ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাবাদার দুরন্ত বোলিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার দারুণ জয়

প্রকাশিত: ০৬:২২, ৮ নভেম্বর ২০১৬

রাবাদার দুরন্ত বোলিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার দারুণ জয়

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ পার্থ টেস্টের গল্পটা অতিথি দক্ষিণ আফ্রিকানদের দারুণ জয়ের না, স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার ঐতিহাসিক ব্যর্থতার? উত্তর দুটোই। ৫৩৯ রানের অসম্ভব লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সোমবার পঞ্চম দিনে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৬১ রানে অলআউট স্টিভ স্মিথের অস্ট্রেলিয়ার হার ১৭৭ রানের বড় ব্যবধানে। ১৯৮৮ সালের পর অসিরা এই প্রথম ঘরের মাটিতে সিরিজের প্রথম টেস্টে হারের তেতো স্বাদ পেল! বিপরীতে পার্থের ওয়াকা গ্রাউন্ডে কখনই না হারার রেকর্ড অক্ষুণœœ রেখে তিন টেস্টের সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল সফরকারী প্রোটিয়ারা। প্রথম ইনিংসের লড়াইটা ছিল সেয়ানে-সেয়ানে। ২৪২Ñএর জবাবে অস্ট্রেলিয়া করে ২৪৪ রান। পার্থক্যটা তৈরি হয় দ্বিতীয় ইনিংসে। ডিন এলগার (১২৭) ও জেপি ডুমিনির (১৪১) দুই সেঞ্চুরির সৌজন্যে ৮ উইকেটে ৫৪০ রানের পাহাড় গড়ে ইনিংস ঘোষণা করেন দ. আফ্রিকা অধিনায়ক ফাফ ডুপ্লেসিস। ২+৫=৭ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন তরুণ পেসার কাগিসো রাবাদা। শনিবার হোবার্টে শুরু দ্বিতীয় টেস্ট। অসম্ভব লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ঝড়ের গতিতে শুরু করেছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। কিন্তু টেম্বা বাভুমার আলোচিত ফিল্ডিংয়ে সাজঘরে ফিরতে হয়েছিল তাকে। দ্রুত আরও ৩ উইকেট হারিয়ে চতুর্থ দিনেই হারের চোখ রাঙানি দেখতে পাচ্ছিল স্মিথরা। তবু উসমান খাজা আস্থার প্রতীক হয়ে লড়াই চালিয়েছেন। তাঁর ৯৭ রানের ইনিংসটা অবশ্য হারের ব্যবধানই কামিয়েছে কেবল। শেষদিকে লড়েছেন পিটার নেভিল। স্বাগতিক উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানের ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরিটা (৬০*) এক সময় ডুপ্লেসিসদের জন্য মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠেছিল। নবম উইকেটে জস হ্যাজলউডকে নিয়ে ৬৫ রানের জুটি গড়েন তিনি। একপ্রান্তে নেভিল অপরাজিত থাকলেও ৭১ বলে সংগ্রামী ২৯ রানে হ্যাজলউড ফেরার পরই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধরিত হয়ে যায়। তার আগে ১৬ রান নিয়ে নামা মিচেল মার্শ আউট হন ২৬ রান করে। ৫ উইকেট নেন প্রোটিয়াদের জয়ের নায়ক রাবাদা। শন ও মিচেল মার্শ, স্মিথ, ভোজেস ও