ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যারিয়ারের ১৫ বছরে পা মাশরাফির

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৮ নভেম্বর ২০১৬

ক্যারিয়ারের ১৫ বছরে পা মাশরাফির

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বয়স এখন তেত্রিশ, আঠারো পেরোতেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদার্পণ। শুরুটা জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে, ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ফরমেট টেস্ট দিয়ে। ২২ গজে নিবেদিতপ্রাণ যোদ্ধা হিসেবে কাটিয়ে দিয়েছেন ১৫ বছর। আজ সেই দিন, যেদিন বাংলাদেশ জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দিয়েছিলেন ২০০১ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে। আবির্ভাবেই প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ভবিষ্যতে অনেক দূর যাবেন। সত্যিই তাই হয়েছে। বাংলাদেশ দলের অপরিহার্য ক্রিকেটারে পরিণত হয়েছেন তিনি। ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ হয়ে গেছেন দেশের ক্রিকেটে অন্যতম জনপ্রিয় নাম। ১৫ বছরে যা বিন্দুমাত্র ম্লান হয়নি, বরং দিনকে দিন সেটার উজ্জ্বলতা আরও বেড়েছে। আজ সেই ৮ নবেম্বর, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৫ বছর পূর্তি ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মর্তুজার। তিনি জানিয়েছেন, এই দীর্ঘ ক্যারিয়ারের অনেক কিছুই ভাল ও খারাপ লাগার বিষয় আছে। কিন্তু মাশরাফি জানিয়েছেন এর মধ্যে ভাল লাগার সংখ্যাই বেশি। ক্রিকেটের প্রতি যে ক্ষুধাটা রয়েছে এখনও সেটা আছে বলেই খেলা চালিয়ে যেতে পেরেছেন দীর্ঘ সময়। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ১৫ বছর পূর্তি হলেও এই ১৫ বছরে মাশরাফি হিসেব করলে খেলতে পেরেছেন মাত্র ৯/১০ বছর। বাজে ফর্মের জন্য কখনও ছিটকে যাননি, ক্যারিয়ারের মূল শত্রুই ছিল ইনজুরি। সেই ইনজুরির কারণে দুই পায়ে ৮ বার অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে। কিন্তু ক্রিকেট থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি এই মারাত্মক ইনজুরিগুলো। বারেবারেই নিজের ইচ্ছাশক্তি, প্রচেষ্টা, মনের জোর নিয়ে পূর্ণ উদ্যমে নতুন করে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন নিজের সবটুকু নিংড়ে দিয়ে। অনেকেই বলেন যেভাবে মাশরাফি ধারাবাহিকভাবে খেলতে পারলে বিশ্বের অনেক নন্দিত ও কিংবদন্তি পেসারদের কাতারেই নাম থাকত এখন। ইনজুরি সেটা হতে দেয়নি। তবুও ওয়ানডে ক্রিকেটে এখন ১৬৬ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক ২১৬ উইকেটের মালিক তিনি। ক্যারিয়ারের শুরুটা টেস্ট দিয়ে হলেও ইনজুরিগুলো বাদসেধেছে লঙ্গার ভার্সনের ক্রিকেট খেলায়। ২০০৯ সাল থেকে দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে আর খেলেন না। ৩৬ টেস্টে ৭৮ উইকেট আছে। কিন্তু মাশরাফি একজন ব্যাটসম্যানও। বিভিন্ন সময়ে দারুণ কিছু ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে জিতিয়েছেন। সর্বশেষ এবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ২৯ বলে ৪৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন, পরে বল হাতে নেন ৪ উইকেট। একক নৈপুণ্যে দলকে জিতিয়ে সিরিজে সমতা আনেন। ১৫ বছর আগে শুরু করলেও এখন পর্যন্ত ক্রিকেটের প্রতি নিবেদন, ভাল কিছু করার সামর্থ্যে কারও চেয়ে পিছিয়ে তো নেই-ই বরং অনেকের চেয়ে এগিয়ে, অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত অপরের জন্য। সেটা এখন পর্যন্ত ফিটনেস টেস্টে প্রমাণ হয়ে যায়। দলের তরুণ ও অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকেন বিপ টেস্টে- প্রথমে নাম থাকে তার। সে কারণেই ক্রিকেটের ক্ষুধাটা কমে না। এ বিষয়ে মাশরাফি বলেন, ‘বহুত সমস্যা, বহুত ভাল লাগা সবকিছুই আছে ১৫ বছরের ক্যারিয়ারে। আমি অনুভব করি আমার ভাল লাগার সংখ্যাই বেশি। আর যে কয়দিন খেলি চেষ্টা করব ভাল খেলার। ফর্ম তো এমন একটা জিনিস যখন তখন আসতে পারে, যখন তখন খারাপ হয়। কিন্তু আমি যেটা বললাম আপনার চেষ্টাটা কতটুকু বা বাংলাদেশ দলে সবাই খেলতে চায় কিন্তু তার জন্য চেষ্টা করতে হবে, কষ্ট করতে হবে। তো ওই ক্ষুধা থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওইটা যতদিন আছে ততদিন চেষ্টা করব।’ একজন যোগ্যতম নেতা মাশরাফি। ২০০৯ সালেই প্রথমবারের মতো অধিনায়ক হয়েছিলেন তিন ফরমেটের। কিন্তু ইনজুরি ছিটকে দেয়াতে এক ম্যাচ পরেই আর খেলা হয়নি। আবার অধিনায়কত্ব পান ২০১৪ সালের নবেম্বরে। তারপর থেকেই যেন ‘টিম বাংলাদেশ’ মহাশক্তিতে পরিণত হয়। আগেই নিজেদের উঠতি শক্তি হিসেবে প্রমাণ দেয়া দলটি ২০১৪ সালের সবচেয়ে বাজে বছর কাটিয়ে ২০১৫ সালে হয়ে ওঠে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম। মাশরাফির নেতৃত্বে ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা। এরপর একে একে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো ক্রিকেট পরাশক্তিদের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। টানা ৬ ওয়ানডে সিরিজ জেতে বাংলাদেশ তিনি নেতৃত্ব নেয়ার পর। সেটা ভেঙেছে এবার ইংল্যান্ড, নতুন করে অধিনায়ক হওয়ার পর মাশরাফির প্রথম হার ২-১ ব্যবধানে। এবার টি২০ এশিয়া কাপেরও ফাইনালে ওঠে দল, টি২০ বিশ্বকাপেও ভাল নৈপুণ্য দেখায়। ক্যারিয়ারের ১৫ বছরে নিজের প্রিয় বিষয়গুলো জানিয়েছেন মাশরাফি।
×