয়া অভিযোগপত্রে বাবার নাম উল্লেখ করা হয় মোঃ রফিক। ঠিকানা উল্লেখ করা হয় ৫৯, গোয়ালঘাট লেন, সূত্রাপুর। ১৯৯৫ সালে মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হয়। পরবর্তীতে ২০০০ সালের ৭ নবেম্বর শিপনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর থেকে সে কাশিমপুর কারাগারে বন্দী রয়েছেন। অভিযোগপত্র দাখিলের ৫ বছর পর ২০০১ সালে মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হয়। বর্তমানে ঢাকার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে মামলাটি বিচারাধীন। অভিযোগ গঠনের পর এ পর্যন্ত সাক্ষী নেয়া হয়েছে দুজনের। মোট সাক্ষী রয়েছেন ১২ জন। আগামী ১১ নবেম্বর এই মামলার পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে। হাইকোর্ট আদেশে বলেছেন, এই মামলার পিপি মামলা নিষ্পত্তি করতে উদ্যোগ নেবেন। যদি নতুন করে কোন তথ্যপ্রমাণ না পাওয়া যায়, তাহলে যে তথ্যপ্রমাণ আছে তার মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি করতে বলেছে হাইকোর্ট। মামলার যাবতীয় সহায়তা করার জন্য ঢাকা লিগ্যাল এইড অফিসকে নির্দেশও দেয়া হয়েছে। আদেশের আগে আদালত শিপনের কাছে জানতে চান, জামিন পেলে তিনি কোথায় যাবেন? তিনি বলেন, মা-বাবার কাছে যাব। মা-বাবার সঙ্গে যোগাযোগ আছে কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে শিপন বলেন, যোগাযোগ নেই। আর কে আছে, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছয় বোন রয়েছেন। তিনিই একমাত্র ভাই। বোনদের সঙ্গেও যোগাযোগ নেই। তবে মা-বাবা মারা গেলে খবর পেতেন বলে জানান শিপন। এটাও জানান, তিনি বাড়িতে গিয়ে মা-বাবাকে খুঁজবেন। আদালত জানতে চান, বিচারিক আদালতে শিপনের পক্ষে কোন আইনজীবী আছেন কিনা। উত্তরে শিপন বলেন, না। গত ২৬ অক্টোবর বেসরকারী একটি টেলিভিশন চ্যানেলে এ বিষয়ে একটি সংবাদ প্রচারিত হয়। ৩০ অক্টোবর আইনজীবী কুুমার দেবুল দে আদালতের নজরে আনলে শিপনের জামিন প্রশ্নে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। হাইকোর্ট ওই দিনই হত্যা মামলার নথি তলব করেন। একই সঙ্গে শিপনকে ৮ নবেম্বর আদালতে হাজির করতে কাশিমপুর কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। মঙ্গলবার আদালত শুনানি নিয়ে আদেশ দেন। একইভাবে আদালত শিপনের বক্তব্যও শোনেন ।
×