ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জামিল উর রহমান

সবুজে সুন্দর হাতিরঝিল

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ৭ নভেম্বর ২০১৬

সবুজে সুন্দর হাতিরঝিল

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয় না , এমন মানুষ পৃথিবীতে খুবই অল্প। সেই আদিকাল থেকেই মানুষের কাছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন সদা যৌবনময়। আর সেই যৌবনের কোন টানেই যেন সবাই বার বার ফিরে যায় তার কাছে। সবুজ প্রকৃতির এক অদ্ভুত মায়া আছে, যা সচরাচর টানে সবাইকে। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে জীবনের প্রত্যেকটি গল্পই হলো ব্যস্ততার। কিন্তু এই হাজারও ব্যস্ততার ফাঁকেও সবুজকে সময় দিতে, সবুজের কাছে যেতে কোন বাধাই যেন বাধা মনে হয় না। ভাললাগা, ভালবাসার আরেক নাম হলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। আর তাই তো সময় পেলেই মানুষ ছুটে যায় বান্দারবান, রাঙ্গামাটি কিংবা খাগড়াছড়ির মায়ায়। এক অপার মাধুর্য যেন রয়েছে এসব লীলাভূমির। তবে ঢাকাবাসীর কাছে গল্পটা একটু ভিন্ন। কর্মচাঞ্চল্যকর জীবনে যেন সময় বের করাই দায়। সময় পেলেই ছুটে যেতে ইচ্ছে করে বহুদূরের অজানা পথে। সময়ের কাছে কেন জানি আটকে যায় সবাই। নিজেকে একটু সবুজের সঙ্গে মিশিয়ে নেয়া, খোলা হাওয়ায় নিজেকে ভাসিয়ে দিয়ে যদি হারিয়ে যাওয়া যেত তাহলে হয়তবা নিষ্ঠুর কর্মব্যস্ততাকে একটু শাস্তিই দেয়া যেত। হাজারও ভিড়ের মাঝে এই শহরবাসীর কাছে সস্তির নিশ্বাস কিছুটা হলেও দিয়েছে হাতিরঝিল। পুরনো আব্দার পূরণ করতে না পারলেও কিছুটা আব্দার তো মিটিয়েছে এই হাতিরঝিল। অনেক বড় জায়গা নিয়ে দর্শকের প্রাণকে উচ্ছসিত করতে, কিছুটা হারিয়ে যেতে ঢাকার মানুষকে সাহায্য করছে এই হাতিরঝিল। সবুজের সমারোহ, ফাঁকা রাস্তা, এঁকেবেঁকে যাওয়া লেক যেন কর্মব্যস্ততাকে ছাপিয়ে ফেলেছে। হারিয়ে যাওয়া সময়গুলো কেন জানি হারিয়েই যায়। তবে একাকী কিছুক্ষণ এমন পরিবেশে থাকলে কিছুটা নস্টালজিক সময় তো তৈরি হয়ই। স্বপ্ন দেখা যেন আমরা ভুলেই গেছি। তবে এই পরিবেশ আমাদের উৎসাহিত করে স্বপ্ন দেখাতে, এগিয়ে দেয় একধাপ, এনে দেয় কাজের উদ্যমকে। হাহাকারময় জীবনকে একটু নতুনভাবেই যেন রাঙিয়ে দেয়। হাতিরঝিলের পরিবেশ বর্তমানে ঢাকাবাসীর কাছে অক্সিজেন। ইট, পাথর আর গাড়িঘোড়ার ভিড়ে দিন দিন হারিয়ে ফেলছি অক্সিজেন। তাই মনোরম এই পরিবেশকে অক্সিজেন বললে কিন্তু খারাপ হয় না। প্রিয়জনকে নিয়ে সবুজের মাঝে হারিয়ে যাওয়া, ফাঁকা রাস্তায় কিছুক্ষণ সামনে এগিয়ে চলা, আর লেকের পানির পারে পাখির কিচিরমিচির শব্দ যেন স্বস্তিই এনে দেয় প্রকৃতিপ্রেমিদের। তার সঙ্গে হাতিরঝিলের ব্রিজের ওপর ফুচকা খেলে মন্দ হয় না। বিকেল সময়টা হাতিরঝিল ব্যস্ত থাকে তার রূপ দেখাতে। সেই মনোমুগ্ধকর খেলা দেখতে ছুটে যায় দর্শনার্থীরা। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে হাতিরঝিল যেন তার যৌবনকে বিলিয়ে দেয় সবার মাঝে। আর যৌবনের এই রূপ দেখতে প্রকৃতিপ্রেমিরা হারিয়ে যায় এই চেনা হাতিরঝিলে এসে। ঠিক বিকেলে বা সন্ধ্যায় হাতিরঝিলের যেমন রূপ তার থেকে রাতে এই হাতিরঝিলই যেন আসে নতুন আরেক রূপ নিয়ে। সোডিয়ামের আলো আর লেকের পানিতে সেই আলোর প্রতিচ্ছবি যেন কোন বাধাই মানে না। জীবনের আরেক গল্প শুরু করা যেতে পারে এখান থেকে। আর গল্পের নামটা না হয় অক্সিজেনই থাক। তরুণ-তরুণী, ছেলেমেয়ে, বাচ্চা, মধ্যবয়স্ক এমনকি বয়স্করাও যেন খুঁজে পায় এই হাতিরঝিলের অনাবিল শুভ্রতা যা কিনা বন্দী থাকে মনের কারাগারে। কারাগার নামক জীবন থেকে বেরিয়ে আসার গল্পের আরেক নাম হয়ত হতেই পারে এই হাতিরঝিল। হাতিরঝিলের রূপকে মণ্ডিত করেছে সবুজ, নির্জন রাস্তা আর এঁকেবেঁকে যাওয়া লেক। এদিকে এসবের মাঝে ব্যবসায়ীরা খাবারের পসরা সাজাতে ভুল করেননি। আবার পথশিশুরা বেলুন বিক্রি করতে করতে জানিয়ে দেয় বেলুন যেমন খোলা আকাশ পেলেই উড়তে চায় তেমনি মানুষও খোলা আকাশ আর মনের মতো পরিবেশ পেলে উড়ে হারিয়ে যেতে চায় তার স্বপ্নময় রাজ্যে।
×