ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীর ব্যস্ততম সড়কে বেওয়ারিশ গরুর বিচরণ

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ৫ নভেম্বর ২০১৬

রাজশাহীর ব্যস্ততম সড়কে বেওয়ারিশ গরুর বিচরণ

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ বিশে^ নির্মল শহরের তালিকায় স্থান পাওয়া পরিচ্ছন্ন রাজশাহী নগরীর ব্যস্ত সড়ক থেকে শুরু করে রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল এমনকি হাসপাতালের মধ্যে গরু, ছাগল, ভেড়ার অবাধ বিচরণে প্রতিনিয়ত নতুন বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। নগরীজুড়ে বেওয়ারিশ গরু, ছাগল ও ভেড়ার পাল চরে বেড়ালেও এসব নিয়ন্ত্রণে মাথাব্যথা নেই কারও। নগরীর রাস্তায় অবাধে ঘুরে বেড়ানো এসব গরু-ছাগলের পাল নিয়ে খোদ সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশ প্রশাসনেরও কোন ভ্রƒক্ষেপ নেই। অথচ অবাধে বেওয়ারিশ গরু, ছাগল, ভেড়ার কারণে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। রাজশাহী নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত সড়কে দৃষ্টি দিলেই যে কারও চোখ পড়বে বেওয়ারিশ গরু, ছাগলের অবাধ বিচরণ। কখনও কখনও ব্যস্ত সড়কে এসব গরু-ছাগল-ভেড়া শুয়ে আয়েশ করে। পথচারী ও গাড়িঘোড়া চলাচল করে এসব গরু-ছাগলের পাশ কাটিয়েই। দীর্ঘদিন ধরে নগরের ব্যস্ত সড়কে বেওয়ারিশ গরুর অবাধ বিচরণ সবার দৃষ্টি কাড়লেও এ ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি কেউ। এ তো গেল রাস্তাঘাট। সুন্দর পরিচ্ছন্ন রাজশাহী রেলস্টেশনের প্ল্যাটফরমেও হরহামেশাই দেখা মেলে গরুর পালের। প্ল্যাটফরমের ওপর মলমূত্র ত্যাগ করে এসব গরু। ট্রেন থেকে যাত্রীদের নেমেই ধাক্কা লাগে গরুর সঙ্গে। শুধু তাই নয়, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করিডর ও বারান্দায় মাঝেমধ্যে দেখা মেলে দু-একটি গরুর সার্বক্ষণিক বিচরণ। এসব গরুর মালিক কারা, কিভাবে শহরময় ছেড়ে দেয়া হয়- এ নিয়ে মুখ খোলে না কেউ। যেন বেওয়ারিশ গরুর দল চরে বেড়ায় শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। নগরীর ব্যস্ততম সাহেববাজার জিরো পয়েন্ট, সোনাদীঘির মোড়, আরডিএ মার্কেটের সড়ক, নগর ভবনের সামনে, পঞ্চবটি এলাকা, কেন্দ্রীয় ঈদগাহ সড়ক, শিরোইল বাসস্ট্যান্ড, কাশিয়াডাঙ্গা বাইপাস সড়কগুলো ইদানীং বেওয়ারিশ গরুর বিচরণক্ষেত্র হিসেবে পরিণত হয়েছে। এতে একদিকে যেমন ম্লান হচ্ছে নগর সৌন্দর্য, অন্যদিকে ঝুঁকি বাড়ছে দুর্ঘটনার। সরেজমিন ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীর পদ্মা নদীর পাড় থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যস্ত সড়কের সৌন্দর্য এখন ম্লান করে দিয়েছে বেওয়ারিশ গরুর পাল। নগরবাসীর বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত পদ্মার পাড় তো গরুর খোয়াড়ে পরিণত হয়েছে। গরুর মলমূত্রের গন্ধে এখন পদ্মার সৌন্দর্য উপভোগ করতে হয় নাকে রুমাল চেপে। নগরীর আলুপট্টি ও ফুদকিপাড়া। পদ্মা নদীর তীরঘেঁষে গড়ে ওঠা এ এলাকায় সকাল-বিকেল ঢল নামে সব ধরনের মানুষের। বিকেলের অবসর সময়টুকু কাটাতে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবেই এলাকাটি বেছে নেন রাজশাহীর মানুষ। কিন্তু নদীর পাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে রীতিমতো গোয়ালঘর। নগরীর লালন শাহ পার্ক এলাকাটি ইতোমধ্যে তারের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলেছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। সেই ঘেরা পার্কের ভেতরে রীতিমতো গরুর বাথান গড়ে তুলেছেন নদীসংলগ্ন দরগাপাড়া ও পাঠানপাড়া এলাকার লোকজন। সেখানে রাতদিন গরু বেঁধে রাখা হচ্ছে। পদ্মাপাড়ে গরু বাঁধা থাকলেও শহরের রাস্তাঘাটে ছুটে বেড়ানো গরুগুলো বাঁধা নেই। নগরীর শিরোইল এলাকার নিয়াজ আহমেদ বলেন, রাজশাহী নগরীর রাস্তাঘাটে দৃষ্টি দিলেই গরুর পাল চোখে পড়ে। সাবধানে গাড়ি না চালালে গরুর সঙ্গে ধাক্কা লাগবে যে কারও। মালিকবিহীন এসব গরু, ছাগল, ভেড়ার বিচরণ বন্ধে কেউ এগিয়ে আসে না। রাস্তাঘাট ছাড়াও রেলস্টেশনের প্ল্যাটফরম, সরকারী হাই মাদ্রাসা মাঠ, বুলনপুর পদ্মা নদীর বাঁধ ছাড়াও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বারান্দা ও আউটডোরের মধ্যে গরু-ভেড়ার বিচরণ দেখা যায় প্রতিনিয়ত। এসব ব্যাপারে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতেখায়ের আলম জানান, নগরীতে বেওয়ারিশ গরু, ভেড়া ও ছাড়লের অবাধ বিচরণ মানুষ এবং যানবাহন চলাচলে বিড়ম্বনার সৃষ্টি করে। অনেক সময় ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটে। রাস্তার এসব গরুর অবাধ বিচরণ রোধে ইতোমধ্যে নগরীর সব থানার পুলিশকে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিযাম উল আযীম বলেন, শুধু সড়কের ওপর বিচরণ করা বেওয়ারিশ গরু, ছাগল, ভেড়া নয়, নগর পরিচ্ছন্ন রাখতে ফুটপাথ উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সর্বশেষ সিটি কর্পোরেশনের সাধারণ সভায় এসব বিষয়ে সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শীঘ্রই সিটি কর্পোরেশন বেওয়ারিশ গরু অপসারণ ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে নামবে।
×