ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রজাপতি ও পরিবেশ

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ৭ নভেম্বর ২০১৬

প্রজাপতি ও পরিবেশ

‘ও প্রজাপতি, কোথায় পেলে ভাই এমন রঙিন পাখা’- কবি নজরুলের গীতল ও সুললিত এই লাইনটিতে প্রজাপতির রূপ ধরা দেয় খুব সহজেই। প্রজাপতির পাশাপাশি উচ্চকিত হতে পারে ফড়িংয়ের নাম। অথবা, মৌমাছি, ঘাস ফড়িং, ভিমরুল, পোকামাকড় ও অন্যান্য কীটপতঙ্গ। কিছু কীটপতঙ্গ ও পোকামাকড় ফসল এবং মানুষের জন্য ক্ষতিকর হলেও, মোটের ওপর প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষায় এগুলোর ইতিবাচক অবদানই অনেক বেশি। প্রজাপতি ফড়িং, ঘাস ফড়িং, ঝিঁঝিঁ পোকা, মৌমাছিসহ কিছু কীটপতঙ্গ দেখতেও সুন্দর ও নয়নাভিরাম। এরা শস্য শ্যামল সবুজ প্রকৃতিকে রঙিন ও বর্ণিল করে তোলে নানাভাবে, নানা উপায়ে। পাশাপাশি রাঙিয়ে তোলে মানুষের মন ও দু’নয়ন। আর মানুষের মনকে রঙিন ও সমৃদ্ধ করতেই শুক্রবার রাজধানীর সন্নিকটে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিসর্গ প্রকৃতি সুশোভিত প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী বসেছিল প্রজাপতি মেলা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের আয়োজনে সহযোগী সংগঠন হিসেবে ছিল ‘প্রগতি ও জীবন’ ফাউন্ডেশন, আইইউসিএন, এনসিআই, ডব্লিউটিসি। ‘উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি’- সেøাগান ধারণ করে জাবির ‘প্রজাপতি মেলা-২০১৬’ অতিক্রম করল সাতটি বছর। মেলাটিকে প্রজাপতিময় করে তুলতে ৮০ প্রজাতির কয়েক হাজার প্রজাপতির সমাবেশ ঘটে, যা হাজার হাজার শিশু-কিশোরসহ বয়স্ক দর্শকদের আমোদিত করে তোলে। এই বর্ণাঢ্য মেলার মাধ্যমে প্রজাপতির জীবনচক্রসহ প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষায় প্রজাপতির ইতিবাচক অবদান প্রত্যক্ষ করার সুযোগ ঘটে সকলের। বাংলাদেশে কয়েক শ’ প্রজাতির প্রজাপতি আছে। সারাবিশ্বে আছে কয়েক হাজার। সর্বাধিক বর্ণিল প্রজাতির প্রজাপতির অনুসন্ধান মেলে ব্রাজিল, মেক্সিকো, কলম্বিয়া ও অন্যত্র। কোন কোন প্রজাপতি দল বেঁধে উড়ে যায় হাজার হাজার মাইল। রকমারি শস্য, ফল-ফলারি, ফুল-ফল ও উদ্ভিদ প্রজাতির পরাগায়নসহ বংশ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তবে বাস্তবতা হলো নির্বিচারে বনাঞ্চল ধ্বংস, বৃক্ষনিধনসহ পাহাড়-টিলা ইত্যাদি কেটে মনুষ্য বসতি ও শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলায় সমূহ ক্ষতি হচ্ছে নিসর্গ প্রকৃতির এই অমূল্য পতঙ্গটির। এর পাশাপাশি কমছে মৌমাছি, ঘাস ফড়িং, ফড়িং, মাকড়সা, ভিমরুল ও অন্যান্য কীটপতঙ্গের সংখ্যাও। চাষাবাদে কীটনাশক এবং সারের ব্যবহারেও ক্ষতি হচ্ছে প্রকৃতি ও শস্যবান্ধব কীটপতঙ্গের। এর অনিবার্য প্রভাবে কমছে ফসল ও ফল-ফলারির উৎপাদন। পাহাড় ও বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণে সমূহ ক্ষতি হচ্ছে প্রকৃতি ও পরিবেশের। বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে ক্রমশ। সর্বশেষ প্যারিসে অনুষ্ঠিত বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনে এর বিশদ চিত্র উঠে এসেছে, যা মানবসভ্যতার জন্য রীতিমতো হুমকি বলেই প্রতীয়মান হয়। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, বাংলাদেশও এই বৃত্তের বাইরে নয়। অতঃপর বিশ্বে প্রায় সব দেশ ও নেতৃবৃন্দ প্রকৃতি এবং পরিবেশের সুরক্ষার জন্য বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রতিরোধে কার্বন নিঃসরণ কমাতে সম্মত হয়েছে। গাছপালা, বনাঞ্চল, পাহাড়-টিলাসহ নদ-নদী সুনাব্য রাখতে হয়েছে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এর বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে বাংলাদেশেও। বাংলাদেশেও গাছপালা, পাহাড়-টিলা, বনাঞ্চল কমতে কমতে একেবারে ঠেকেছে তলানিতে। নদ-নদী, খাল-বিলগুলো ক্রমশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের অনিবার্য প্রভাব। ফলে ঝড়-ঝঞ্ঝা, খরা, বৃষ্টি-বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘনঘটা দেখা যাচ্ছে। এ সবই প্রধানত হচ্ছে মনুষ্য সৃষ্ট কারণে। অতঃপর এই দুরবস্থা প্রতিরোধে সচেতন হতে হবে সবাইকে। মানবসভ্যতাকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রকৃতিকে ধ্বংস করে নয়। বরং অবলম্বন করেই এগিয়ে যেতে হবে মানুষকে। প্রজাপতি মেলা নিসর্গ প্রকৃতিকে সুরক্ষায় মানুষকে সচেতন করে তুলতে প্রভূত সহায়ক হতে পারে।
×