ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ফেডারেশন উদাসীন, একাডেমিগুলো সক্রিয়!

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ৫ নভেম্বর ২০১৬

ফেডারেশন উদাসীন, একাডেমিগুলো সক্রিয়!

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর গঠন করা হয় বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন। সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ব্যাডমিন্টন খেলা নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ থাকার পর আজও তা জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছাতে পারেনি রুমেল খান ॥ ব্যাডমিন্টন খেলার উৎপত্তি নিয়ে বহুমত থাকলেও অধিকাংশের ধারণাÑ এ খেলার জন্ম ভারতের পুনেতে। সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে পুনে অবস্থিত ইংরেজ সৈন্যরা স্থানীয় লোকজনদের শাটলকর্ক ও ছোট ব্যাট দিয়ে খেলতে দেখে কৌতূহলবোধ করেন। তারা স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে ওই খেলা শিখে ছুটিতে ইংল্যান্ডে যেয়ে ‘ব্যাডমিন্টন’ নামক জায়গায় একত্র হয়ে খেলাটি শুরু করেন। সেই থেকে সেই জায়গার নাম অনুসারে ব্যাডমিন্টন খেলার নামকরণ হয়। ব্রিটিশ গ্যারিসন নগরী পুনেতে এই খেলা বিশেষ জনপ্রিয় ছিল বলে এই খেলার অপর নাম ‘পুনাই।’ পরবর্তীকালে বিভিন্ন দেশে খেলাটি বহুলভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এটি একপ্রকার র‌্যাকেট ও শারীরিক স্পর্শহীন ক্রীড়া। যা একক বা যুগ্মভাবে খেলা যায়। ১৯৩০ সালে বিশ্ব ব্যাডমিন্টন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন (বর্তমানে ব্যাডমিন্টন ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন) প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯২ সালে পাঁচটি ইভেন্টসহ ব্যাডমিন্টন অলিম্পিকের অন্তর্ভুক্ত হয়। ব্রিটিশ আমলেই বাংলায় চালু হলেও বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে এই খেলাটি মোটামুটি শহরাঞ্চলেই প্রসারিত ছিল। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর গঠন করা হয় বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন। সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ব্যাডমিন্টন খেলা নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ থাকার পর আজও তা জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছাতে পারেনি। তেমনি পারেনি কোন সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে। ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন এই খেলাটিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য তেমন কিছুই করেনি। এভাবেই বাংলাদেশে চলছে ব্যাডমিন্টন খেলা। তবে ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন ব্যাডমিন্টন খেলাটির প্রসার এবং সম্ভাবনাময় শাটলার তৈরিতে কোন অবদান না রাখলেও ব্যক্তিগত পর্যায়ে অনেকেই এগিয়ে আসছেন। তাদের বেশিরভাগই জাতীয় পর্যায়ে ব্যাডমিন্টন খেলেছেন বা এখনও খেলছেন। জানা গেছে নতুন-পুরনো মিলে এ পর্যন্ত দেশে ব্যাডমিন্টন একাডেমির সংখ্যা ১১, যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। এই একাডেমিগুলোর বেশিরভাগই পেশাদার। অর্থাৎ তারা বিনে পয়সায় নয়, রীতিমতো অর্থের বিনিময়ে খেলা শেখাচ্ছে বিভিন্ন বয়সের উঠতি শিশু-কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের। দেশের প্রথম দুটি ব্যাডমিন্টন একাডেমি হচ্ছে ঢাকার ফকিরেরপুলের লিজা হোসেন ব্যাডমিন্টন একাডেমি এবং নারায়ণগঞ্জের নিট কনসার্ন ব্যাডমিন্টন একাডেমি। দুটি একাডেমিই বিনা পারিশ্রমিকে খেলাটা শেখায়। অনেক জাতীয় শাটলারও সেখানে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন। এছাড়া