ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বদেশে পরবাসী অনেকেই দেশান্তরী হচ্ছে

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরতা থামছেই না

প্রকাশিত: ০৬:১১, ৭ নভেম্বর ২০১৬

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরতা থামছেই না

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর দমন-পীড়ন, জেল-জুলুম, নারী ধর্ষণের ঘটনা থামছে না। বিশ্ব মোড়ল যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার দফায় দফায় বিবৃতি ও সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের প্রতি সে দেশের সরকারের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণেও এ পর্যন্ত কোন সাফল্য আসেনি। বিভিন্ন অজুহাতে নিজ দেশে পরবাসী এসব রোহিঙ্গা মুসলমান প্রতিনিয়ত বহুমুখী নির্যাতনের পাশাপাশি মৃত্যুকেও আলিঙ্গন করছে। ঘরবাড়ি, ভিটেমাটি জ্বলছে। প্রাণ বাঁচাতে অনেকেই দেশান্তরী হচ্ছে। উল্লেখ্য, গত ৯ অক্টোবর রাখাইন প্রদেশের মংডুতে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির (বর্ডার গার্ড পুলিশ) চৌকিতে হামলার একটি ঘটনা নিয়ে রোহিঙ্গাদের অভিযুক্ত করা হয়। এরপরই রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নেমে আসে নির্মম বর্বরতা। ঢালাও ধরপাকড়, নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদ সংস্থায় সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। দফায় দফায় রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছে ৩৯ রোহিঙ্গা ও ধর্ষিত হয়েছে ২০ রোহিঙ্গা নারী। এ পর্যন্ত দুই শতাধিক বাড়িঘর জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছাই করা হয়েছে বলে সীমান্তের ওপার থেকে তথ্য মিলেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার পক্ষ থেকে তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। অপরদিকে, জাপান সফররত মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আউং সান সুচি বলেছেন, ঘটনা জানতে গোয়েন্দাসহ বিভিন্ন সংস্থা নিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। এ ঘটনার পর চোরাপথে সীমান্ত অতিক্রম করে রোহিঙ্গারা যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিজিপি তাদের নজরদারি কঠোর অবস্থানে রেখেছে। প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গা মুসলমানদের আত্মীয়স্বজনদের বড় একটি অংশ বাংলাদেশের কক্সবাজার অঞ্চলে বসবাসরত। ডিজিটাল সুবিধায় এ দেশের বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরদের কর্মকা-ের সুবিধায় সীমান্তের ওপারের বিভিন্ন এলাকায় বসবাসরতরা এপারের লোকজনদের সঙ্গে সর্বক্ষণ মোবাইল যোগাযোগ রক্ষা করে থাকে। সঙ্গত কারণে, এপারে কিছু ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে ওপারের লোকজন যেমন খবর পেয়ে যায়, তেমনি ওপারে কিছু ঘটলে এপারের লোকজনের কাছে তথ্য চলে আসে। এপারে বসবাসরত বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে, গত ১০ অক্টোবর থেকে আউং সান সুচির সরকারের বিভিন্ন বাহিনী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযানের নামে সে দেশে বসবাসরত রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর বর্বর নির্যাতন শুরু করে। এ ধরনের নির্যাতন নতুন কোন ঘটনা নয়। বছরের পর বছর বিভিন্ন বাহানায় রোহিঙ্গারা নানামুখী নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। আর এ কারণেই রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের লাখ লাখ নারী-পুরুষ ও শিশু বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সূত্রে জানা গেছে, সে দেশের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা অভিযান শুরুর পর মংডু এলাকার একটি গ্রামে কিশোরী ও নারীদের অনেকে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। অমানবিক নির্যাতনের ফলে প্রাণ হারিয়েছে ৩৯ রোহিঙ্গা। ইতোমধ্যেই রোহিঙ্গা মানবাধিকার সংস্থার নেতৃবৃন্দের দাবিমতে, মিয়ানমার সরকারের পক্ষে বার বার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে। ইতোপূর্বে সে দেশের সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে রোহিঙ্গা নারীদের যৌন নিপীড়ন বন্ধের অঙ্গীকার করলেও তা একটি কথার কথায় পরিণত হয়েছে। সুচির সরকার ক্ষমতায় আসার আগে সে দেশের সামরিক জান্তা সরকার দফায় দফায় বেপরোয়া নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছে। সুচির সরকার ক্ষমতা পাওয়ার পর রোহিঙ্গাদের দুর্দশা নিরসন হওয়ার উদ্যোগী ভূমিকা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সুচি সরকার মুখে নানা কথা বললেও বাস্তবে এর তেমন কোন লক্ষণ নেই। গত ৯ অক্টোবর মংডুতে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর চৌকিতে হামলার ঘটনার পর যে অভিযান শুরু হয়েছে এসব বর্বরতা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ তারই একটি অংশ। ঘটনার পর থেকে মিডিয়াকর্মী, ব্যবসায়ী এমনকি সাধারণ মানুষকে সে দেশের ট্রানজিট পাস নিয়ে যাওয়া-আসার প্রক্রিয়াটি বন্ধ করে দিয়েছে সে দেশের সরকার। এদিকে, জাপান সফররত আউং সান সুচি রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরোচিত কায়দায় অত্যাচার-নির্যাতনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যা বলেছেন তা রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। সুচি বলেছেন, সরকার কোনকিছু লুকায়নি, বরং ঘটনার মূলে যাওয়ার চেষ্টা করছে। যতক্ষণ না তদন্ত শেষ হচ্ছে ততক্ষণ কাউকে দোষী বলা যাবে না। যথাযথ আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×