ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উৎপলকান্তি বড়ুয়া

শরত ও শিউলি

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ৫ নভেম্বর ২০১৬

শরত ও শিউলি

শরত ও শিউলি যমজ ভাই-বোন। শরত ভাই। শিউলি বোন। দাদুন ওদের নাম রেখেছেন। শরত ঋতুর প্রথমদিন ওদের জন্ম বলেই ভাই-বোনের নাম রেখেছেন শরত আর শিউলি। নরোম ভোরের আলোয় ঝরঝরে সজীবতা চারপাশে। শিউলিতলায় ঝরা অনেক শিউলিফুল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। শিউলিকে ফুল কুড়িয়ে গিয়ে আবার পড়তে বসতে হবে। স্কুুলে তাদের দ্বিতীয় শ্রেণীর দ্বিতীয় সাময়িকী পরীক্ষা চলছে। আজ বাংলা পরীক্ষা। শিউলি একটা দু’টো করে তাড়াতাড়ি ফুলগুলো কুড়িয়ে নিতে লাগল। শিউলি ফুল। অনেক শিউলি ফুল ঝরে পড়ে আছে মাটিতে। গতকাল শরত কুড়িয়ে নিয়েছে সব ফুল। বলেছিল, আজও সব ফুল সে কুড়িয়ে নেবে শিউলি ঘুম থেকে ওঠার আগেই। কিন্তু না। শরত আজ ঘুম থেকে উঠতেই পারেনি এখনও। কাল, শরত শিউলিফুলগুলো নিয়ে খেলেছে সারাদিন। নষ্ট করে ফেলেছে তার অনেকটা। দাদুন বললেন- শরত, একটা শিউলির মালাত গাঁথতে পারতে। ফুল যে নষ্ট করতে নেই। ফুল সুন্দর, পবিত্র। ফুলকে ভালবাসতে হয়। গতরাতে শুতে গিয়ে শিউলি মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিল, যে ভাবে হোক আজ সকালে শরতের আগেই ঘুম থেকে উঠবেই। ফুলগুলো কুড়িয়ে নেবেই সে। হয়েছেও তাই। শিউলি ঝরে পড়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফুলগুলো কুড়াতে থাকে। দাদুনকে শিউলি একটা মালা গেঁথে দেবেই আজ। গত বৈশাখে ছোট পিসিমনির কাছে বেলি ফুলের মালা গাঁথা দেখে শিখেছে শিউলি। দাদুনের শিউলিফুল পছন্দ। শিউলিফুলের মালা হাতে দিয়ে দাদুনকে চমকে দেবে শিউলি আজ। পাশের বাড়ির বড়দিদুর উঠান। তাদের উঠানের এই শিউলি গাছে অনেক ফুল ফুটেছে এবারও। শরত-শিউলি বড়দিদুর অতি আদরের। যার পর নেই স্নেহ করে তাদের। বড়দিদুর ঘরে শরত-শিউলি মতো ছোটজন কেউ নেই। বড়দিদুর ঘরে-উঠানেই সারাদিন শরত-শিউলির অবাধ খেলাধুলা, আসা-যাওয়া। এ্যাই শেফলি! শেফালি! একপাশে ঝরে পড়া একটা শিউলি ফুল তার মিষ্টি ঘ্রাণ ছড়িয়ে শিউলিকে উদ্দেশ্য করে কথা বলে ওঠে। শিউলি ফুলের ডাকে, ডানে বায়ে সামনে পিছে তাকায়। কাউকে দেখতে না পেয়ে জিজ্ঞেস করে-কাকে ডাকছ? -কেনো, তোমাকে! -আমাকে? -হ্যাঁ, তোমাকে! -আমার নামত শিউলি। তোমার নামে নাম। আমি তো শেফালি নই। -হ্যাঁ, যা ভেবেছি ঠিক তাই! -মানে, তুমি কি ভেবেছ? -ভেবেছি, তুমি হয় তো জানোই না যে, তোমার আরেক নাম শেফালি। -মানে? বুঝিনি তো! -বলছি, শোনো। শিউলির আরেক নাম শেফালি। সেটা তুমি হয় তো জানো না। -তাই নাকি, খুব মজা তো! -হ্যাঁ, তুমি তোমার বাবা-মা অথবা দাদুন-দিদুর কাছে জেনে নিও। তাঁরা তোমাকে বলবে-শিউলি ফুলের আরেক নাম শেফালি। -হ্যাঁ, আচ্ছা-শিউলি মাথা কাত করে। -কাল শরত তো সব ফুল কুড়িয়ে নিয়েছে। আজ তুমি কুড়িয়ে নিলে। তুমি তো আজ দাদুনের জন্য মালা গাঁথবে, তাই না? -হ্যাঁ, তুমি ঠিক বলেছ। ওদের দু’জনের কথার ফাঁকে দু’হাতের উল্টো পিঠে দুই চোখ কচলাত কচলাতে বড়দিদুর উঠানে শিউলিতলার দিকে আসতে থাকে শরত। শরত শিউলিতলায় শিউলিকে আগে এসেছে দেখে থ খেয়ে যায়। মুখে কোন কথা সরে না। শিউলি শরতের দিকে তাকায়। তার মুখে বিজয়ের হাসি।
×