ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকায় আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত উৎসব

পাঁচ দেশের খ্যাতনামা শিল্পী গাইবেন শেকড়ের গান

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৮ নভেম্বর ২০১৬

পাঁচ দেশের খ্যাতনামা শিল্পী গাইবেন শেকড়ের গান

মনোয়ার হোসেন ॥ বৈচিত্র্যময়তায় ভরপুর এ দেশের লোকজ গান। জারি-সারি, পালা, ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালি আর বাউল গানের দেশ বাংলাদেশ। তবে কংক্রিটের শহর ঢাকায় এই মেঠো সুরের গান শোনার সুযোগ সীমিত। সেই সীমিত সুযোগটি আবার বিস্তীর্ণ হয়ে ধরা দিচ্ছে লোকজ গানের অনুরাগীদের কাছে। দেশের শিল্পীদের পাশাপাশি বিশ্বের নামজাদা লোকসঙ্গীতশিল্পীরা গান গাইবেন এই শহরে। আগামী ১০ নবেম্বর থেকে রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত উৎসব-২০১৬। এ সঙ্গীতাসরে বাংলাদেশসহ পাঁচ দেশের শিল্পীদের অংশগ্রহণের চূড়ান্ত তথ্য জানিয়েছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান সান ইভেন্টস। এই পাঁচ দেশের শিল্পীরা গাইবেন তাদের শেকড়ের গান। সুরের আশ্রয়ে মেলে ধরবেন নিজ নিজ দেশের লোকায়ত সংস্কৃতির কথা। লোকসঙ্গীত পরিবেশন করবেন বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাজ্য ও স্পেনের শিল্পীরা। কণ্ঠ ও যন্ত্রসঙ্গীতশিল্পী মিলিয়ে পরিবেশনায় অংশ নেবেন শতাধিক শিল্পী। ১০ নবেম্বর শুরু হয়ে ১২ নবেম্বর পর্যন্ত চলবে তিন দিনের এ উন্মুক্ত উৎসব। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত শোনা যাবে পাঁচ রাষ্ট্রের প্রখ্যাত লোকগীতি শিল্পীদের গান। লোকসঙ্গীতে নবজাগরণের প্রত্যাশ্যায় আয়োজিত উৎসবে গতবারের মতো এবারও শ্রোতাদের মন রাঙাবেন বাংলার লোকগানের অহঙ্কার মমতাজ। দেশের সংস্কৃতিকে বিশ্বের সামনে তুলে ধারার এ আয়োজনে গাইবেন আরেক শ্রোতানন্দিত শিল্পী বারী সিদ্দিকী। লোকগীতির সঙ্গে ক্লাসিক্যালের সম্মিলন ঘটানো এ শিল্পীর চমৎকার কণ্ঠসঙ্গীতের সঙ্গে শ্রোতাদের জন্য বাড়তি পাওনা হবে তার বংশীবাদন পরিবেশনা। শোনা যাবে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত শ্রোতাদের পরিচিত গায়েন ইসলাম উদ্দিন কিস্্সাকারের গান। তার সূত্র ধরে ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী পালাগান শোনার সুযোগ পাবেন শহুরে সঙ্গীতানুরাগীরা। এছাড়াও এ সঙ্গীতাসরে দেশের শিল্পীদের মধ্যে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছেন বাউলসাধক শাহ আবদুল করিমের শিষ্য আব্দুর রহমান বাউল। পরিবেশনায় আরও শামিল হবেনÑ বাউল শফি ম-ল, সুনীল কর্মকার, টুন টুন বাউল, লতিফ সরকার, ফরিদা ইয়াসমিন, বাঁশিবাদক জালালসহ অনেকে। এ তো গেল দেশের শিল্পীদের কথা। অতিথি রাষ্ট্রের শিল্পীদের মধ্যে এ উৎসবে বিশেষভাবে নজর কাড়বেন ভারতীয় লোকসঙ্গীতশিল্পীরা। গত উৎসবের মতো এবারও অংশ নিচ্ছেন এক হাতে একতারা আর অন্য হাতে ডুবকি বাজিয়ে শ্রোতাকে উচ্ছ্বসিত করা শিল্পী পবন দাস বাউল। গাইবেন ভারতীয় লোকসঙ্গীত ও সুফি সঙ্গীতের মিশেলে নিজস্ব ধারা গড়া শিল্পী কৈলাস খের। বিবি নুরান, জ্যোতি ও সুলতানা- এই তিন বোনের গানের দল নুরান সিস্টার্স। তাদের কণ্ঠেও গীত হবে নিজ মাটির গন্ধমাখা শেকড়ের গান। অংশ নেবে লোকগাননির্ভর আরেক ব্যান্ডদল ইন্ডিয়ান ওশেন। সেই সুবাদে শোনা যাবে শ্লোক, সুফি সঙ্গীত ও জ্যাজের সংমিশ্রণে ভারতের ফিউশন মিউজিক। এছাড়াও দেশটির হয়ে অংশ নেবেনÑ প্রসাদ, রাজু দাস বাউলসহ অনেকে। ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত উৎসবে একমাত্র পাকিস্তানী শিল্পী হিসেবে গাইবেন জাভেদ বশির। পরিবেশনায় অংশ নেবে স্পেনের মিউজিক্যাল গ্রুপ কারেন লুগো এ্যান্ড রিকার্ডো মোরো। উপস্থাপন করবে স্পেনের উদালুসিয়া এক্সত্রেমাদুরা ও মুরসিয়া এলাকার বিশেষ ধরনের আর্ট ফর্ম। এটি ফ্লামেঙ্কো নাচ হিসেবেও পরিচিত। ঐতিহ্যবাহী এ পরিবেশনায় গানের সঙ্গে থাকবে গিটারের বাদন, নাচ ও বিশেষ ধরনের করতালি। উৎসবে অংশ নেবে যুক্তরাজ্যের লোকজ ঘরানার ব্যান্ডদল সুশীলা রহমান এ্যান্ড স্যাম মিলস। ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুশীলা ও স্যাম মিলস এ দলের দুই শিল্পী। মূলত ভারত ও পাকিস্তানের ভক্তিমূলক ও সুফিবাদী ঐতিহ্যকে ধারণ করে পরিবেশনা সাজায় দলটি। উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য শ্রোতাদের নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ হয়েছে ৫ নবেম্বর। এখন চলছে আর্মি স্টেডিয়াম ঘিরে আয়োজনকে সফল করে তোলার প্রস্তুতি। উৎসব উপভোগ করতে হলে এবার শ্রোতাদের বেশকিছু শর্ত অনুসরণ করতে হবে। ভেন্যুতে প্রবেশের সময় ই-টিকেট দেখাতে হবে। প্রত্যেককে যে কোন প্রকার ছবিসংবলিত শনাক্তকরণ পরিচয়পত্র রাখতে হবে। কোন ধরনের ব্যাগ নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করা যাবে না। অনুষ্ঠানস্থল থেকে একবার বের হলে আর ভেতরে প্রবেশ করা যাবে না। বাইরে থেকে আনা খাবার কিংবা পানীয় নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। খাবারের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে ফুড কোর্ট থাকবে। এছাড়া ভেন্যুতে বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যাবে। ‘আগে আসলে আগে পাওয়া যাবে’ ভিত্তিতে আসন বণ্টন করা হবে। গাড়ি পার্কিংয়ের কোন ব্যবস্থা থাকবে না। অনুষ্ঠান শেষে আর্মি স্টেডিয়াম থেকে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য বাসের ব্যবস্থা থাকবে।
×