তারা প্রতিভাবান শাটলারদের দলভুক্ত করে এবং তাদের সন্তোষজনক পারিশ্রমিকও দেয়। লিজা হোসেন ব্যাডমিন্টন একাডেমির দায়িত্বে আছেন মোঃ হোসেন ভুলু। ফেডারেশনের সাবেক সদস্য। তঁর স্ত্রী লিজা হোসেন, যিনিও ফেডারেশনের সাবেক সদস্য। সদ্য নতুন ও মোটামুটি নতুন ১১ একাডেমিগুলো হচ্ছে : সারোয়ার ব্যাডমিন্টন একাডেমি, আরিয়ান ব্যাডমিন্টন একাডেমি, এনালিনা ব্যাডমিন্টন একাডেমি, তারেক ব্যাডমিন্টন একাডেমি, মারুফ ব্যাডমিন্টন একাডেমি, গৌতম ব্যাডমিন্টন একাডেমি, টিম নিখিল ব্যাডমিন্টন একাডেমি, এনাম ব্যাডমিন্টন একাডেমি, সিব্বির ব্যাডমিন্টন একাডেমি, খুরশিদ ব্যাডমিন্টন একাডেমি ও বাপ্পী ব্যাডমিন্টন একাডেমি। উত্তরার দিয়াবাড়িতে অবস্থিত সারোয়ার ব্যাডমিন্টন একাডেমির দায়িত্বে আছেন জাতীয় শাটলার আহসান হাবিব পরশ। যিনি জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ১০ বারেরও বেশি চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন একক ও দ্বৈতে। বছরখানেক ধরে এই একাডেমিটি চালাচ্ছেন তিনি। আরিয়ান ব্যাডমিন্টন একাডেমির বয়স মাস চারেক। পরিচালনায় জাতীয় চ্যাম্পিয়ন শাটলার আরিফ, যিনি জাতীয় পর্যায়ে দ্বৈতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন ১৯৯৭-৯৮ সালে। এনালিনা ব্যাডমিন্টন একাডেমিটি চলছে বছর খানেক ধরে। এটি খুলনায়। জাতীয় চ্যাম্পিয়ন এনায়েত উল্লাহ খান এবং তার স্ত্রী এলিনা সুলতানার নামের আদ্যাক্ষর মিলিয়ে একাডেমিটির নামকরণ করা হয়েছে। ঢাকার পল্টনে অবস্থিত তারেক ব্যাডমিন্টন একাডেমিটি ব্যতিক্রম। এখানে বিনা পয়সায় খেলা শেখান হয়। বিশেষ করে পথশিশুদের। সাবেক জাতীয় শাটলার তারেক মাহমুদ প্রায় দশ বছর ধরে চালাচ্ছেন এই একাডেমিটি। মারুফ ব্যাডমিন্টন একাডেমিও অবস্থিত পল্টনে। এটি গত দশ বছর ধরে চালাচ্ছেন সাবেক জাতীয় জুনিয়র ডাবলস চ্যাম্পিয়ন মারুফ। মিরপুরে অবস্থিত গৌতম ব্যাডমিন্টন একাডেমিটি মোটামুটি দশ বছরের পুরনো। এর দায়িত্বে সাবেক জাতীয় শাটলার গৌতম চন্দ্র পাল। চট্টগ্রামে অবস্থিত টিম নিখিল ব্যাডমিন্টন একাডেমি চলছে দুই বছর ধরে। এর খেলোয়াড় সংখ্যা ২০০। এর দায়িত্বে আছেন নিখিল চন্দ্র ধর। আগে তিনি ছিলেন ফেডারেশনের সদস্য ও মালয়েশিয়ান ব্যাডমিন্টন একাডেমির কোচ। পরে হন ব্যাডমিন্টন এশিয়ার আঞ্চলিক উন্নয়ন কর্মকর্তা। সিলেটের সিব্বির ব্যাডমিন্টন একাডেমিতে আছে ৭৬ ব্যাডমিন্টন শিক্ষার্থী। পাবনায় বছর আটেক ধরে চলছে খুরশিদ ব্যাডমিন্টন একাডেমি। দায়িত্বে সাবেক ন্যাশনাল জুনিয়র চ্যাম্পিয়ন খুরশিদ। সাবেক জাতীয় শাটলার বাপ্পী খুলনায় বছর পাঁচেক ধরে চালাচ্ছেন বাপ্পী ব্যাডমিন্টন একাডেমি। এছাড়া আরও ছোট-খাটো মাপের ১৫টি ব্যাডমিন্টন একাডেমি দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সাবেক সদস্য, আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টন আম্পায়ার এবং জাতীয় পর্যায়ে ১৬ বছর খেলা সাবেক শাটলার একেএম হাফিজুর রহমান খান মিলন বলেন, ‘এই একাডেমিগুলোর প্রতিটিতেই অসাধারণ খেলে এমন কমপক্ষে ৩-৪ জন শাটলার আছে। এখন তাদের যদি দীর্ঘমেয়াদে থাকা-খাওয়াসহ উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়া যায়, তাহলে তারা আগামী ৪-৫ বছরের মধ্যে অত্যন্ত উঁচুমানের শাটলারে পরিণত হবে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাফল্য পাবে। সদ্য রসমাপ্ত সামার ওপেন (র‌্যাঙ্কিং) ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টে এরা সবাই অংশ নিয়েছিল। সেখানে তাদের খেলা দেখে আমার এই ধারণা হয়েছে। এরা অনেক সম্ভাবনাময়, প্রতিভাবান ও মেধাবী।’ মিলন আরও যোগ করেন, ‘তবে এজন্য দরকার প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা। প্রয়োজন সদিচ্ছার। যেটা এই একাডেমিগুলোর আছে।’
×