ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

চার পুলিশ আহত

রংপুরে বন্দুকযুদ্ধ, গ্রেফতার চার জেএমবি সদস্য সাত দিনের রিমান্ডে

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৭ নভেম্বর ২০১৬

 রংপুরে বন্দুকযুদ্ধ,  গ্রেফতার চার  জেএমবি সদস্য  সাত দিনের  রিমান্ডে

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর, ৬ নবেম্বর ॥ মহানগরীর চন্দনপাট শাহবাজপুর চাপড়ার দোলা এলাকার একটি পরিত্যক্ত ইটভাঁটিতে শনিবার মধ্যরাতে নাশকতার পরিকল্পনা করার সময় বন্দুকযুদ্ধে ৪ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। এ সময় জেএমবির ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বেলাল হোসেন জাপানি নাগরিক হোশি কোনিও হত্যা মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামি সাদ্দাম হোসেনের দীক্ষাগুরু বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। এ সময় উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র। কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল আজিজ জানান, পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে গ্রেফতারকৃতদের আদালতে পাঠালে আদালত ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান রবিবার দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, জাপানি নাগরিক হোশি কোনিও হত্যার পর এই অঞ্চলের জেএমবি সদস্যরা গা ঢাকা দেয়। আমাদের কাছে কিছুদিন থেকে খবর ছিল জেএমবি সদস্যরা আবারও নাশকতার জন্য এ অঞ্চলে সক্রিয় হচ্ছে। এরই মধ্যে শনিবার রাতে তারা নগরীর শাহবাজপুর এসএমবি ইটভাঁটিতে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। খবর পেয়ে রাত দুইটার দিকে সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে জেএমবি সদস্যরা গুলি ও ককটেল ছুড়তে থাকে। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে ৫ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এ সময় এসআই মাসুদ রানা, মামুনুর রশিদ, কনেস্টবল আসাদ ও আব্দুল খালেক আহত হন। এক পর্যায়ে জেএমবি সদস্য বেলাল হোসেন (৪৬), এরশাদ আলম (২৭), আশরাফুল আলম (২৩) ও আল আমিনকে (২০) গ্রেফতার করে পুলিশ। এদের মধ্যে বেলালের বাড়ি রংপুরের পীরগাছার দুর্গাপুরে আর বাকি তিন জনের বাড়ি পীরগাছার পশুয়া টাঙ্গাইলপাড়া গ্রামে। আহত পুলিশ সদস্যদের রাতেই রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এসপি প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও জানান, গ্রেফতারকৃত বেলাল হোসেন হোশি কোনিও হত্যা মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামি সাদ্দামের দীক্ষাগুরু। তার কাছেই সে জেএমবির শিক্ষা নেয়। সে ১৯৯১ সাল থেকে ’৯৪ সাল পর্যন্ত শিবির করত। ’৯৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত জামায়াত করত। ২০১৪ সালে সে জেএমবিতে যোগ দেয়। অপর গ্রেফতারকৃত এরশাদ আলমও আগে শিবির করত। পরে ২০১৪ সালে জেএমবিতে যোগ দেয়। অন্যরা শুরু থেকেই জেএমবির সক্রিয় সদস্য। এসপি জানান, গ্রেফতারকৃতরা হোশি কোনিও হত্যা মামলার আসামি নয়, তবে তারা ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এজন্য তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে কোর্টে চালান দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, এদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে সন্ত্রাস, নাশকতা এবং অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে তিনটি মামলা করেছে। এসপি আরও জানান, এ সময় একটি দেশী পিস্তল, স্টিলের চাপাতি চারটি, চাইনিজ কুড়াল, রাম দা, ছোট কুড়াল, লোহার পাইপ, চারটি ককটেল, জিহাদী বই এগারটি, পাটের বস্তা চারটি ও চারটি মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়। গত বছর ৩ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টায় মহানগরীর কাউনিয়া উপজেলার কাচু আলুটারী এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে খুন হন হোশি কোনিও। এ ঘটনায় কাউনিয়া থানার ওসি বাদী হয়ে ৩ অজ্ঞাত ব্যক্তির নামে মামলা করে। গত ৭ আগস্ট রংপুর জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আরিফুর রহমানের আদালতে জাপানি নাগরিক হোশি কোনিও হত্যাকা-ের ১০ মাস ৭ দিন পর ৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট গ্রহণ করেন। এরা সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জমিয়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) এর কিলিং মিশনের লিডার ও সদস্য। এদের মধ্যে মাসুদ রানা (২১), এসহাক আলী (২৩), লিটন মিয়া (২৩), আবু সাঈদ (৩৫) গ্রেফতার হয়ে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী। তাদের বাড়ি রংপুরের পীরগাছা উপজেলায়। অপর অভিযুক্ত কুড়িগ্রামের সাদ্দাম হোসেন (২১), গাইবান্ধার নজরুল ইসলাম (২৮) এবং পঞ্চগড়ের সাখাওয়াত হোসেন (৩৩), রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসানুল্লাহ আনছারী (২৮) পলাতক আছে। মামলাটি বর্তমানে রংপুর স্পেশাল জজ আদালতে বিচারাধীন আছে।
×