ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মেন্দির সঙ্গে জয়ের কোথাও বৈঠক হয়নি ॥ ফিলিস্তিনী চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স

মোসাদই আইএসকে অর্থ অস্ত্র খাদ্য সরবরাহ করছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৭ নভেম্বর ২০১৬

মোসাদই আইএসকে অর্থ অস্ত্র খাদ্য সরবরাহ করছে

তৌহিদুর রহমান ॥ ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনের চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে ইসরাইলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফাদির কোথাও কোন বৈঠক হয়নি। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় থেকেই বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সম্পর্কের গভীর ভিত্তি তৈরি হয়। ফিলিস্তিনী প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত ছিলেন একজন স্বতন্ত্র ও অনন্য ব্যক্তি। রবিবার জনকণ্ঠকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন। ফিলিস্তিনী মুক্তিসংগ্রামের মহান নেতা ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জনকণ্ঠকে এক বিশেষ সাক্ষাতকার দেন ফিলিস্তিনের চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান। গুলশানে ফিলিস্তিন দূতাবাসে দেয়া সাক্ষাতকারকালে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র এবং তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে ইসরাইলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফাদির কোথাও কোন বৈঠক হয়নি। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা থেকে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে ওই বৈঠকের বিষয়ে বিশেষ অনুসন্ধান করা হয়েছে। অনুসন্ধান শেষে আমরা একশ’ ভাগ নিশ্চিত হয়েছি জয়ের সঙ্গে মেন্দি সাফাদির কোথাও কোন বৈঠক হয়নি। তবে গণমাধ্যমে ওই বৈঠকের ভিত্তিহীন খবর প্রকাশ করা হয় বলেও তিনি জানান। চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ফিলিস্তিনকে ভালবাসে। এক্ষেত্রে এখানে কোন রাজনৈতিক বিভেদ নেই। এটা শুধু এখানকার মুসলিমরাই নয়, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীও ইসরাইলের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করেছে। অনেক বাংলাদেশী ফিলিস্তিনের হয়ে যুদ্ধও করেছে। এছাড়া বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী ও মেন্দি সাফাদির বৈঠকের খবর প্রকাশ হয়ে পড়লে বিএনপির নেতা-কর্মীরাই সেই বৈঠকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। তবে আসলাম চৌধুরী ও মেন্দি সাফাদির বৈঠকের খবর জানতে পেরে আমরা খুবই রাগান্বিত ছিলাম। তিনি বলেন, মেন্দি সাফাদির সঙ্গে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ও ইসলামিক স্টেটের গভীর সম্পৃক্ততা রয়েছে। বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় থেকে বাংলাদেশ-ফিলিস্তিন সম্পর্কের গভীর ভিত্তি তৈরি হয়। ইয়াসির আরাফাত ও শেখ মুজিবুর রহমান দুজনের বয়স ছিল একই। দুজনেই দেশের জন্য জেল খেটেছেন। লড়াই করেছেন। আপনি যদি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়েন, তাহলেও ফিলিস্তিন ও ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্পর্কের বিষয়ে জানতে পারবেন। বঙ্গবন্ধু সেখানেও বাংলাদেশ-ফিলিস্তিনের কথা লিখেছেন। অনেক বাংলাদেশী ফিলিস্তিনের হয়ে যুদ্ধ করেছেন। এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশ-ফিলিস্তিন সম্পর্ক এখন উপভোগ্য। ভবিষ্যতেও আমাদের দুই দেশের এমন গভীর সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে বলেও আমার বিশ্বাস। ফিলিস্তিনের বর্তমান অবস্থা কেমন প্রশ্নের উত্তরে ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান বলেন, ফিলিস্তিনের নাগরিকরা দুঃখ কষ্ট ভোগ করে আসছে। