ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শেষ হলো আয়কর মেলা

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৮ নভেম্বর ২০১৬

ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শেষ হলো আয়কর মেলা

এমদাদুল হক তুহিন ॥ ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শেষ হলো আয়কর মেলা-২০১৬। পূর্ববতী যে কোন বছরের চেয়ে এবারের মেলায় বেড়েছে সেবা গ্রহণকারী ও আয়কর আদায়ের পরিমাণ। সরাদেশে মেলা শেষে কয়েকগুণ বেড়েছে নতুন ই-টিআইএনধারীর সংখ্যা, এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪২ শতাংশের বেশি। রিটার্ন দাখিলে প্রবদ্ধি হয়েছে ২০ শতাংশ আর সেবা গ্রহণে ২২ শতাংশ। এবারের মেলায় রেকর্ড পরিমাণ আয়কর সংগ্রহ হয়েছে। সাত দিনের মেলায় রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ ২১২৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকারও বেশি। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা রাজস্ব সংগ্রহের এ ধারাকে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক বলে উল্লেখ করেছেন। চলমান সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলার শেষদিনে আগারগাঁওয়ে নির্মাণাধীন রাজস্ব ভবনের মেলা প্রাঙ্গণে ছিল উপচেপড়া ভিড়। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। ব্যাংকে টাকা জমা দিতে করদাতাদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। একই চিত্র ছিল রিটার্ন দাখিলেও। এদিকে আয়কর মেলার প্রথম ছয় দিনে ১৭২৭ কোটি টাকার বেশি আয়কর সংগ্রহ হয়েছে। ষষ্ঠ দিনে আয়কর সংগ্রহ হয় ৩১০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। দিনটিতে ৭ লাখ ৭৭ হাজারের অধিক করদাতা সেবা গ্রহণ করেছেন আর রির্টান দাখিল করেন প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার জন। পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় এবারের মেলার বিস্তর পার্থক্য রয়েছে উল্লেখ করে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোঃ নজিবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, প্রথমবারের মতো এবার আমরা ওয়ান স্টপ সার্ভিস দিয়েছি। মেলায় আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট সম্পর্কিত সকল সেবাই দেয়া হয়েছে। অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের সুযোগ ছিল এবারই প্রথম। এছাড়া প্রথমবারের মতো জনগণের করের টাকায় আগারগাঁওয়ে নির্মাণাধীন রাজস্ব ভবনে আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আয়কর মেলায় ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও করদাতারা এবারের মেলায় অন্য যে কোন বারের চেয়ে বেশি ভিড় করেছেন। সবচেয়ে উৎসাহজনক হচ্ছে- এবার কর শিক্ষণ ফোরামের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কর সম্পর্কিত শিক্ষা নিয়েছে। দেশের ভবিষ্যত উন্নয়নে ভবিষ্যত করদাতা হিসেবে তারা ধীরে ধীরে প্রস্তুত হচ্ছে। আয়কর মেলা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, রাজস্ব আয় বাড়াতে এ ধরনের মেলাগুলো মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। কর দিতে উৎসাহিত করে। এ ধরনের মেলা রাজস্ব আদায়ের গতি বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। শুধু বড় শহরে নয়, ভবিষ্যতে যেন ছোট ছোট শহরেও এ ধরনের মেলার আয়োজন করা হয়। মেলার শেষদিন সোমবার করদাতাদের দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। প্রতিটি স্টলের সামনে ছিল উপচেপড়া ভিড়। এদিন টাকা জমা দিতে করদাতাদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। রিটার্ন দাখিলের প্রতিটি বুথের সামনে ছিল না তিল ধারণের ঠাঁইও। এতসংখ্যক করদাতাকে সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে এনবিআর কর্মকর্তাদেরও। কোন কোন করদাতা জানিয়েছেন, শেষদিনে এসে প্রকাশ্য রূপ ধারণ করেছে অব্যবস্থাপনা। ভ্যাট অনলাইন বুথে আগত দশনার্থী ও করদাতাদের ভ্যাট সম্পর্কিত তথ্য দেয়া হচ্ছিল। এটি এনবিআরের একটি নতুন প্রকল্প। এখানে সেবা দিচ্ছেন এনবিআরে রকিবুল হাসান। তিনি জানান, ভ্যাট অনলাইন হচ্ছে অনলাইনের মাধ্যমে ভ্যাট পরিশোধ করা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানকে অনলাইনে নিবন্ধিত হতে হবে। এবারের মেলায় ৪৭ নম্বর বুথে মুক্তিযোদ্ধা করদাতাদের সেবা দেয়া হয়। ওই বুথে দায়িত্বরত অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার গৌর চন্দ্র দে বলেন, মেলার শেষদিনে দুপুর পর্যন্ত ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা করদাতা কর পরিশোধ করেছেন। তিনি জানান, এবারের মেলায় অন্য যে কোন বারের চেয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা বেশি। সমাপনী দিন বিকেলে জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপির নেতৃত্বে ওই কমিটির সদস্যরা মেলা পরিদর্শন করেন। সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গণে আয়কর মেলার সমাপণী ঘোষণা করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মোঃ নজিবুর রহমান।
×