ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হিন্দুদের বাড়িঘর মন্দিরে হামলায় জড়িতদের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার দাবি

প্রকাশিত: ০৫:১১, ৯ নভেম্বর ২০১৬

হিন্দুদের বাড়িঘর মন্দিরে হামলায় জড়িতদের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও বসতবাড়িতে হামলা, মারধর, লুটপাট, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হককে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। আপীল বিভাগের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে নাসিরনগর ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন এবং প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ও নেপথ্য গডফাদারদের মুখোশ উন্মোচনের দাবি জানান তারা। মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী সাংবাদিক মঞ্চ’ আয়োজিত এক মানববন্ধন ও সংহতি সমাবেশে সরকারের উদ্দেশে তারা এসব দাবি জানান। একই সঙ্গে ‘লোক দেখানো’ ব্যবস্থা গ্রহণের নামে নিরীহ-নিরপরাধ ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধের দাবি জানান কর্মসূচীতে অংশ নেয়া সাংবাদিক, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিরা। ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, সারাদেশের প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীতে ‘পাকিস্তানের প্রেতাত্মা’ ভর করেছে। সরকারী দল আওয়ামী লীগেও তারা অনুপ্রবেশ করছে। প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বলেন, একাত্তরের পরাজিত শত্রু জামায়াতের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধায় বিএনপি এখন ‘জামায়াতী আদর্শে’ আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়েছে। এর খেসারত হিসেবে বিএনপিকে জামায়াত ত্যাগ করে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যদিকে, একাধিক যুদ্ধাপরাধীসহ চিহ্নিত জামায়াত-শিবির ক্যাডার এখন দলে দলে সরকারী দলে যোগ দেয়ায় আওয়ামী লীগের একাংশ ইতোমধ্যে জামায়াতীকরণ হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘আমার (বঙ্গবন্ধু) বড় ভুল হয়েছে পাকিস্তানী প্রশাসন দিয়ে স্বাধীন দেশ পরিচালনা করা।’ এখন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বড় ভুল হচ্ছে, আওয়ামী লীগে জামায়াত-শিবিরের লোকজনকে প্রবেশের সুযোগ দিয়ে এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে পাকিস্তানী ভাবাদর্শের কর্মকর্তাদের রেখে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ পরিচালনা করা। গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতিম-লীর সদস্য নুরুর রহমান সেলিম অভিযোগ করেন, হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলার আগে দুটি মৌলবাদী গোষ্ঠীকে সমাবেশের অনুমতি দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৌধুরী মোয়াজ্জেম আহমেদ ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের সাম্প্রদায়িক হামলায় উৎসাহ যুগিয়েছেন। সিপিবি কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, নাসিরনগরে সাম্প্রদায়িক হামলায় স্থানীয় প্রশাসনের যেমন দায়ভার রয়েছে, তেমনি হামলার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টিসহ সেখানকার জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকাও যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি শাহেদ চৌধুরী অবিলম্বে মন্ত্রিপরিষদ থেকে নাসিরনগরের সাংসদ ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হককে বহিষ্কারের দাবি জানান। সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী সাংবাদিক মঞ্চের সংগঠক ও পিটিবিনিউজবিডি.কমের প্রধান সম্পাদক আশীষ কুমার দের সভাপতিত্বে ও জনকণ্ঠের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রাজন ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় মানববন্ধন ও সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, তুসার রেহমান, সেকেন্দার হায়াৎ, অমিয় ঘটক পুলক, কুদ্দুস আফ্রাদ, সাজ্জাদ হোসেন, তপন বিশ্বাস, নিখিল ভদ্র, অপূর্ব কুমার, লতিফুল বারি হামিম, আজিজুল পারভেজ, শাহীন রহমান, তৌহিদুর রহমান প্রমুখ।
×