মিচেল স্টার্ককে প্যাভিলিয়নে ফেরান তরুণ এই কৃষ্ণাঙ্গ পেসার। বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড সিরিজের মতো পার্থেও ছিল ডিআরএস-বিতর্ক। রাবাদার বলে মিচেল মার্শের বিপক্ষে এলবিডব্লিউর আবেদন হয়েছিল। সারা দেননি আম্পায়র আলিম দার। রিভিউ নেয় দ. আফ্রিকা। খালি চোখে দেখেও বোঝা যাচ্ছিল বল স্ট্যাম্প মিস করবে। কিন্তু আশ্চর্য, প্রযুক্তি স্টার্ককে সাজঘরে ফিরিয়ে দেয়। অর্থাৎ ট্র্যাকিংয়ে বল স্ট্যাম্পে আঘাত করে! সঙ্গে সঙ্গে সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্কেল টুইট, ‘বল এতটা সুইং করেছে যে এটা অবশ্যই লেগ স্ট্যাম্প মিস করত। আমি এই প্রযুক্তির সঙ্গে একমত নই।’ আরেক গ্রেট মিচেল জনসনের বক্তব্য, ‘কী ঠুনকো ব্যাপার! ডিআরএস পুরোপুরি ব্যর্থ!’ ম্যাচে কেশব মহারাজের বলে অসি অধিনায়ক স্মিথের আউট নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়। ঘরের মাটিতে ১৮ টেস্টে অপরাজিত থাকার পর পার্থে হারল অস্ট্রেলিয়া। ২০১২-১৩ মৌসুমে শেষ এই পার্থে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছেই হেরেছিল তারা। অন্যদিকে পার্থে মুখোমুখি শেষ তিন টেস্টের সব কটিতেই জিতল প্রোটিয়ারা। এক্ষেত্রে তাদের রেকর্ডটা ৪ জয়ের, জিম্বাবুইয়ের হারারেতে। ৩টি করে লর্ডস ও পোর্ট অব স্পেনে। অধিনায়ক ডুপ্লেসিস বলেন, ‘ডেল স্টেইনকে (ইনজুরি) হারানোর পর দুই পেসার নিয়ে খেলাটা সহজ ছিল না। রাবাদাকে আলাদা করে কৃতিত্ব দিতেই হয়।’ স্কোর ॥ দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংস ২৪২/১০ (৬৩.৪ ওভার; ডি’কক ৮৪, বাভুমা ৫১, ডুপ্লেসিস ৩৭, কেশব ১৬, এলগার ১২, রাবাদা ১১*, ফিল্যান্ডার ১০, আমলা ০, স্টিভেন কুক ০; স্টার্ক ৪/৭১, হ্যাজলউড ৩/৭০, লেয়ন ২/৩৮, সিডল ১/৩৬) ও দ্বিতীয় ইনিংস ৫৪০/৮ ডিক্লে. (১৬০.১ ওভার; এলগার ১২৭, ডুমিনি ১৪১, ফিল্যান্ডার ৭৩, ডি’কক ৬৪, মহারাজ ৪১*, ডুপ্লেসিস ৩২; সিডল ২/৬২, মিচেল মার্শ ২/৭৭, হ্যাজলউড ২/১০৭, স্টার্ক ১/১১৪, স্মিথ ১/৩)। অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস ২৪৪/১০ (৭০.২ ওভার; ওয়ার্নার ৯৭, শন মার্শ ৬৩, ভোজেস ২৭, নেভিল ২৩, সিডল ১৮*, খাজা ৪, স্মিথ ০, মিচেল মার্শ ০; ফ্যিান্ডারন ৪/৫৬, কেশব ৩/৫৬, রাবাদা ২/৭৮) ও দ্বিতীয় ইনিংস ৩৬১/১০ (১১৯.১ ওভার; খাজা ৯৭, নেভিল ৬০*, ওয়ার্নার ৩৫, স্মিথ ৩৪, হ্যাজলউড ২৯, মিচেল মার্শ ২৬, শন মার্শ ১৫, মিচেল স্টার্ক ১৩, সিডল ১৩; রাবাদা ৫/৯২, ডুমিনি ১/৫১, ফিল্যান্ডার ১/৫৫, বাভুমা ১/২৯) ফল ॥ দক্ষিণ আফ্রিকা ১৭৭ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ কাগিসো রাবাদা (দক্ষিণ আফ্রিকা) সিরিজ ॥ তিন টেস্টের সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকা ১-০তে এগিয়ে।
×