ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যবসায়ীরা সময় চাইবে এক মাস

নির্দিষ্ট সময়ে এপিআই শিল্প পার্কের প্লট বরাদ্দ সম্ভব হয়নি

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ৬ নভেম্বর ২০১৬

নির্দিষ্ট সময়ে এপিআই শিল্প পার্কের প্লট বরাদ্দ সম্ভব হয়নি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সরকার আন্তরিক কিন্তু ব্যবসায়ীদের অনাগ্রহ। তাই ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ওষুধ শিল্প মালিকদের কাছে ওষুধ শিল্পনগরী প্রকল্প বা এপিআই শিল্প পার্কের প্লট বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হয়নি। শিল্প মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্লটের বরাদ্দ চেয়ে আবেদনই করেননি ওষুধ উৎপাদকরা। মন্ত্রণালয়টির দাবি, এ খাতের মালিক সমিতির সদস্যদের মধ্যে সমন্বয়হীনতাই এজন্য দায়ী। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এর আগে জানিয়েছিলেন, অক্টোবরের মধ্যে ওষুধ শিল্প মালিকদের কাছে এপিআই শিল্প পার্কের প্লট বরাদ্দ দেয়া হবে। তখন তিনি বলেছিলেন, প্লট বরাদ্দ দেয়ার পরপরই ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদনের কারখানা স্থাপন শুরু হবে। এর ফলে ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল খাতে আমদানি খরচ ৭০ শতাংশ কমে আসবে। কিন্তু, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্লট বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাওয়া যায়নি বলেই এ কাজটি বেশি দূর এগোয়নি। ওষুধ শিল্প মালিক সমিতির সদস্যরা নিজেদের মধ্যে বিষয়টি সমন্বয় করতে পারেনি। পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও পাওয়া যায়নি। ফলে এ কাজটি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এদিকে, প্লটের বরাদ্দ চাওয়ার ক্ষেত্রে ওষুধ শিল্প মালিকদের পক্ষ থেকে আরও এক মাস সময় চাওয়া হতে পারে বলেও জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া জানিয়েছেন, এখানে আমাদের কোন গাফিলতি নেই। ওষুধ শিল্প মালিকদের কাছে আমরা যাদের প্লট বরাদ্দ দেয়া হবে তাদের তালিকা চেয়েছি। কিন্তু, তারা তা দিতে পারেনি। তবে আমি যতদূর জানি, তারা তাদের তালিকা তৈরি করেছেন। এছাড়া তারা কেন্দ্রীয়ভাবে বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ জন্যই হয়ত সময় লাগছে। তিনি জানান, তালিকা পেলেই প্লট বরাদ্দ দিয়ে দেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি এস এম শফিউজ্জামান জানিয়েছেন, আমরা নিজেদের মধ্যকার কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারিনি। শিল্প নগরীতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার হবে আমাদের ব্যবসায়ীদের টাকায়। সেটি ম্যানেজ করাও একটি বড় কাজ। সেটি করতে কিছুটা সময় লাগছে। কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার নির্মিত না হলে তো শিল্প চালানো যাবে না। এছাড়াও ওষুধ শিল্পের জন্য পেনিসিলিন ও ননপেনিসিলিন পণ্য উৎপাদন ভিন্নভাবে করতে হয়। তাই এর কাঁচামালও হয় ভিন্ন। শিল্প মালিকরা সে সংক্রান্ত তথ্যও জমা দেয়নি। তাই আমরা আমাদের তালিকা চূড়ান্ত করতে পারিনি। হয়ত অতি অল্প সময়ের মধ্যেই এটি করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকেও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সুবিধা সেখানে নিশ্চিত হয়নি। সেখানে গ্যাস সংযোগ পাওয়া যায়নি। পাওয়া যায়নি বিদ্যুত সংযোগও। তাই সব কিছু মিলিয়েই মন্ত্রীর দেয়া সময় অনুযায়ী প্লট হস্তান্তর হয়নি। এস এম শফিউজ্জামান জানিয়েছেন, আমরা সরকারের কাছে আরও এক মাসের সময় চাইব। আগামী সপ্তাহে সময় চেয়ে আবেদন দেব। আমরা আগামী ৩০ নবেম্বর পর্যন্ত সময় চাইব। এই সময়ের মধ্যেই শিল্প মালিকদের তালিকা প্রস্তুত করে জমা দেব। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত বিসিকের আওতায় রাজধানীর অদূরে মুন্সীগঞ্জের বাওশিয়ায় ২শ’ একর জমিতে গড়ে উঠবে ওষুধ শিল্পনগরী প্রকল্প (এপিআই শিল্প পার্ক)। শিল্পনগরীতে ৪২টি শিল্প ইউনিটের অনুকূলে প্লট বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জমির প্রতি শতাংশের মূল্য ধরা হয় ৩ লাখ ৯ হাজার টাকা। ৪২টি প্লটের মধ্যে ১০ বিঘা আয়তনের প্লট হবে ৩৮টি। আর ৮ বিঘা আয়তনের প্লট হবে ৪টি। এছাড়া উদ্যোক্তাদের নিজস্ব অর্থায়নে ওষুধ শিল্প পার্কে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে ওষুধ শিল্প উদ্যোক্তারা বরাদ্দ পাওয়া প্লটের বিপরীতে মূল্য পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো ও সার্ভিস চার্জ কমানোর প্রস্তাব দেন। এসব উদ্যোক্তার দাবির প্রেক্ষিতে শিল্পমন্ত্রীর নির্দেশে প্লটের মূল্য পরিশোধের সময়সীমা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে দশ বছর এবং বিসিক নির্ধারিত সার্ভিস চার্জ শতকরা ২০ ভাগ থেকে কমিয়ে সাড়ে ১২ ভাগ নির্ধারণ করা হয়। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ পেটেন্টেড ওষুধ উৎপাদনের জন্য বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা থেকে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ছাড় পেয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে দ্রুত এপিআই শিল্প পার্ক বাস্তবায়নে উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার তাগিদ সরকারের। এই শিল্প পার্কটি বাস্তবায়িত হলে ওষুধ শিল্প খাতে আমদানি ব্যয় সাশ্রয়ের পাশাপাশি রফতানি আয় বাড়বে বলেও মনে করে সরকারের নীতিনির্ধারকরা। বর্তমানে দেশে উৎপাদিত ওষুধ বর্তমানে বিশ্বের ১৩৩টি দেশে রফতানি হচ্ছে। উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশের ওষুধ শিল্প খাতে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার ওষুধ উৎপাদন হচ্ছে। এ উৎপাদন থেকে অভ্যন্তরীণ চাহিদার শতকরা ৯৭ ভাগ মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। এপিআই শিল্প পার্ক স্থাপন করা হলে ওষুধ শিল্পের কাঁচামালের দেশীয় চাহিদার শতকরা ৭০ ভাগ যোগান দেয়া সম্ভব হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত অর্থবছরে ৬৫৭ কোটি টাকার ওষুধ রফতানি হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে ৫৮১ কোটি টাকার ওষুধ রফতানি করা হয়েছে। ফলে আগের অর্থবছরের চেয়ে গত অর্থবছরে ওষুধ রফতানি বেড়েছে ১৩ শতাংশ। ওষুধ শিল্প মালিকরা জানিয়েছেন, আগামী ২০৩৩ সালের মধ্যে দেশে কাঁচামাল উৎপাদন হবে। তখন আরও বড় বাজার ধরা সম্ভব হবে। এপিআই শিল্প পার্কে প্রত্যেক কোম্পানি আলাদাভাবে কাঁচামাল উৎপাদন করবে।
×