ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সাত রঙে ভুবন-জীবন

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ৫ নভেম্বর ২০১৬

সাত রঙে ভুবন-জীবন

সব শিশুকে সঙ্গে নিয়ে বদলে দেব পৃথিবী- স্লোগান নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বগুড়ায় ছোটদের ছবি আঁকার স্কুল সাতরং। ত্রিভুবন ও মানব জীবনের অধ্যায়কে সাতটি রঙে ভাগ করে শিশু মনের কল্পনাগুলোকে রং তুলিতে ধরে জীবনের এগিয়ে চলার পথ সৃষ্টি করছে এই স্কুল। সাতরঙের অনেক শিক্ষার্থী আজ দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মেধার পরিচয় দিচ্ছে। তরুণ প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক চন্দন কুমার রায় বললেন, সবাই যে শিল্পী হবে তা নয়। বরং ছবি আঁকার মাধ্যমে সুন্দর কিছু তৈরির সাহস ও শক্তি অর্জন করে সুনাগরিক হতে পারবে। যে শিশু নিজের ভাবনা ক্যানভাসে যত রূপে ফুটিয়ে তুলতে পারে, তার মেধার নিউরন সৃষ্টিশীলতার পথ তৈরি করে দেয়। এই শিশু আপন গতিতেই সংস্কৃতি জগতে প্রবেশ করে। যে জাতি তার নিজের সংস্কৃতিতে যত উন্নত, সেই জাতি তত দ্রুত দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায় উন্নয়নের ধারায়। ছবি আঁকা সে দীক্ষাই দেয়। বগুড়া শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথা থেকে উত্তর দিকে কবি নজরুল ইসলাম সড়ক ধরে এক শ’ মিটার হাঁটার পর আকবরিয়া গ্র্যান্ড হোটেলের গলি দিয়ে ভেতরে ঢুকলেই চোখে পড়ে সাত রং। শুক্র ও শনিবার চার শিফট এবং অন্যান্য দিনে তিন শিফট করে তিন শ’ শিক্ষার্থী ছবি আঁকা শিখছে। নার্সারি ক্লাস থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা ছবি আঁকে। বয়সভিত্তিক পাঁচটি বিভাগ আছে। স্কুলের শিক্ষক রয়েছেন আটজন। যাদের মধ্যে তিন নারী। তারা প্রত্যেকেই আর্ট কলেজ থেকে ডিগ্রীপ্রাপ্ত। প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক নিজেই আর্ট কলেজে অধ্যয়ন করেছেন। বললেন, ছেলেবেলায় কাগজে আঁকিবুকি থেকেই মনের মধ্যে গেঁথে যায় শিল্পী সত্তা। যার উত্তরণ ঘটিয়েছেন ছবি আঁকার স্কুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। তার স্কুলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো : ছবি আঁকার জন্য শিক্ষার্থীদের আউটিং করানো। চার দেয়ালের মধ্যে না রেখে তাদের প্রকৃতির সঙ্গে পরিচয় ঘটানো। প্রকৃতিই শিশু মনে সৃষ্টিশীলতার অধ্যায় তৈরি করে। ছবি আঁকার যেমন সীমারেখা নেই, এই স্কুলে ছবির আঁকার পাঠেও কোন সময় নির্ধারণ নেই। এমনও শিক্ষার্থী আছে, যে স্কুলে প্রথম শ্রেণীর পড়ার সময় ভর্তি হয়ে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ছবি আঁকার হাতকে ক্ষুরধার করেছে। স্কুলে দুস্থ ও প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা আছে। উদাহারণ দিলেন : বাকপ্রতিবন্ধী নবম শ্রেণীর ছাত্রী মাহিয়া ইসলাম, প্রতিবন্ধী এমামুল হাসান, বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী মৌসোনা। এরা জয়নুল আবেদীন আর্ট স্কুল থেকে স্বর্ণপদক পেয়ে ছবি আঁকার শিক্ষক হয়েছেন। স্কুলের শিক্ষার্থী গীতাঞ্জলী ফেবার ক্যাসেল প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে শীর্ষ স্থান অর্জন করে বর্তমানে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়ছে। রুহানী সাল সাবিল লাবণ্য একই প্রতিযোগিতায় বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম হয়ে বর্তমানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) লেখাপড়া করছে। এরকম অনেক দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে সাতরং। স্কুলে ছবি আঁকার সময় কখনও গান শোনানো হয়। এর উদ্দেশ্য গান একদিকে শিশু মনে আনন্দ দেয়, আরেকদিকে গানের কথা থেকেও তারা ছবি আঁকার বিষয় খুঁজে পায়। সাত রঙের একটি মজার ক্লাস হলো ‘বিগ ক্লাস’। মাল্টি মিডিয়া প্রজেক্টরে দেশ বিদেশের ঐতিহাসিক ও প্রসিদ্ধ স্থান, প্রকৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার পাশাপাশি বরেণ্য ও গুণীজনদের পরিচিতি তুলে ধরা হয়। বললেন, বর্তমানের শিশুরা একাডেমিক শিক্ষায় এতটাই চাপে থাকে যে দেশের ও দেশের বাইরের কোন কিছু জানার সময় পায় না। তাই এই ব্যবস্থা। চন্দন কুমার রায় আগামীতে ছবি অঁাঁকার এই স্কুলকে মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলে পরিণত করতে চেয়েছেন। -সমুদ্র হক, বগুড়া থেকে
×