ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন

নেশার জগতে আরেক নাম ‘ঝাঁকি’

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ৮ নভেম্বর ২০১৬

নেশার জগতে আরেক নাম ‘ঝাঁকি’

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ মদ, গাঁজা, ফেন্সিডিল, ইয়াবার পরে নেশার জগতে নতুন নাম সংযোজন হয়েছে ‘ঝাঁকি’। গলাচিপা ও রাঙ্গাবালীসহ পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন এলাকায় চলছে এর ছড়াছড়ি। দামে সস্তা। বহনে ঝুঁকি কম। উপকরণ মেলে হাতের কাছে। এমন আরও নানা সুবিধার কারণে নেশাখোরদের কাছে এটির চাহিদা এখন তুঙ্গে। দিন দিন ছড়িয়ে পড়ছে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায়। বাড়ছে আসক্তদের সংখ্যা। বিশেষ করে এক শ্রেণীর তরুণ ও যুবকদের ঝাকির প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে, যা অভিভাবকদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। চিকিৎসকরাও এর ভয়াবহতায় আঁতকে উঠছেন। কিন্তু নেশা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্টদের নেই আশাব্যঞ্জক তৎপরতা। বিভিন্ন পর্যায়ে অনুসন্ধানে এসব তথ্য মিলেছে। পটুয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চলে মদ, গাঁজা, ফেন্সিডিল, ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের নেশার বিস্তার ঘটেছে বহু আগে। এসব নেশা দ্রব্য বাজারজাত করার জন্য প্রায় প্রত্যেকটি গ্রাম ও হাটবাজারে রয়েছে এজেন্ট ব্যবস্থা। শহর, বন্দর ও গ্রামাঞ্চলের হাটবাজার ছেয়ে গেছে বিভিন্ন ধরনের নেশাদ্রব্যে। সর্বত্র মাদকের ব্যবসা চলছে রমরমা। এজেন্টরা কখনও হাত ঘুরিয়ে আবার কখনও নিজেরাই আসক্তদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে নেশাদ্রব্য। অনুসন্ধানে জানা গেছে, নেশার এসব দ্রব্যের দাম যেমন তুলনামূলক কিছুটা বেশি। বহনেও রয়েছে ঝুঁকি। মাঝে মধ্যেই পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে মাদকের চালান। ঝুঁকি কাটাতে তাই মাদকসেবীরা নিজেরা নেশার নতুন জগত আবিষ্কার করে নিয়েছে। যার নাম ঝাকি। আরও জানা গেছে, আসক্তরা নিজেরাই নিজেদের প্রয়োজন মতো ঝাকি তৈরি করে নিচ্ছে। ঝাঁকি তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ দিয়ে। গলাচিপা শহরের হাসপাতাল রোডের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ওষুধ বিক্রেতা জানান, এক বোতল ঝাঁকি তৈরি করতে এক পাতা সেডিল, ২-৩টি ইকাপ ট্যাবলেট, ৪টি সিভিট, ৫টি ইপাম, ২টি ডেকাসন ও ৪টি বি-৫০ ফোর্ট ওষুধ একত্রে গুঁড়ো করে ভালভাবে মিশিয়ে নেয়া হয়। এরপর এক বোতল টাইগার জুস বা এ জাতীয় অন্য যে কোন ফলের জুসের সঙ্গে ওই ওষুধ গুঁড়া মেশানো হয়। মেশানোর পর অনেকক্ষণ ঝাঁকাতে হয়। ঝাঁকিয়ে তৈরি করার কারণেই এটি ‘ঝাঁকি’ হিসেবে বেশি পরিচিতি লাভ করেছে। এক বোতল ঝাঁকি তৈরিতে এক শ’ টাকাও লাগে না। তার ওপর ঝাকির উপকরণ মেলে হাতের কাছের যে কোন ফার্মেসিতে। নেই বহনের ঝুঁকি। ফলে নেশাগ্রস্তদের কাছে এর কদর এখন তুঙ্গে। ওষুধ বিক্রেতা আরও জানান, গত কয়েক মাসে ঝাঁকি প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতেও মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। যত্রতত্র ওষুধের দোকান থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ঝাঁকির বিরূপ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মনিরুল ইসলাম জানান, এ ধরনের ওষুধ একসঙ্গে সেবন করা মোটেই ঠিক না। এতে কিডনি ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে। লিভার নষ্ট হবে। ব্রেন নিস্তেজ হয়ে যাবে অর্থাৎ স্মৃতিশক্তি লোপ পাবে। এতে এক সময় আসক্ত ব্যক্তি কাউকেই চিনবে না। এছাড়া যে কোন সময় মৃত্যু পর্র্যন্ত ঘটতে পারে।
×