ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাকসুদুল আহসানের সিলেকটিভ ওয়ার্কস

হানাহানির বিপরীতে মানবিক চাওয়া, রং রেখা ফর্মের কাব্য

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৬ নভেম্বর ২০১৬

হানাহানির বিপরীতে মানবিক চাওয়া, রং রেখা ফর্মের কাব্য

মোরসালিন মিজান ॥ সময়টা খুব বেশি নয়। কমও বলা যাবে না। গত প্রায় ২৫ বছর ধরে ছবি আঁকছেন মাকসুদুল আহসান। ১৯৯৪ সালে অনুষ্ঠিত হয় শিল্পীর প্রথম একক প্রদর্শনী। তারপর থেকে দলীয় এবং একক মিলিয়ে অনেক উপস্থাপনা। এ সময়ের মধ্যে নিজেকে তিনি ভেঙ্গেছেন। গড়েছেন। নিরীক্ষাপ্রিয় শিল্পী এক চিন্তায় স্থির থাকেননি। সচেতনভাবেই পরিবর্তনপ্রিয়। সেভাবেই পথ চলেছেন। তার বহুমাত্রিক পরিভ্রমণের নাতিদীর্ঘ ইতিহাস ‘সিলেক্টিভ ওয়ার্কস অব টুয়েন্টি ফাইভ ইয়ারস।’ শিরোনামই বলে দেয়, ২৫ বছর ধরে আঁকা ছবির বিশাল ভা-ার থেকে কিছু আলাদা করেছেন শিল্পী। নির্বাচিত ছবি নিয়ে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় আয়োজন করা হয়েছিল তাঁর বিশেষ একক প্রদর্শনী। মাকসুদুল আহসানের বিষয়ভিত্তিক কাজ। বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ছবি এঁকেছেন। সিরিজ চিত্রকর্মে নিজের চারপাশের জগৎ। মনের দোলা। বিভিন্ন সময়ের কাজ হওয়ায়, বৈচিত্র্যটা বেশ চোখে পড়ে। শিল্পী নিজেও সচেতনভাবে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে পছন্দ করেন। ফলে একক প্রদর্শনীটি ঠিক একক হয়ে থাকে না। যেন অনেকের! মাকসুদুল সীমিত রং আর রেখার ব্যবহারে ক্যানভাস সাজান। রং রেখা ফর্মের সাহায্যে মনের অভিব্যক্তিগুলোকে ধরে ধরে সাজান। কখনও মূর্ত তিনি। কখনও বিমূর্ত। যদিও তিনি নিজে মূর্ত বিমূর্ত ভাবনা দ্বারা প্রভাবিত নন। একটু উচ্চতর চিন্তা থেকেই মনে করেন, যে ছবি আঁকা হয় তা বিমূর্ত থাকে না। প্রদর্শনীর বেশকিছু ছবিতে পরিচ্ছন্ন কম্পোজিশন। অবয়বের ব্যবহারে বক্তব্যধর্মী হয়েছেন শিল্পী। কিছু নতুন কাজ আছে। আগের কাজ তারও বেশি। এরপরও সমকালীন মনে হয়। ‘পোস্টমর্টেম’ সিরিজের ছবিগুলোর কথাই যদি ধরা যায়, দেশে দেশে চলা হানাহানির বিপরীতে দাঁড়িয়ে শান্তির জন্য যেন গুমরে কাঁদে শিল্পীমন। রাজনীতির বিকৃত রূপ তুলে ধরে ‘ব্ল্যাক’ সিরিজ। ধর্মের নামে যে অধর্ম তার স্বরূপ সন্ধান করেন। একই সঙ্গে প্রতিবাদী চেতনাকে জাগিয়ে তোলার প্রয়াস নেন। আজকের ঘুনে ধরা সমাজ। অযুত অন্যায়। অসুন্দর। কারও তবু কিছু যায় আসে না। পোকায় কাটছে মগজ। অলস মস্তিষ্কে বিদ্রোহ নেই। বিপ্লবের চিন্তা অনুপস্থিত। এ অবস্থায় যৌবনের কাছে ফিরে যান। তারুণ্যের যে শক্তি সাহস, তিনি তা রং এবং রেখায় প্রকাশ করেন। এ জন্য রূপকের আশ্রয় নেন শিল্পী। ‘খ্যাপা’ শিরোনামে সিরিজ চিত্রকর্ম গড়েন। সুনীল লিখেছিলেনÑ দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড়...। মাকসুদুল আহসান দুরন্ত ষাঁড়কে আশ্রয় করেন। কখনও অ্যাক্রেলিকে আঁকেন। কখনও চারকোল অন পেপার। ষাঁড় আঁকতে গিয়ে বিশেষ এক ধরনের ক্ষিপ্রতা এক ধরনের গতি গতি দান করেন শিল্পী। ফলে প্রাণ পায় চিত্রকর্মগুলোও। ‘ডিজায়ার’ সিরিজটি আরও বেশি মুগ্ধ করে। এ সিরিজের বেশ কয়েকটি ছবি। অ্যাক্রেলিক মাধ্যমে আঁকা। ছবিগুলো আকারে বড়। চমৎকার ডিটেইল। এখানে ঘোড়াকে কেবল বাহন হিসেবে নয়, বন্ধুর রূপ দেয়া হয়েছে। আরও গভীরে প্রবেশ করা গেলে এই ঘোড়াই হয়ে ওঠে পথপ্রদর্শক। রূপকের আশ্রয়ে শিল্পী বলতে চান, প্রত্যেক মানুষ এমন বিশ্বস্ত একজন বন্ধু চান। প্রিয় সহচরের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। মাকসুদুলের এনটিটি সিরিজে রং রেখা আর ফর্মের নিপুন খেলা। শিল্পীর জাপিত জীবন পরিপার্শ্ব এখানে দৃশ্যমান হয়। রঙের ব্যবহারে যে পরিমিতি, তাতেই বলা হয়ে যায় অনেক কথা। শিল্পী কাব্যিক হয়ে ধরা দেন। তার চিত্রকর্ম ভাষা পায়। ল্যান্ডস্কেপগুলোও মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে। শিল্পীর ভাষায়, নির্ভেজাল ল্যান্ডস্কেপ! এগুলো ‘সলিটিউড’ এবং ‘ইল্যুসিভ বিউটি’কে ধারণ করে। ২৮ অক্টোবর শুরু হওয়া প্রদর্শনী শনিবার শেষ হয়েছে।
×