ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আকিল জামান ইনু

টাটার রদবদল ও বাজারে প্রতিক্রিয়া

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ৬ নভেম্বর ২০১৬

টাটার রদবদল ও বাজারে প্রতিক্রিয়া

টাটার সাম্প্রতিক রদবদলে নড়েচড়ে বসেছে গোটা কর্পোরেট বিশ্ব। ফ্রম সল্ট টু সফটওয়্যার ১০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের এই কোম্পানির শীর্ষ পদে যে কোন পরিবর্তন কর্পোরেট বিশ্বের নজর কাড়বে সেটাই স্বাভাবিক। আর ভারতে টাটা শিল্প গোষ্ঠী সব সময়ই আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে। ভারতের সবচেয়ে সম্মানিত ও অভিজাত শিল্প গোষ্ঠী বলে বিবেচিত টাটা শিল্প পরিবার।অপরদিকে অপসারিত সাইরাস মিস্ত্রির অতীতও ফেলনা নয়। নিজ যোগ্যতার পাশাপাশি তারও রয়েছে দীর্ঘ পারিবারিক ঐতিহ্য। টাটা গোষ্ঠীর মূল সংস্থা টাটা সন্স। টাটা ব্র্যান্ডনেম ও ট্রেডমার্কের মালিকও তারা এই টাটা সন্সে টাটা ট্রাস্টের মালিকানা ৬৬%। আর সাইরাস মিস্ত্রির পারিবারিক কোম্পানি শাপুরাজ-পালোনজি গোষ্ঠীর হাতে রয়েছে টাটা সন্সের মালিকানার ১৮.৫%। এই শাপুরাজ পালোনজি গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান পালোনজি মিস্ত্রির ছেলে সাইরাস মিস্ত্রি। টাটাদের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত বন্ধু নির্মাণ সংস্থা শাপুরজি-পালোনজি গোষ্ঠী। সেই আস্থা ও বিশ্বাসের বন্ধনের ওপর নির্ভর করেই চার বছর আগে সাইরাস কে তার উত্তরাধিকারী বেছে নিয়েছিলেন তৎকালীন চেয়ারম্যান এমিরেটস রতন নাভাল টাটা। সে কারনে কোন রকম আভাস ছাড়াই সাইরাসের অপসারণ কৌতূহল সৃষ্টি করেছে কর্পোরেট জগতে। ধারণা করা হচ্ছে প্রিয় সাইরাসের অপসারণের পেছনে মূল ভূমিকাও রতন নাভাল টাটার। আপাতত অপসারণের আইনগত বৈধতার দিকটি বিবেচনা করে দেখছে শাপুরাজ-পালোনজি গোষ্ঠী। অন্যদিকে জানা যায়, রতন টাটাও নেমেছেন আঁটঘাট বেঁধেই। সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে টাটারা কথা বলেছেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরন ও প্রাক্তন সলিসিটার জেনারেল মোহন পারসরনের সঙ্গে। এ ছাড়া অপসারণের পর পরই বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠিতে জানিয়েছেন রতন নাভাল টাটা নিজে। নিজেই ফের নিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব। কিন্তু কেন এই পরিবর্তন? মুখ খুলছেন না সংশ্লিষ্ট কেউ। ধারণা করা হচ্ছে গোষ্ঠীর পরিচালনা পদ্ধতি নিয়ে সাইরাসের সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না টাটা ট্রাস্টের। সম্প্রতি সাইরাসের নেয়া কিছু কঠিন সিদ্ধান্তও তাদের পছন্দ হয়নি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইস্পাতের চাহিদা কমে যাওয়ায় ও সস্তার চীনা ইস্পাতের সঙ্গে পেরে না ওঠায় বিট্রেনে জলের দামে সে ব্যবসা বিক্রির সিদ্ধান্তের কথা। এ ছাড়াও রতন টাটার স্বপ্ন প্রকল্প ন্যানো গাড়ির প্রকল্পটি অলাভজনক বিধায় তা বন্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন সাইরাস। নিজ জমানায় একের পর এক বিদেশী সংস্থা অধিগ্রহণ করে টাটা গোষ্ঠীকে বহুজাতিক রূপ দিয়েছেন রতন টাটা। শুরুটা ২০০০ সালে ব্রিটিশ চা সংস্থা টেটলি দিয়ে। এরপর একের পর এক কিনে নিয়েছেন দেয়ু। সিঙ্গাপুরের ন্যাটস্টিল, কোরাস, ব্রিটেনের গাড়ি কোম্পানি জাগুয়ার ল্যান্ডরোভার ইত্যাদি। সে প্রেক্ষিতে সাইরাসের সিদ্ধান্তসমূহ টাটাদের ব্যবসায়িক নীতি বিরোধী বলে বিবেচিত হতেই পারে। এদিকে মিস্ত্রি অপসারণের আকস্মিক সিদ্ধান্তের ফলে শেয়ার দরপরতন ঘটেছে টাটার বিভিন্ন কোম্পানির। টাটা স্টিলের দর প্রতিশেয়ারে ১০.৭০ রুপী কমে ৪১৫.৫০ এ নেমে আসে। সফটওয়্যার মেজর টি.সি.এস কমেছে ১৭.৯০ রুপী। এ ছাড়াও দর হারিয়েছে টাটা পাওয়ার ও টাটা মটরস। এ ছাড়াও টাটা কফি টাটা কেমিক্যালস, টাটা ইলেক্সি, টাটা বেভারেজ এবং ইন্ডিয়ান হোটেলস এর দর ছিল বিপদসীমার কাছাকাছি। এ ছাড়াও গত সোমবার পর্যন্ত মোট বাজার চলতি মূলধন ছিল মিস্ত্রি অপসারিত হওয়ার দিনের চেয়ে ২২ হাজার রুপী কম। টাটা‘রা জটিলতা এড়াতে শাপুরাজ-পালোনজি গোষ্ঠীর হাতে থাকা তাদের শেয়ার কিনে নেয়াতেও আগ্রহী। কোম্পানি পরিচালনায় যে একটি বড় পরিবর্তন যে আসন্ন সেটি স্পষ্ট। সম্প্রতি টাটার তিন শীর্ষ নির্বাহীর পদত্যাগও সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। অবসর ভেঙ্গে ফেরা রতন টাটার পর কে হতে যাচ্ছেন নতুন চেয়ারম্যান সেটি দেখার অপেক্ষায় গোটা কর্পোরেট বিশ্ব। আলোচনায় আছেন পেপসির ঈন্দ্রা নুয়ি, ভোডাফোনের প্রাক্তন প্রধান অরুণ সারিন, টিসিএসের এন চন্দ্র শেখরন। আলোচনায় আছেন টাটা ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার নোয়েল টাটাও যিনি আবার সাইরাসের ভগ্নিপতি। সম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে সাইরাস বলেছিলেন, ‘সঠিক কারণে এবং সহানুভূতির সঙ্গে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পেলে চলবে না।’ তখন কে ভেবেছিল সেই কঠিন সিদ্ধান্তের খড়গ তার উপরই নেমে আসবে কোন সহানুভূতি ছাড়াই!
×