ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ আরিফুল ইসলাম

স্বর্ণ ঋতু হেমন্ত

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ৭ নভেম্বর ২০১৬

স্বর্ণ ঋতু হেমন্ত

সুজলা সুফলা শস্য শ্যামল প্রিয় মাতৃভূমি বাংলার বুক জুড়ে এখন স্বর্ণঋতু হেমন্ত। ঋতুচক্রের নিয়মেই হেমন্ত এসেছে। মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে সোনালি ফসল ধান। এই হেমন্তের মিষ্টি রোদে নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে মেতে উঠেছে দেশের প্রত্যন্ত গ্রামের হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমী চাষী। সোনালি বাংলার মাঠ-ক্ষেতে চলছে আমন ধান কাটার মহাৎসব। গৃহস্থালির মহিলা কর্তার তৈরি করা নতুন ধানের পিঠাপুলির সুগন্ধ বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। গ্রামীণ বাংলার সংস্কৃতিতে এ দৃশ্য হেমন্তের শাশ্বত রূপ চিরকালীন। বাংলাদেশে কিষান-কিষানিরা যেমন ধানকাটা, মাড়াই ও রোদে শুকানোর কাজে ব্যস্ত থাকে, ঠিক তেমনি পশ্চিমবঙ্গবাসীরাও ব্যস্ত থাকে। প্রকৃতিও মাতে বেশ আনন্দ উল্লাসে, তাই সে হেমন্তে শীতের আগাম বার্তা জানিয়ে দেয়। আলতো শীতের পরশ বুলিয়ে, নরম কুয়াশার চাদর বিছিয়ে হেমন্ত তার নানা রঙের আনন্দ আর উৎসব নিয়ে আমাদের যাপিত জীবনে প্রবেশ করে। শহুরে মানুষ হেমন্তকে ভালমতো বুঝে ওঠার আগেই ইট-পাথরের দালান গড়ার গলিতে এসে যায় শীত। দেয়ালে ঝুলানো দিনপঞ্জির হিসাব আর প্রকৃতির আবহাওয়া অদল-বদলের দৃশ্যে শহরের মানুষও বুঝে নেয় হেমন্ত এসেছে। এই সময়ে ফসল মাঠে যেমন পাওয়া যায় সবুজাভ দৃশ্য তেমনি পাওয়া যায় না গ্রীষ্মের দাবদাহ খরা। চারদিকে শুধু পাকা সোনালি ফসলের ম ম গন্ধ আর পরিপক্ব ধানের শীষে মৌমাছিদের গুঞ্জন। উৎসব স্রষ্টার যে মাসে গ্রীষ্মেও অসহ্য দাবদাহ, বর্ষার অঝোর ধারার বৃষ্টি, শীতের হাড় কাঁপানো ঠা-া কোন কিছুই নেই সে মাস হচ্ছে কার্তিক। অপর দিকে যখন আংশিক শির শির ঠা-া, গ্রীষ্মের মৃত রোদ, গাছের সব পাতা ঝরে পড়ে নেড়ে হয়ে যায় আর ভোরে দূর্বাঘাসে শিশিরের বন্যায় দিশেহারা হয় আমাদের স্বর্ণমাখা হেমন্ত ঋতু ঠিক তখন অগ্রহায়ণ পদচারণায়। গ্রাম্য বৃদ্ধের মাথার সাদা সাদা চুলের মতো ছন্নছাড়া নীল আকাশের মেঘমালার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে, প্রকৃতিকে নতুনত্বের ধ্বনিতে উৎসবের বার্তা দিয়ে কৃষকের হাসি আর অখ নীলে ভরে ওঠে হেমন্তের আকাশ-পাতাল। শীতে যে মিষ্টি রোদের অপেক্ষায় আমরা থাকি সেই মিষ্টি সোনা রোদেও দেখা এই হেমন্তেই পাওয়া যায়। কেননা হেমন্ত সে শরৎ থেকে খুব দূরে নয় পক্ষান্তরে শীতেরও দূরত্ব চোখে পড়ার মতো নয় (খুব সন্নিকটে) প্রকৃতির শরত-শীতের মাঝামাঝি উৎসব হেমন্ত ঋতু। প্রকৃতির নির্বাসে ভোরে যৌবনা দূর্বাঘাসে আলতো কুয়াশা জমে। হেমন্তের এক অনন্যতা পাওয়া এই কুয়াশার স্মৃতি। যেমন রোমাঞ্চকর ঠিক তেমনই মুক্তদানার মতো টিপটিপ বৃষ্টি ঝরে শিশিরে। ভোরের মিষ্টি মাখা কাঁচা রোদ আর শিশিরের বিধৌত মৃদু হিমস্পর্শে প্রাণে শিহরণ জাগে। আবহাওয়ার প্রবণতায় মাঠে-ঘাটে জমে থাকা অল্প-আধটু পানি থাকলে সেগুলো শুকোতে থাকে। নবান্ন উৎসবে যখন নতুন জামাই আর মেয়ে নাইওর আসে বাপের বাড়ি ঠিক তার কিছুদিন পরেই আনাগোনা ঘটে অতিথি পাখির। গ্রাম বাংলায় যেন মেয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঠিক আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখতে অগ্রহায়ণের শেষ পক্ষের দিকে সুদূর থেকে এই মায়া স্নেহ মাখা বাংলাদেশে আসে। প্রকৃতি ক্রমেই তখন অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে। নব যৌবনের উচ্ছ্বাসে পাতা ঝরা বৃক্ষরাজিরাও নীরবতায় চুপটি থাকে যে, তাদের নতুন পাতা গজানোর সময় কখন আসবে! এ সময় যেন প্রকৃতি নিজেকে সাজিয়ে তোলে ঋতু পরিবর্তনের শ্রেষ্ঠ সাজে। আগমনী শীতের প্রস্তুতি নেয় প্রকৃতি। আমাদের ষড়ঋতুর এই বাংলাদেশে এমনইভাবে পরিবর্তন হয় ঋতুচক্রের চাকা।
×