ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আজ রক্তক্ষয়ী ৭ নবেম্বর ॥ নানা কর্মসূচী

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৭ নভেম্বর ২০১৬

আজ রক্তক্ষয়ী ৭ নবেম্বর ॥ নানা কর্মসূচী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আজ রক্তক্ষয়ী সেই ৭ নবেম্বর। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ভিন্ন ভিন্ন নামে ও চেতনায় আজ সোমবার স্মরণ করবে স্বাধীনতা উত্তর ১৯৭৫ সালের অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় সৃষ্ট ৭ নবেম্বরের রক্তাক্ত এই দিনটির কথা। বিএনপি ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’, আওয়ামী লীগ ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ দিবসটিকে ‘সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন করতে নিয়েছে নানা কর্মসূচী। দিবসটি যে নামেই পালিত হোক, একমাত্র বিএনপি ও তাদের সমমনা ছাড়া অন্য প্রায় সকল রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ষ্পষ্ট করেই বলেছেন, রক্তাক্ত ’৭৫-এর ঘটনাপ্রবাহের ধারাবাহিকতায় ৭ নবেম্বরের মাধ্যমে সুপরিকল্পিতভাবে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মৌলিক চরিত্রকেই বদলে দেয়া হয়। কথিত এই অভ্যুত্থানের নামে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে দীর্ঘ সেনা শাসনের ভিত্তি রচিত হয় এবং স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিরা সংঘটিত হয়ে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের বিপরীত স্রোতে নিয়ে যায়। দীর্ঘ ২১টি বছর দেশের জনগণ গণতন্ত্রের বদলে সামরিকতন্ত্রের জাঁতাকলে পিষ্ট হতে হয়। আর ১৯৭৫ সালের নবেম্বরের ধারাবাহিক অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ৭ নবেম্বরই মূলত ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে আবির্ভূত হন সেনা বিদ্রোহে আটক তৎকালীন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। বিএনপি ও তাদের সমমনারা জিয়াউর রহমানকে ৭ নবেম্বরের ঘটনার নায়ক হিসেবে চিহ্নিত করে আসলেও দিবসটিকে সামনে রেখে স্বাধীনতার পক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল জিয়াউর রহমানকে ‘খলনায়ক ও বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের উৎখাত করার লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালের ৩ নবেম্বর সেনাবাহিনীতে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে একটি অভ্যুত্থান হয়। ওই সময় তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে আটক করা হয়। ৩ নবেম্বর অভ্যুত্থানের আগের রাতেই কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ জাতীয় চার নেতাকে নিষ্ঠুর ও পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করা হয়। জাসদের সঙ্গে যুক্ত কর্নেল আবু তাহের ৭ নবেম্বর এক পাল্টা অভুত্থানে জিয়াকে মুক্ত করেন। এই দিনই বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেদ মোশাররফ ও মেজর হায়দারসহ অনেককে হত্যা করা হয়। পরে ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই কথিত রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে প্রাণদাতা কর্নেল তাহেরকেই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে জিয়াউর রহমান। সামরিক ট্রাইব্যুনালে বিচারের সময় জিয়াউর রহমানকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন কর্নেল তাহের। প্রতিবারের ন্যায় এবারও ৭ নবেম্বরকে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করতে বিএনপি নিয়েছে ব্যাপক কর্মসূচী। দিবসটি উপলক্ষে আজ ভোর ৬টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ও সারাদেশে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং সকাল ১০টায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দলের নেতারা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি পেলে আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেলে পল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে বিএনপি। দিবসটিকে সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান হিসেবে পালনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদও নিয়েছে নানা কর্মসূচী। দলটির পক্ষ থেকে আজ সোমবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে শহীদ কর্নেল তাহের মিলনায়তনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। এতে কর্নেল তাহেরের সহযোদ্ধা মেজর (অব) জিয়া উদ্দিন, সার্জেন্ট রফিকুল ইসলাম বীর প্রতীক, হাবিলদার আবদুল বারেক, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, কর্নেল তাহেরের অনুজ অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। শরিফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন জাসদের অপরাংশও দিবসটি উপলক্ষে পৃথক কর্মসূচী পালন করবে। ৭ নবেম্বর উপলক্ষে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয়ভাবে কোন কর্মসূচি না নিলেও দলটির নেতারা দিবসটিকে মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সোমবার সংবাদ সম্মেলনে দলটির কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ৭ নবেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন করার জন্য খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে বলেন, সেদিন দেশে কোন বিপ্লব হয়নি। ১৯৭৫ সালের সেদিন মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করে তাদের লাশের ওপর হেঁটে জেনারেল জিয়া ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এরকম একটি বেদনা-বিধূর দিনে খালেদা জিয়া উৎসবের ডাক দিবেন, তা এ দেশের জনগণ মেনে নেবে না। দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফও দিবসটিকে মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবস হিসেবে আখ্যায়িত করেন। খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম স্মৃতি পরিষদও দিবসটিকে মুক্তিযোদ্ধা ও সৈনিক হত্যা দিবস হিসেবে পালন করছে। এ উপলক্ষে সংগঠনটি জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। মুক্তিযুদ্ধের ‘কে’ ফোর্সের অধিনায়ক ও সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীর উত্তমের সহধর্মিনী সালমা খালেদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিষ্টার আমীর-উল-ইসলাম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ, মাহবুব উদ্দিন বীরবিক্রম, খালেদ মোশাররফের জ্যেষ্ঠকন্যা মাহজাবিন খালেদ এমপি প্রমুখ।
×