ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সৌরবিদ্যুতে জ্বলছে গ্রামীণ সড়কবাতি

‘আগে আছিল আন্ধার এখন কি রোশনাই হইছে’

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৬ নভেম্বর ২০১৬

‘আগে আছিল আন্ধার এখন কি রোশনাই হইছে’

সমুদ্র হক ॥ সূর্য জ্বালানিতে (সান ফুয়েল, সোলার প্যানেল বা সৌর বিদ্যুত হিসেবে অধিক পরিচিত) জ্বলেছে এবার গ্রামীণ সড়ক বাতি। আলোকিত করেছে এলাকা। মহাস্থানগড়ের লোকজন বলাবলি করে ‘আগে আছিল আন্ধার (অন্ধকার) এখন কি রোশনাই (আলোকিত) হইছে।’ বগুড়ার মহাস্থানগড়ের শিলাদেবীর ঘাট এলাকার ২২টি পয়েন্টে স্টিলের বিশেষ ধরনের সোলার পোলে এই বাতি বসানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকারে গ্রামীণ সড়কেও সৌর বিদ্যুত আলো দিচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচীর আওতায় সৌর বিদ্যুতের এ সড়ক বাতি বসেছে। ইডকলের সহযোগিতায় ঢাকার রিমসো ফাউন্ডেশন এই এলইডি সৌর বাতিগুলো বসিয়েছে। মহাস্থানগড় বাজার এলাকা থেকে শিলাদেবীর ঘাট হয়ে নদীর ওপারের গ্রামীণ রাস্তার প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই বাতি স্থাপিত হয়েছে। সড়কের এই সৌর বিদ্যুতের আলোয় অনেক এলাকা আলোকিত হয়েছে। এলাকার লোকজন আগে অন্ধকারে চলাচল করত। এখন পথ অলোয় ভরেছে। সূত্র জানায়, আগামী বছরে এ সোলার সড়ক বাতি আরও সম্প্রসারিত হয়ে মহাস্থানের অনেক গ্রামীণ সড়কে পৌঁছানো হবে। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি এলাকার গ্রামীণ রাস্তায় সোলার সড়ক বাতি বসবে। এতে উৎপাদিত বিদ্যুতের চাপ অনেকটা কমে যাবে। এলাকার লোকজন জানান, মহাস্থানগড় এলাকার শিলাদেবীর ঘাট থেকে শিবগঞ্জের দিকে যাওয়ার রাস্তায় প্রতিনিয়ত ছিনতাইসহ নানা অপরাধ হতো। সড়ক বাতি না থাকায় অপরাধীরা অপরাধ করে পালিয়ে যেতে সক্ষম হতো। পুলিশও অনেক সময় সড়ক বাতির অভাবে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারত না। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও পল্লী বিদ্যুত সমিতির (পবিস) পোলে যে বাতি আছে তা বিচ্ছিন্নভাবে, যা গ্রামের পুরো এলাকা কভার করে না। এ অবস্থায় উন্নতমানের সাশ্রয়ী এলইডি সৌর বাতি এলাকাকে আলোকিত করেছে। বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ জানান, সৌর বিদ্যুতের এ সড়ক বাতিতে বিদ্যুত উৎপাদনের ওপর কোন চাপই পড়বে না। উল্টো বিদ্যুত সাশ্রয় হবে। বিশেষ ধরনের এ সৌর বিদ্যুতের বাতি রক্ষণাবেক্ষণ খুবই সহজ। স্বয়ংক্রিয়ভাবে দিনভর সূর্যের জ্বালানি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে রাতভর বাতি দেবে। কোন সুইচ নেই। সেন্সরের মাধ্যমে কাজ করবে। সোলার প্যানেল ডাইরেক্ট কারেন্ট (ডিসি) টু ডিসি। প্রতিটি সোলার প্যানেলের সঙ্গে সংযুক্ত করা আছে প্রতিটি ২০ ওয়াটের ৪০টি করে এলইডি বাল্ব, যা স্বচ্ছ আলো দেয়। কয়েক দিন আগেও মহাস্থানগড়ের শিলাদেবীর ঘাট এলাকা ও গ্রামীণ সড়ক রাতে থাকত ঘুটঘুটে অন্ধকারে। সকলেই মনে করেছিল এ এলাকা বুঝি আর আলোকিত হবে না। গ্রামের সেই ভাবনা দূর করে আলোকিত করেছে সূর্যের জ্বালানি সৌর বিদ্যুত। শিবগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়ার প্রকল্পটি বাস্তবায়নের আওতায় সড়ক বাতি স্থাপনে বিশেষ উদ্যোগ নেন। তারই আলোকে সোলার সড়ক বাতি বসানো হয়। এই বাতি বিদ্যুতের বাতির চেয়ে অনেক সাশ্রয়ী এবং টেকসই। বিষয়টি এলাকার লোকজন জানার পর আশ্বস্ত হয়েছে এই ভেবে যে, এলাকা আর কখনও অন্ধকারে থাকবে না।
×