ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন দাবি বিএনপির

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৬ নভেম্বর ২০১৬

বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন দাবি বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগ জড়িত বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। শনিবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন, শুক্রবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে তাতে আওয়ামী লীগের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর স্থানীয় তিন নেতাকে বহিষ্কার করায় আওয়ামী লীগকে ধন্যবাদ। বিএনপির পক্ষ থেকে হাফিজউদ্দিন আহমেদ নাসিরনগরের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দিতে একজন বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানান। একই সঙ্গে গত ৭ বছরে হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি দখলসহ বিভিন্ন হামলার ঘটনার পেছনে শাসক দলের যেসব লোক রয়েছেন, তাদের পরিচয় প্রকাশ এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার দায় নিয়ে সরকারের পদত্যাগও দাবি করেন। নাসিরনগরে মন্দিরসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগ জড়িত অভিযোগ করে হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন, এ ঘটনায় দেশবাসীর কাছেও স্পষ্ট হয়েছে কারা এ ধরনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার হোতা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ তাদের নেতৃবৃন্দকে সাময়িক বহিষ্কার করে ঘটনাটি সামলাবার চেষ্টা করেছেন। তারপরও আওয়ামী লীগকে একটু ধন্যবাদ জানাতে চাই, দলীয় নেতৃবৃন্দকে শাস্তি দিয়ে জনসমক্ষে তাদের স্বরূপ উন্মোচন করেছেন। দ্বিতীয় দফায় হিন্দুদের ওপর হামলার জন্য পুলিশের দায়িত্বহীনতাকে দায়ী করে হাফিজউদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে পুলিশ বাহিনীর পেশাদারিত্ব একেবারেই নেই। একটি দলীয় বাহিনীতে পরিণত হওয়ায় তারা তাদের মৌলিক দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। অথচ তারা বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী নেতাকর্মীদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। মামলা দায়েরের কাজেই এই পুলিশ বাহিনীর অধিকাংশ সময় ব্যয় হচ্ছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা হিন্দুদের নিজেদের ভোট ব্যাংক ভাবলেও তারপরও কেন তাদের ওপর এই হামলা? এর প্রধান কারণ হচ্ছে, আওয়ামী লীগের আর ভোটের প্রয়োজন নেই। হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নির্দেশে শুক্রবার বিবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও বাড়িঘরে হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহমর্মিতা জানাতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে ধ্বংস লীলা দেখে মর্মাহত। আমরা এ হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুদের বক্তব্য তুলে ধরে তিনি বলেন, নাসিরনগরে আমরা কোন রাজনীতি করতে যাইনি। ঘটনাস্থলে এর ব্যাপকতা দেখে আমরা বেদনাহত হয়েছি, যার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। স্বাধীন বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ ধরনের হামলা আমাদের স্তম্বিত করেছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন অভিযোগ করেছেন, পুলিশ বাহিনী ওই হামলার সময় তাদের কোন কাজে লাগেনি। বরং তাদের প্রতিবেশী মুসলিম পরিবারগুলো এসে মন্দির ভাঙ্গার কাজে বাধা দিয়েছে এবং হিন্দু পরিবারগুলো যখন আশ্রয় নিতে গেছেন, তাদের আশ্রয় দিয়েছে। মেজর হাফিজ বলেন, প্রথম হামলার ঘটনা অনাকাক্সিক্ষত বলা যেতে পারে। কিন্তু পরে আবার ৬টি বাড়িতে নতুন করে আগুন দেয়া হয়েছে। এতেই প্রমাণিত হয় এর পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করেছেন, হামলা হয়েছে ১টার দিকে আর পুলিশ গেছে বিকেল ৫টার দিকে। তাই আমি বলব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হলে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যেত। