ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির যৌথসভা আজ টুঙ্গিপাড়ায়

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৮ নভেম্বর ২০১৬

আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির যৌথসভা আজ টুঙ্গিপাড়ায়

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আগামী নির্বাচনসহ বেশ কয়েকটি কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে শুরু হচ্ছে আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির যাত্রা। প্রান্ত থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সংগঠনকে শক্তিশালী ও বেগবান করা, কোন্দল-দ্বন্দ্ব-বিভেদ দূর করে নেতাকর্মীদের মধ্যে দৃঢ় ঐক্য গড়ে তোলা, দলে থাকা আবর্জনা সাফ করতে শুদ্ধি অভিযান এবং আগামী নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে জনগণের মন জয়ের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় আগামী দিনের পথ চলার কর্মকৌশল চূড়ান্ত করতে আজ মঙ্গলবার দলের নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদ প্রথম যৌথসভায় বসছে। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় অনুষ্ঠেয় এই যৌথসভায় সভাপতিত্ব করবেন অষ্টমবারের মতো পুনর্নির্বাচিত সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির মধ্য দিয়ে দৃশ্যত সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দলকেও সক্রিয় করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে তাগিদ ছিল, তারই প্রতিফলন ঘটেছে। সরকার থেকে দলকে আলাদা ও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতেই এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে প্রবীণ-নবীনের সমন্বয়ে শক্তিশালী কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব গঠন করেছেন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। সম্পাদকম-লীতে অধিকাংশ পদেই এনেছেন নতুন মুখ। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের অধিকাংশকে সাইড লাইনে রেখে মাঠ পর্যায়ে সাংগঠনিক কাজের মাত্রা বাড়ানোর পাশাপাশি সভাপতিম-লীতে ভারসাম্য রেখে প্রধানমন্ত্রী দৃশ্যত সরকার ও দলের কাজের মধ্যে সমন্বয় সাধনের উদ্যোগ নিয়েছেন। একইসঙ্গে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করে আনার কাজটিও মন্ত্রীদের বদলে নির্ভার ব্যক্তিদের হাতে দিতে দলীয় প্রধানের চাওয়ারও প্রতিফলন ঘটেছে। আর এই দুই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভরসা করেছেন ছাত্রলীগের একঝাঁক সাবেক নেতার উপর। কমিটিতে ছাত্রলীগের এত প্রাধান্য আগে দেখা যায়নি। নব্বইপরবর্তী ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন সাবেক নেতাকেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে এনে শেখ হাসিনা স্পষ্টতই দলকে গতিশীল করতে চাইছেন। কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পর নবাগতদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘তোমাদের দিয়ে আমি চারা রোপণ করেছি। আমার বিশ্বাস সব চারা গাছ এক সময় অনেক বড় হবে। তোমাদের অনেক কাজ করতে হবে। নেতা হয়ে বসে থাকলে চলবে না। তোমাদের পদ দেয়া হয়েছে কাজ করার জন্য। এখন নতুনদের সময়, নতুনরাই দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’ নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও দলে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার ইঙ্গিত দিয়ে একাধিক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ক্ষমতায় থাকায় দলে কিছু ট্রাশেস ও আবর্জনা ঢুকে গেছে। আগে এসব পরিষ্কার করতে হবে। কারণ ঘর যদি ডিসিপ্লিনড না হয় তাহলে বাইরে আমরা কি করে ডিসিপ্লিনড করব। আপন ঘরকে আগে ডিসিপ্লিনড করতে হবে। আর উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হলে পার্টিকে তার সঙ্গে তাল মেলাতে হবে। সরকার শক্তিশালী, দল দুর্বল- এ অবস্থায় আমরা উন্নয়নের ফসল ঘরে তুলতে পারব না। এ লক্ষ্যেই এবারকার জাতীয় সম্মেলন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগ জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে নবগঠিত কমিটিকে অন্তত বড় তিনটি চ্যালেঞ্জ নিয়েই যাত্রা করতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করা। জেলা-উপজেলায় অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল ও বিভেদ মেটানো। জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে দলের জনপ্রিয়তা বাড়ানো। পাশাপাশি দলীয় পদ ব্যবহার করে ব্যবসাবাণিজ্য বাগানো তথা অনিয়ম-দুর্নীতি থেকে নিজেদের বিরত রাখা। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দলকে আবার ক্ষমতায় নিয়ে আসা। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতেই হয়ত দলটির সভানেত্রী এবার কেন্দ্রীয় কমিটিতে তরুণের রক্ত সঞ্চালন করেছেন। দলের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনসহ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আজ মঙ্গলবার প্রথম যৌথসভা অনুষ্ঠিত হবে টুঙ্গিপাড়ায়। এই বৈঠকেই দলের নতুন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও উপদেষ্টারা দলের আগামী দিনের পথচলার রোডম্যাপ চূড়ান্ত করবেন। দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও উপদেষ্টাগণ আজ সকালে সড়কপথে রওনা দেবেন টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশ্যে। আর প্রধানমন্ত্রী যাবেন হেলিকপ্টারে। টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছে প্রথমেই দলের নতুন নেতৃবৃন্দ ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই প্রাচীন রাজনৈতিক দলটি প্রথম যৌথসভায় মিলিত হয়ে সাংগঠনিক, রাজনৈতিকসহ আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার দলীয় কৌশল চূড়ান্ত করবেন। জানা গেছে, বৈঠকে সরকার এবং দলকে শক্তিশালী ও জনপ্রিয় করে গড়ে তোলার জন্য বেশকিছু দিকনির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলীয় সূত্রমতে, আজকের যৌথ সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত ও দিকনির্দেশনা নিয়েই নির্বাচনমুখী কর্মকা- শুরু করবে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনকে সামনে রেখেই দলকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত ঢেলে সাজানো হবে। সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোতেও চালানো হবে শুদ্ধি অভিযান। আগামী নির্বাচনে দলকে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আনতে এখন থেকেই মাঠে নামতে চায় দলটি। এ কারণে দলে মন্ত্রীদের বদলে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্বকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, যাতে তারা দলীয় কাজে প্রয়োজনীয় সময় দিতে পারেন। যাতে তৃণমূলে থাকা অভ্যন্তরীণ কোন্দল-দ্বন্দ্বগুলো দ্রুত মিটিয়ে ফেলে দলকে ইস্পাত কঠিন ঐক্যের বাঁধনে বাঁধা যায়। এবার দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসা তরুণ নেতাদেরও বক্তব্য হচ্ছে- জঙ্গীবাদ-উগ্রবাদ মোকাবেলা এবং আগামী নির্বাচনের জন্য দলকে প্রস্তত করাই আমাদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। তাই আমাদের প্রথম টার্গেট আগামী নির্বাচন। পরবর্তী টার্গেট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়ন। আর দলকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করাও হবে আমাদের অন্যতম কাজ। উন্নয়ন যতই হোক না কেন, আচরণ খারাপ হলে উন্নয়ন ম্লান হয়ে যায়। আবার ভোটের রাজনীতিতেও এর প্রভাব ফেলে। তাই প্রান্ত থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নেতাদের কর্মকা- ও আচরণে গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে। এখন থেকেই আমাদের এ কাজটি করতে হবে।
×