ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নাগরিক পর্যবেক্ষণ

আ’লীগ বিএনপির একাংশ ও জামায়াতী অনুপ্রবেশকারী হামলায় জড়িত

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৭ নভেম্বর ২০১৬

আ’লীগ বিএনপির একাংশ ও জামায়াতী অনুপ্রবেশকারী হামলায় জড়িত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ঘুরে এসে একটি নাগরিক প্রতিনিধি দল বলেছে, আওয়ামী লীগ, বিএনপির একাংশ এবং এই দলে অনুপ্রবেশকারী জামায়াত-শিবিরের লোকজন ওই এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ পরোক্ষভাবে হামলায় মদদ দিয়েছে। আর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মন্ত্রী ছায়েদুল হক হামলাকারীদের আড়ালের চেষ্টা করে নিজেকে দুষ্কর্মের পক্ষভুক্ত করেছেন। রবিবার রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে নাগরিক প্রতিনিধি দল। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, ঐক্য ন্যাপের আহ্বায়ক পঙ্কজ ভট্টাচার্য, নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিয়াউদ্দিন তারিক আলী, নূর মোহাম্মদ তালুকদার, অসিত বরণ রায় গত ২ নবেম্বর নাসিরনগর পরিদর্শনে যান। সেই পরিদর্শনের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। তারা এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন। লিখিত বক্তব্যে পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, নাগরিক প্রতিনিধি দল স্থানীয় জনগণের পক্ষপাতহীন অভিমতের তথ্য ও সাক্ষ্য থেকে এই সত্য জেনেছে যে, আক্রমণকারীদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও জাতীয়তাবাদী দলের একাংশ এবং এই দুই দলে অনুপ্রবেশকারী জামায়াত-শিবিরের সংগঠিত অস্থানীয় অগ্রবাহিনী এই সাম্প্রদায়িক হামলায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। একই সঙ্গে সংখ্যালঘু বিতাড়ন, সম্পত্তি দখলের জন্য উচ্ছেদ সাধনকল্পে তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করার স্বার্থান্ধগোষ্ঠীর হীন উদ্দেশ্যটিও অপ্রকাশিত থাকেনি। ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে পঙ্কজ বলেন, সরকারী কর্মচারীদের একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় এবং জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রতিটি সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত ও শাস্তি দেয়া জরুরী। তিনি দৃঢ় প্রশাসনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি আক্রান্তদের পুনর্বাসন, ক্ষতিপূরণ এবং আস্থা ফেরাতে মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী রক্ষাকবচ ব্যবস্থা নিতে হবে। সুলতানা কামাল বলেন, সাম্প্রদায়িকতাকে কীভাবে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদ দেয়া হচ্ছে নাসিরনগরের ঘটনা তার প্রকট প্রকাশ। প্রতিনিয়ত নীরবভাবে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প জনগণের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, দোষারোপের কারণে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনাগুলোর বিচার হয় না। তিনি দোষারোপের খেলা না খেলে নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সরওয়ার আলী বলেন, এ ধরনের হামলার দুটি উদ্দেশ্য। একটি হলো অমুসলিমদের সম্পত্তি দখল করা অন্যটি হলো তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করা। সভাপতির বক্তব্যে জিয়াউদ্দিন তারিক আলী বলেন, এ ঘটনার প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে তিনি ওই এলাকায় গিয়ে সাত দিন কায়িক শ্রম দেবেন। খুশী কবির বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে সমাবেশ করার সময় কোন সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়নি। এতেই প্রমাণিত হয় ঘটনায় প্রশাসনের মদদ ছিল। স্থানীয় প্রশাসনও এর কোন সদুত্তর তাদের দিতে পারেনি। সংবাদ সম্মেলনে নাসিরনগরে হামলার শিকার বিনোদ বিহারী চৌধুরী ও বিমল বিহারী চৌধুরী বক্তব্য দেন। বিনোদ বলেন, পাঁচ-সাতশ’ লোক তাদের বাড়িতে হামলা চালায়। তাকে মারধর করে চাবি নিয়ে ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে আট ভরি স্বর্ণ, আট লাখ টাকা ও টিভি নিয়ে যায়। সংবাদ সম্মেলনে মহিলা পরিষদও তাদের নাসিরনগর পরিদর্শন শেষে তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রাখি দাস পুরকায়স্থ বলেন, নাসিরনগরে তিন হাজার হিন্দু ভোটার। পাঁচশ’ ঘর। কিন্তু তারা গিয়ে দেখেন পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপ হয়ে আছে। গুটি কয়েক লোকজন এলাকায় আছেন।
×