ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কে বসছেন হোয়াইট হাউসের মসনদে- হিলারি, না ট্রাম্প?

গাধা-হাতির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই আজ

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৮ নভেম্বর ২০১৬

গাধা-হাতির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই আজ

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ আড়াইশ বছরের ইতিহাসে মার্কিনীরা নারী নাকি ঝানু ব্যবসায়ীকে প্রেসিডেন্ট দেখতে চায় তার ফয়সালা আজ। কে হচ্ছেন হোয়াইট হাউসে ওবামার উত্তরাধিকার? ভোটের মাধ্যমে মার্কিনীরা আজ তাদের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট বেছে নেবে। নির্বাচনে মূল লড়াই হবে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় ভোর ছয়টা থেকে শুরু হবে ভোটগ্রহণ। চলবে রাত আটটা পর্যন্ত। অবশ্য কিছু অঙ্গরাজ্যে ভোটগ্রহণ চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত। এতদিন হিলারি ও ট্রাম্পের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস ছিল। তবে ভোটগ্রহণের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে প্রকাশিত একাধিক জনমত জরিপে হিলারির জয়ের পাল্লা ভারি বলে আভাস দেয়া হয়েছে। তবে অনেক বিশ্লেষক বলছেন, জরিপে হিলারি এগিয়ে থাকলেও দুই প্রার্থীর মধ্যেই তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। কারণ অনেক ভোটার এসব জরিপে অংশ নেয় না। এতদিন রিপাবলিকানরা হিলারির মেল কেলেঙ্কারি পুঁজি করে প্রচার চালিয়ে আসছিল। তবে এফবিআইয়ের এক খবরে ট্রাম্প শিবিরে নেমে এসেছে চরম হতাশা। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল তদন্ত ব্যুরো এফবিআইয়ের নতুন তদন্তে হিলারির বিরুদ্ধে কোন অপরাধ পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি হিলারি তার ই-মেল নিয়ে পরবর্তীতে অভিযোগের সম্মুখীন হতে পারেন তাও নাকচ করেছে সংস্থাটি। এফবিআইয়ের এই খবর প্রকাশের পর যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে পরিচালিত জরিপে কয়েক ধাপ এগিয়ে যান হিলারি। পাশাপাশি বিশ্ববাজারে চাঙ্গা ভাব দেখা যায়। সিএনএন, বিবিসি, ফক্স নিউজ, সিবিএস/নিউইয়র্ক টাইমস, জার্নালিস্ট নেট সিলভার অব ফাইফ থার্টিএইট ডটকম, ওয়ালস্ট্রিট/ এনবিসি, পলিটিকো/মর্নিং কনসাল্ট পোল, রিয়েল ক্লিয়ার পলিটিক্সসহ অন্যান্য জরিপে হিলারি এগিয়ে রয়েছেন। খবর বিবিসি, এএফপি, সিএনএন ও অন্যান্য ওয়েবসাইটের। এফবিআইয়ের এই নয়া তদন্তের ফলে চরম নাখোশ হয়েছে ট্রাম্প শিবির। মিশিগানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, হিলারির জন্য নির্বাচনে কারচুপির আশ্রয় নেয়া আরও সহজ হলো। আমি বরাবরই বলে আসছি হিলারি একজন দুর্নীতিপরায়ণ নারী। সে একজন অপরাধী। আমি মনে করি মার্কিনীরা ব্যালটের মাধ্যমে এই প্রশ্নের সমাধান করবে। ট্রাম্প আরও বলেন, এফবিআইয়ের সাধারণ শ্রেণীর বিশেষ এজেন্টরা হিলারিকে ভয়াবহ অপরাধ করে পার পেয়ে যেতে দেবেন না। তিনি ঘোষণা করেন, ঠিক এখন এক কারচুপিপূর্ণ ব্যবস্থা হিলারিকে রক্ষা করছে। এটি পুরোপুরি এক কারচুপিপূর্ণ ব্যবস্থা। আমি অনেক দিন ধরেই একথা বলে এসেছি। ট্রাম্পের সমর্থকরা তখন ‘তাকে (হিলারিকে) জেলে পুরো’ বলে চিৎকার করে। ট্রাম্প বলেন, হিলারি যে দোষী, তা হিলারি জানেন, এফবিআই জানে, জনগণও জানে। তবে এফবিআইয়ের তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার খবরে হিলারির কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে হিলারি প্রচার শিবিরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তদন্তে সঠিক তথ্যই উঠে এসেছে। হিলারি অপরাধী নন। তার ক্যাম্পেন ম্যানেজার জেনিফার পালমিয়েরি তাদের সফরসঙ্গী সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টির মীমাংসা হওয়ায় আমরা আনন্দিত। কিন্তু কংগ্রেসের রিপাবলিকান সদস্যরা এফবিআই ডিরেক্টরের ওই ঘোষণার প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। রবিবার এফবিআই প্রধান জেমস কোমি এক চিঠিতে কংগ্রেসকে জানান যে, এফবিআই এজেন্টরা হিলারির এক ঘনিষ্ঠ সহকারীর স্বামীর ল্যাপটপে পাওয়া বিশাল ই-মেল ভা-ার পরীক্ষা করে দেখতে দিনরাত কাজ করেছেন। সেই সময় হিলারি ক্লিনটনের কাছে পাঠানো হয়েছিল এবং তার কাছ থেকে ছাড়া হয়েছিল এমন সব ই-মেল পর্যালোচনা করেছি। আমাদের পর্যালোচনার ভিত্তিতে আমরা হিলারি ক্লিনটনের বিষয়ে জুলাইয়ে আমাদের ঘোষিত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করিনি। ঐতিহ্যগতভাবে