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী দুর্ভোগের শিকার ফিলিস্তিনবাসী। এরজন্য দায়ী ইসরাইল। তাই ইসরাইলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই অব্যাহত রয়েছে। আমাদের শত্রু শুধু কয়েকজন ইহুদীই নয়। আমরা একটি কঠিন সময় পার করছি। কেননা ইসরাইলকে পশ্চিমারা শক্তিশালী করছে। তারাই ইসরাইলকে টিকিয়ে রেখেছে। ফিলিস্তিন আরব ভূখ-ের একটি অংশ। এটা কোন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। সংঘাতপূর্ণ এলাকা হওয়ায় বিশ্ববাসীর নজর সব সময় ছিল, এখনও রয়েছে। ফিলিস্তিনী মুক্তি সংগ্রামের মহান নেতা ইয়াসির আরাফাতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইয়াসির আরাফাত একজন স্বতন্ত্র ও অনন্য ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ছিলেন এমনই একজন ব্যক্তি যিনি জীবন ও মৃত্যুকে কখনই ভয় পাননি। তিনি ভবিষ্যতে কি ঘটতে যাচ্ছে, তা অনুধাবন করতে পারতেন। ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে আমি একটি সফরে চীনে গিয়েছিলাম। সে সময় আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি। ইয়াসির আরাফাত আমার অসুস্থতার কথা জানতে পেরে আমার খোঁজ নেন। আমার তখন এলার্জির সমস্যা ছিল। সেই খবর জানতে পেরে আমাকে তিনি চিকিৎসার জন্য মস্কো পাঠান। সেই ঘটনা আমার প্রায়ই মনে পড়ে। ইয়াসির আরাফাত ৬০ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন। তাকে আরও আগে বিয়ে করার জন্য আমরা সব সময় চাপ প্রয়োগ করতাম। তবে রাজনৈতিক ব্যস্ততার জন্য তার বিয়ে করতে দেরি হয়েছিল। বাংলাদেশে অবস্থানরত কূটনীতিক হিসেবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে তিনি শঙ্কিত কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে ইউসুফ রামাদান বলেন, আমি এখানে কখনই নিরাপত্তার অভাব বোধ করিনি। এখনও নিরাপত্তার অভাব বোধ করি না। হলি আর্টিজানের হামলার পরেও আমি ভীত নই। মধ্যপ্রাচ্যের অশান্ত পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে ইউসুফ রামাদান বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইরাক যুদ্ধ হয়। এরপর আল কায়েদার জন্ম হয়। আর এখন ইসলামিক স্টেটের জন্ম হয়েছে। এটা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এসব ঘটনার মধ্যে দিয়ে ইসরাইল লাভবান হচ্ছে। ইসরাইলই আইএসকে তৈরি করেছে। তারা অর্থ সহায়তা দিচ্ছে। আইএস দ্বারা ইসরাইলই লাভবান হচ্ছে। তবে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে আইএস দ্বারা পশ্চিমাদের কি লাভ হচ্ছে? লাভ হচ্ছে এটাই, যে সারাবিশ্বের সামনেই একটি ধারণা তৈরি করে দেয়া হচ্ছে, মুসলিম মানেই সন্ত্রাসী জাতি। একটি জঙ্গী গোষ্ঠী । বিষয়টি আমাদের সকলেরই ভেবে দেখতে হবে। ইরান ও সৌদি আরবের বর্তমান সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সৌদি আরব বা ইরান কোন দেশকেই দোষারোপ করছি না। তবে দুই দেশের সম্পর্ক এখন যেটা দাঁড়িয়েছে, সেটা মধ্যপ্রাচ্যের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক। মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামিক স্টেটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইএস বাহিনীতে এখন মোসাদের লোকজনই কাজ করছে। মোসাদই আইএসকে অর্থ, অস্ত্র, খাদ্য সরবরাহ করছে। ইসরাইলের একটি টিভিতেই সেই খবর প্রকাশ হয়েছে। উল্লেখ্য, আগামী ১১ নবেম্বর ফিলিস্তিনের মুক্তিসংগ্রামের নেতা ইয়াসির আরাফাতের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী। তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকায় নিযুক্ত চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স এই বিশেষ সাক্ষাতকার দেন।
×