ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কেবিনেটে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘটনা ঘটেছে, এটি ভালভাবে আমলে নিতে হবে;###;আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাসিরনগরে যাচ্ছেন

নাসিরনগরের ঘটনায় শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশ ॥ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৮ নভেম্বর ২০১৬

নাসিরনগরের ঘটনায় শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশ ॥ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি এ নির্দেশ দেন। এ লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আজ মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাচ্ছেন। এছাড়া মাটির গুণাগুণ ও কৃষি পরিবেশ রক্ষায় জৈব কৃষিনীতি করতে ‘জাতীয় জৈব কৃষিনীতি-২০১৬’ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। পাশাপাশি বেকার তারুণ-তরুণীদের অস্থায়ী কর্মসংস্থানে দেশের আরও ৬৪ উপজেলায় ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচী সম্প্রসারণের প্রস্তাব, বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে গ্রিড কানেকশনে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের জন্য খসড়া, ‘পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০১৬’ এর খসড়া এবং দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বিদ্যালয়ে নির্ধারণ করে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড আইন-২০১৬’ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সচিবালয়ে সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ঘটনা স্থান পায়। মন্ত্রিপরিষদের এক সিনিয়র সদস্য বলেন, বিএনপি এখন মায়াকান্না কানছে। তাদের আমলে (২০০১ নির্বাচনপরবর্তী) সংখ্যালঘুদের ওপর যে বর্বরোচিত হামলা হয়েছিল তখন তারা নীরব ছিল। এখন খুব সরব হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী তখন বলেন, ঘটনা ঘটেছে; এটি ভালভাবে আমলে নিতে হবে। প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। দেশে কোন রকমের সন্ত্রাসবাদ প্রশ্রয় দেয়া হবে না। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, মঙ্গলবার নাসিরনগর যাচ্ছি। অপরাধী যেই হোক পার পাবে না। তিনি বলেন, দুষ্কৃতকারীদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর আছে। তদন্তে যাদের নাম আসবে প্রমাণসাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের জাতীয় কৃষিনীতি-২০১৩ রয়েছে। এটার আওতায় জৈব কৃষির জন্য এ নীতিটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি কয়েকটি অনুচ্ছেদের ছোট একটি নীতি। এতে মোট ছয়টি অনুচ্ছেদ রয়েছেÑ ভূমিকা, উদ্দেশ্য, জৈব কৃষি নীতিমালা, প্রতিষ্ঠানিক নীতি, আইনগত কাঠামো ও উপসংহার। পৃথিবীর ১৭২টি দেশে জৈব চাষাবাদ হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এর মধ্যে ৭৮টি দেশ নিজ নিজ জৈব নীতি প্রবর্তন করেছে। তাদের অনুসরণে সার্কভুক্ত দেশের মধ্যে ভারত ও ভুটান এটা করে ফেলেছে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও নেপালে প্রণয়নের কাজ চলছে। আমাদেরটা আজকে অনুমোদনের প্রেক্ষিতে এটা চূড়ান্ত হলো। তিনি বলেন, এখানে ফোকাস করা হয়েছে রাসায়নিক সারের অসম ব্যবহারের ফলে ভূমির যে অবক্ষয় হয়, উর্বরতা হ্রাস পায়, তাকে জৈব ও সুষম সার ব্যবহারের মাধ্যমে কিভাবে কমপেনসেট (কমানো) করা যায়। মাটির গুণাগুণ ও কৃষির পরিবেশ এগুলোর মধ্যে যাতে কোন নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে সে আঙ্গিকে কাজ করার জন্য কিছু গাইডলাইন দেয়া হয়েছে নীতিতে। বিমসটেক দেশের মধ্যে বিদ্যুত ভাগাভাগিতে এমওইউ ॥ বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে গ্রিড কানেকশনে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের জন্য খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল, টেকনিক্যাল এ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন বা বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অনেক দিন ধরে এটা কার্যকরের জন্য আলাপ হচ্ছে। বিভিন্ন সেক্টরে কো-অপারেশন (সহযোগিতা), এখন বিদ্যুত সেক্টেরে আমরা কিভাবে সহযোগিতা করতে পারি? গ্রিড (বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থা) ইন্টারকানেকশনের (এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের সংযোগ) জন্য এই এমওইউটা তৈরি করা হয়েছে। বলতে গেলে সদস্যভুক্ত সব দেশই এই এমওইউটার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেছে। আমাদের মন্ত্রিসভাও এই এমওইউটা অনুমোদন করেছে, আমরাও একই চুক্তিতে অবদ্ধ হব। এ চুক্তি মিয়ানমার থেকে জলবিদ্যুত ও গ্যাস আমদানিতে ভূমিকা রাখবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিমসটেকে গ্রিড কানেকশন যদি স্থাপিত হয় তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে ঋতুবৈচিত্র্যের কারণে বিদ্যুত ব্যবহারে সুবিধা হবে। আমাদের দেশে যখন গরম তখন দেখা যাবে অন্য দেশে শীত। তখন তারা বিদ্যুত ট্রান্সফার করে আমাদের দিতে পারবে। এ জাতীয় বিষয়গুলো তখন গুরুত্ব পাবে। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইনের সংশোধন অনুমোদন ॥ বৈঠকে ‘পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০১৬’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সঙ্গে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সম্পর্ক রয়েছে। একটি বাড়ি একটি খামার থেকেই ব্যাংকটি ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ আইনে (পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইন) একটি সমস্যা আছে যে, ২০১৬ সালের ৩০ জুনের পর একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পটি বিলুপ্ত হয়ে ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ (একীভূত) হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে প্রস্তুতি সম্পন্ন না হওয়ায় সময়ের বাধা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। শফিউল আলম বলেন, ৩৯ ধারার উপধারা-১ এর (ক) এ পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। আগে যেখানে ৩০ জুন ছিল, সেটা উঠে গিয়ে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে উক্ত প্রকল্পগুলো ব্যাংকে চলে আসবে। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী ২০১৬ সালের ৩০ জুন থেকে এ সংশোধন কার্যকর হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আরেকটি (সংশোধিত আইনে) প্রভিশন আনা হয়েছে, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি আইন-২০০৬ এর আওতায় (ব্যাংক) থাকবে না। এটা সমবায় ব্যবস্থাপনায় নিজস্বভাবে চলবে। এখন সংসদ অধিবেশন না থাকায় এটা অধ্যাদেশ আকারে জারি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিদ্যালয় হবে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ॥ ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড আইন-২০১৬’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ আইনটি মূলত ইংরেজী আইনের বাংলা অনুবাদ। ১৯৮৩ সালের অধ্যাদেশ ছিল, যেহেতু এটা সামরিক শাসনামলের অধ্যাদেশ এজন্য এটিকে ইংরেজী থেকে বাংলায় অনুবাদ করে সামান্য পরিবর্তন সহকারে নতুন আইন হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের অর্থে আগে মাদ্রাসা ব্যতীত শব্দটি ছিল। এখন তা উঠিয়ে দিয়ে বলা হয়েছে, এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যা কোন আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত বা স্বীকৃত হোক বা না হোক, যেখানে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা দেয়া হয়। পাঠ্যপুস্তকের সংজ্ঞাটি আরও পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, ‘পাঠ্যপুস্তক অর্থ প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত যে কোন শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক।’ ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০’ অনুযায়ী প্রাথমিক, অষ্টম শ্রেণী ও মাধ্যমিক শিক্ষার স্তর দাদশ শ্রেণী পর্যন্ত। সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আইনগুলোর সংশোধন আনা হচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সংশোধিত আইনে বোর্ডে সদস্য প্রস্তাব করা হয়েছে ৯ জন। এর মধ্যে ৮ সদস্য এবং একজন চেয়ারম্যান হবেন। কমপক্ষে চারজন সদস্য উপস্থিত থাকলে কোরাম পূর্ণ হবে। চেয়ারম্যান না থাকলে জ্যেষ্ঠ সদস্য সভায় সভাপতিত্ব করবেন। বোর্ডে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা থেকেও দু’জন সদস্য প্রতিনিধিত্ব করবেন। ৬৪ উপজেলায় ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচী সম্প্রসারণ ॥ বেকার তরুণ-তরুণীদের অস্থায়ী কর্মসংস্থানে দেশের আরও ৬৪ উপজেলায় ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচী সম্প্রসারণের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকার। সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, পঞ্চম থেকে সপ্তম পর্যায়ে ২০টি করে ৬০ উপজেলায় এ কর্মসূচী চালু হবে। এর সঙ্গে বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির দুটি করে এবং রাঙ্গামাটির একটি উপজেলা যোগ হয়ে মোট ৬৪ উপজেলায় এ কর্মসূচী সম্প্রসারিত হবে। সচিব জানান, কোন কোন উপজেলায় নতুন করে এ কর্মসূচী চালু হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি। পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুযায়ী দেশের সবচেয়ে দারিদ্র্যপীড়িত উপজেলাগুলোকেই নির্বাচন করা হবে। নতুন করে ৬৪ উপজেলার কতজনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে, তাও ঠিক হয়নি। আওয়ামী লীগের ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচী ছিল, ২০১০ সালের ৬ মার্চ এ কর্মসূচী কুড়িগ্রাম থেকে শুরু হয়। এ কর্মসূচীর আওতায় ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী বেকার নারী ও পুরুষদের তিন মাসের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণের সময় তাদের প্রতিদিন ১০০ টাকা করে ভাতা দেয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের ২ বছরের জন্য বিভিন্ন সরকারী দফতরে অস্থায়ী নিয়োগ দেয়া হয়, তখন তারা ২০০ টাকা করে প্রতিদিন পান, এরপর তারা দক্ষতা অর্জন করে পরবর্তী পর্যায়ে কাজে লাগাতে পারেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, প্রথম পর্যায়ে কুড়িগ্রাম, বরগুনা ও গোপালগঞ্জের ১৯টি উপজেলায় ৫৬ হাজার ৮০১ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এদের মধ্যে ৫৬ হাজার ৫৪ জন অস্থায়ী নিয়োগ পেয়েছিলেন। দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ পর্যায়ে দেশের ৩৭টি উপজেলায় ১ লাখ ১১ হাজার ১১৬ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তাদের মধ্যে ১ লাখ ৮ হাজার ৭৮২ জন কাজ পেয়েছেন। পঞ্চম থেকে সপ্তম পর্যায়ে এ কর্মসূচী সম্প্রসারণের কাজ ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে শুরু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০১৭ সালের ৩০ জুনের আগেই তা শুরু হবে।
×