মার্কিন অঙ্গরাজ্যেগুলোর মধ্যে অধিকাংশের রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাট প্রভাবিত অঙ্গরাজ্য হিসেবে পরিচিতি আছে। এসব অঙ্গরাজ্যে সাধারণত যে দলের প্রভাব বেশি সেই দলের প্রার্থীই বিজয়ী হন। সাধারণত টেক্সাসকে রিপাবলিকান প্রভাবিত অঙ্গরাজ্য ধরা হয়, নির্বাচনী প্রচারণার সময় রিপাবলিকান প্রার্থী টেক্সাসে প্রচার চালিয়ে তার অর্থের অপচয় করেন না, তিনি এখানে জিতবেন বলেই ধরে নেন। অপরদিকে ক্যালিফোর্নিয়াকে ডেমোক্র্যাট প্রভাবিত অঙ্গরাজ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়, এখানে এ দলটির প্রার্থীই জিতবেন বলে ধরে নেয়া হয়। তবে এ ধরনের অঙ্গরাজ্যগুলো ছাড়াও দেশটির আরও কয়েকটি অঙ্গরাজ্য আছে, যেখানে কোন দলেরই সুস্পষ্ট প্রাধান্য নেই, এসব অঙ্গরাজ্যগুলোকে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য বা প্রচলিত কথায় ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অতীতের নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে এসব অঙ্গরাজ্যের ভোটাররা যে প্রার্থীর দিকে ঝুঁকে পড়েন, সেই প্রার্থীই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ১৩টি অঙ্গরাজ্যকে ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ হিসেবে শনাক্ত করেছে বিবিসি। অঙ্গরাজ্যগুলো হলো, এ্যারিজোনা, কলোরাডো, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, আইওয়া, মিশিগান, নেভাদা, নিউ হ্যাম্পশায়ার, নর্থ ক্যারোলিনা, ওহাইও, পেনসিলভানিয়া, ভার্জিনিয়া এবং উইসকনসিন। ৬ নবেম্বরের সর্বশেষ জরিপানুযায়ী রাজ্যগুলোর মধ্যে সাতটিতে ট্রাম্প ও ছয়টিতে হিলারি এগিয়ে আছেন। ট্রাম্প এগিয়ে রয়েছেন এ্যারিজোনা, জর্জিয়া, আইওয়া, নেভাদা, নিউ হ্যাম্পশায়ার, নর্থ ক্যারোলিনা ও ওহাইওতে। আর হিলারি কলোরাডো, ফ্লোরিডা, মিশিগান, পেনসিলভানিয়া, ভার্জিনিয়া ও উইসকনসিনে এগিয়ে আছেন। তবে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে সংখ্যার হিসেবে ট্রাম্প এগিয়ে থাকলেও হিলারির এগিয়ে থাকা অঙ্গরাজ্যগুলোতে ভোটার সংখ্যা বেশি, তাই এসব রাজ্যগুলোতে ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের সংখ্যাও বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যে দীর্ঘ মাসব্যাপী ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচিত হন। এ জন্য আইওয়া রাজ্যে রাজনৈতিক নেতাদের সমিতিতে নির্বাচন সম্পর্কিত আলোচনা হয়। সর্বোচ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হয়। পরবর্তী ধাপে মূল নির্বাচনে ৫০টি অঙ্গরাজ্য ও ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়া (ওয়াশিংটন নগরী) কোন অঙ্গরাজ্যের অংশ নয়। ভোটাররা তাদের ভোটের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ও একজনকে ভাইস-প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেন। একজন ভোটার নিজের পছন্দের প্রেসিডেন্টের জন্য ভোট দেয়ার সময় একই সঙ্গে ইলেক্টোরাল প্রতিনিধির জন্যও ভোট দেন। মঙ্গলবারের দিনটি লাখ লাখ আমেরিকান নারীর জন্য বিশেষ একটি দিন। কারণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এই দিনে তারা কোন নারী প্রার্থীকে ভোট দেয়ার সুযোগ পেতে যাচ্ছেন। যে সুযোগটি অনেকের জীবনে আগে কখনও আসেনি। আর কারও জন্য এ দিনটি হতে যাচ্ছে ৯৬ বছরের অপেক্ষার অবসান। ১৯২০ সালের ১৮ই আগস্টের আগে যুক্তরাষ্ট্রে যারা জন্ম নিয়েছিলেন তারা এমন একটি দেশে বেড়ে উঠেছেন যে দেশটিতে নারীদের ভোট দেয়ার কোন সুযোগ ছিল না। ৯৮ বছর বয়সী এস্তেলে স্কাল্টজও এমন একজন নারী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি কারখানার শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন এবং তার সারাজীবনে শিক্ষাবিদের কাজ করে চলেছেন। শৈশবে এস্তেলে তাঁর মায়ের সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে গিয়েছিলেন কিভাবে মানুষ ভোট দিচ্ছে তা দেখার জন্য। কিন্তু তিনি বলেছেন ‘আমি আরও বাঁচতে চাই, আমার দেশের প্রথম নারী প্রেসিডেন্টের নির্বাচন আমি দেখে যেতে চাই’। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৯তম সংশোধনী পাশের মাধ্যমে দেশটিতে নারীরা ভোট দেবার অধিকার পায়। ১৯১৯ সালের ৪ জুন এই সংশোধনী কংগ্রেসে পাস হলেও এ প্রস্তাবটি আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পায় ১৯২০ সালের ১৮ আগস্ট। সংবিধানের এই ১৯তম সংশোধনীতে বলা আছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যেক নারীর ভোট দেয়ার অধিকার আছে।
×