ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মোদি-তেরেসা মে বৈঠক ॥ মুম্বাই হামলায় জড়িতদের বিচার না করায় পাকিস্তানের সমালোচনা

সন্ত্রাস দমনে ঐকমত্য

প্রকাশিত: ০৪:০০, ৯ নভেম্বর ২০১৬

সন্ত্রাস দমনে ঐকমত্য

ভারত ও ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীরা সন্ত্রাস দমন ও নিরাপত্তা ইস্যুতে পরস্পরকে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছেন। এছাড়া মুম্বাই হামলায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় না করানোয় পাকিস্তানের সমালোচনা করেছেন। সোমবার নয়াদিল্লীতে ভারত সফররত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’র সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। রবিবার তিন দিনের সফরে মে ভারতে যান। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া ও এনডিটিভি অনলাইনের। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এটাই মে’র প্রথম ভারত সফর। এই সফরে দুই দেশের নেতৃবৃন্দ সন্ত্রাস দমন ও নিরাপত্তা ইস্যুতে পরস্পরকে সহযোগিতা আরও জোরদার করতে একমত হয়েছেন। সোমবার দুই নেতার মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠকটি হয়। সন্দেহভাজন অপরাধী বিনিময়ের উদ্দেশে দুই পক্ষের মধ্যে এ বৈঠকে একটি তালিকা বিনিময় হয়। তবে বিজয় মালিয়া, ললিত মোদি এবং ক্রিশিয়ান মিচেলের নাম এ তালিকা থেকে বাদ রাখা হয়েছে। তাদের ভারতীয় আইনে বিচার করা হতে পাারে। এছাড়া দেশ দুটির মধ্যে অমীমাংসিত প্রত্যর্পণ ইস্যুগুলো সমাধান করাসহ একে অন্যের ছদ্মবেশী ও পলাতক অপরাধীদের আশ্রয় না দেয়ার ব্যাপারেও ব্রিটেন ও ভারত রাজি হয়েছে। উভয় প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক শেষে দেয়া যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, দুই দেশ কেবল সন্ত্রাসী, সন্ত্রাসী সংগঠন বা নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে একমত হয়নি বরং সন্ত্রাসবাদে উৎসাহদাতা, অর্থায়নকারী ও সহযোগিতাকারীদের আইনের আওতায় আনার বিষয়েও রাজি হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে যে, ভাল ও খারাপ বলে সন্ত্রাসীদের মধ্যে পার্থক্য করার কোন সুযোগ নেই। দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, অগ্রগতি ও সন্ত্রাস মুক্ত রাখতে একযোগে কাজ করে যেতে দুই দেশ একমত হয়েছে। এতে ২০০৮ সালে মুম্বাই হামলায় জড়িতদের বিচারে ব্যর্থতার জন্য পাকিস্তানের সমালোচনা করা হয়। যুক্তরাজ্যের নাগরিক বিজয় মালিয়া ও লোলিত মোদি এখন অর্থ পাচার মামলায় ভারতে বিচারের সম্মুখীন হয়েছেন। উভয় দেশের শীর্ষ বৈঠকের আগে কর্মকর্তা পর্যায়ে তাদের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তাদের নাম প্রত্যর্পণ তালিকা থেকে বাদ রাখতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। এছাড়া প্রত্যর্পণ বিষয়ক যে কোন অনুরোধই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে বলে যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এই প্রথম ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের একটি দেশ সফর করলেন মে। তার এই সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য এটি প্রমাণ করা যে, ব্রেক্সিট বা ইইউ থেকে ব্রিটেন বেরিয়ে গেলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্রিটেনের প্রভাব অটুট থাকবে। এছাড়া গত বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্রিটেন সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক যে নতুন মাত্রা পায় তাকে এগিয়ে নেয়াও তার এ সফরের একটি লক্ষ্য ছিল। ব্রিটেনে যদি আসলেই ইইউ ছেড়ে বেরিয়ে আসে তবে সেক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ব্রিটেনকে বিশেষ অর্থনৈতিক সুবিধা দেবে। বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্র সহযোগিতা বাড়ানোর মতো ভারত-যুক্তরাজ্য সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে প্রায় ৪০ জন ব্যবসায়িক প্রতিনিধি নিয়ে ভারত সফর করেন মে। দুদেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি আদান প্রদান ও বিশেষজ্ঞ বিনিময়ের বিষয়ে ব্রিটেনের দেয়া প্রস্তাব নিয়ে পর্যালোচনা করতে চলতি আরও পরের দিকে একটি ভারত-যুক্তরাজ্য প্রতিরক্ষা পরামর্শক গ্রুপ বৈঠকে বসছে। তেরেসা মে এমন এক সময় ভারত সফর করছেন যখন যুক্তরাজ্যে গণভোটে ব্রেক্সিটের পক্ষে রায় আসার পর কঠিন সময় পার করছে দেশটির অর্থনীতি। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে ব্রিটিশ পাউন্ডের দর প্রায় ২০ শতাংশ পড়ে গেছে। কর্মসংস্থানের হারও নিম্নমুখী হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার ব্রিটেনের উদ্দেশে ভারত ছাড়ার আগে মে’ বেঙ্গালুরুর আইটি সিটি পরিদর্শন করেন।
×