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের কাছে দেশের হিন্দু-মুসলমান কেউই নিরাপদ নয়। কারও জীবনের মূল্য তাদের কাছে নেই। তাই বিভিন্ন সময় জনগণের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। হাফিজউদ্দিন বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় আমরা লক্ষ্য করেছি, সরকারের ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা হিন্দুদের সম্পত্তি গ্রাস করছেন। পুরনো জেলাগুলোতে স্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকেই হিন্দুদের সম্পত্তিগুলো আওয়ামী লীগের লোকেরা দখল করে রেখেছেন এটা প্রমাণিত সত্য। আমরা চাই, যে সব লোক হিন্দুদের সম্পত্তি দখল করেছে তাদের একটি তালিকা করে তাদের বিচার করা হোক। তিনি বলেন, নাসিরনগরে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ সহায়তা দিতে বিএনপি নেতা সৈয়দ একরামুজ্জামানের নেতৃত্বে অচিরেই বিএনপি কাজ শুরু করবে। নাসিরনগরে হিন্দুদের ওপর হামলায় বিএনপি জড়িতÑ আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব উল হানিফের এমন বক্তব্যর জবাবে বিএনপি নেতা হাফিজউদ্দিন বলেন, ‘আজ দেশের আবহাওয়া খারাপ। ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত চলছে। হয়ত আওয়ামী লীগ নেতারা বলবেন, এটার জন্য বিএনপি দায়ী। আরও বলতে পারেন, এর জন্য জিয়াউর রহমান দায়ী। তিনি বলে গেছেন ২০১৬ সালে আবহাওয়া খারাপ করতে হবে।’ তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের হাস্যকর কথা এখন কেউ বিশ্বাস করে না। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নাসিরনগর সফরকারী বিএনপির প্রতিনিধি দলের সদস্য সঞ্জীব চৌধুরী, গৌতম চক্রবর্তী, ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, সুশীল বড়ুয়া, আবদুল আউয়াল খান প্রমুখ। আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি হলেই সাম্প্রদায়িক হামলা ঘটানো হয়, নজরুল ॥ যখনই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি হয় তখনই নাসিরনগরের মতো সাম্প্রদায়িক হামলা ঘটিয়ে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ছাত্রদল ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় কমিটি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বিবাড়িয়ার ঘটনায় সরকারী দলকে দায়ী করে নজরুল ইসলাম বলেন, যারাই নাসিরনগরে যাচ্ছেন তারাই বলছেন, এই ঘটনার সঙ্গে সরকারী দল জড়িত। কিন্তু ঘটনার জন্য বহিষ্কার করা হলো আওয়ামী লীগ নেতাদের আর এখন তারা ঘটনার জন্য দায়ী করছেন বিএনপিকে। এ ধরনের রসিকতা দিয়ে রাজনীতি চলে না। নাসিরনগরের ঘটনায় দলের পক্ষ থেকে আগেই আমরা বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছি। আবারও আমরা এ ঘটনায় দায়ী সবাইকে বিচারের আওতায় আনার দাবি করছি। নজরুল খান বলেন, ৭ নবেম্বর সৈনিক হত্যার জন্য জিয়াউর রহমান দায়ী নন, সরকারের আশপাশের লোকজন দায়ী। বাকশালের মাধ্যমে আমরা যা হারিয়েছিলাম তা পুনর্প্রতিষ্ঠা করাই ছিল এই দিনের আদর্শ। কিন্তু ওইদিন যারা সৈনিক হত্যা করেছে, তারাই আজ আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এমপি হয়েছেন। আয়োজক কমিটির সভাপতি আলী আকবর চুন্নুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার, দলের নেতা শরীফ মোঃ শাহ আলম, ওবাইদুল হোসেন টিপু, শাহজাহান মিয়া সম্রাট প্রমুখ। অধ্যাপক মান্নানের মুক্তি চাই, আমির খসরু ॥ অন্যায়ভাবে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এ মান্নানকে কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, অবিলম্বে অধ্যাপক এম এ মান্নানের মুক্তি চাই। শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অধ্যাপক এম এ মান্নান মুক্তি পরিষদ আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন। আমির খসরু বলেন, আওয়ামী লীগ রাজনীতির বাইরে গিয়ে সন্ত্রাসের দল তৈরি করেছে। আওয়ামী লীগের যারা রাজনীতি বিশ্বাস করেন তারা এখন দলে নেই। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু বিরোধী দলকে ধ্বংস নয়, আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্যও কিছু রেখে যাচ্ছেন না। আওয়ামী লীগের সম্পর্ক পুলিশ ও র‌্যাবের সঙ্গে, রাজনীতির সঙ্গে নয়। তাই আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল এই দাবি করার সুযোগ আর তাদের নেই। প্রতিবাদ সভায় সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আপনাদের যদি গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকে তাহলে নয়াপল্টনে ৮ নবেম্বর সমাবেশের জন্য আমরা যে অনুমতি চেয়েছি তার অনুমতি দিন। বিএনপি সমাবেশের জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। সমাবেশ হবে কি না তা জনগণের ওপর ছেড়ে দিন। জনগণ যদি বিএনপিকে উপেক্ষা করে তাহলে জনসভায় আসবে না। আপনারা কেন সমাবেশ প্রতিহত করার হুমকি দিচ্ছেন। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির সহ-শ্রমিক বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ূন কবির খান, ওলামা দলের সভাপতি এম এ মালেক, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল।
×