ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভূপেন হাজারিকা স্মরণে আয়োজন

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ৫ নভেম্বর ২০১৬

ভূপেন হাজারিকা স্মরণে আয়োজন

গৌতম পাণ্ডে ॥ ‘ও মালিক সারাজীবন কাঁদালে যখন এবার মেঘ করে দাও’ প্রার্থনা যার কণ্ঠে ধ্বনি-প্রতিধ্বনিত হতো, তিনি যেন মেঘ হয়েই ভেসে বেড়াচ্ছেন। তার জাদুকরী কণ্ঠ যেন বার বার জানান দেয়, ‘মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে’। তিনি ২০১১ সালের এই দিনে মৃত্যুর হাত ধরে আকাশের মেঘের মতোই দূরে চলে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। সুরেলা কণ্ঠে ‘আমি এক যাযাবর’ গানের জাদুকর এদিন থেকে হয়ে যান অনন্ত পথের যাযাবর। তখন তার বয়স ৮৬ বছর। বাংলা গানের এই প্রবাদ পুরুষ ভূপেন হাজারিকার পঞ্চম প্রয়াণবার্ষিকী আজ শনিবার। তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করেছে ‘মঙ্গল হোক এই শতকে মঙ্গল সবার’ শীর্ষক সঙ্গীত সন্ধ্যা। একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে আজ সন্ধ্যা ৬টায় কিংবদন্তি এই শিল্পীর গাওয়া গান দিয়ে তাকে স্মরণ করবে শিল্পীরা। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। এছাড়া দলীয় গানে অংশ নেবে ভূপেন হাজারিকার গানে কর্মশালার শিক্ষার্থী ও ঢাকা সাংস্কৃতিক দলের শিল্পীরা। ভূপেন হাজারিকা ১৯২৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর আসামের সাদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। একাধারে তিনি ছিলেন গীতিকার, সুরকার, চলচ্চিত্র নির্মাতা, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। মাত্র ১০ বছর বয়স থেকেই গান লিখে সুর দেয়া শুরু করেন তিনি। অসাধারণ প্রতিভা নিয়ে জন্ম নেয়া এই মহান শিল্পীর শূন্যস্থান সহজে পূরণ হওয়ার নয়। আসামিয়া, ফোক, বলিউড এবং আধুনিক গানকে তিনি জনপ্রিয় করেছেন। বাংলা ও হিন্দী দু’ভাষাতেই আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা পায় তার গান। মৃত্যুর কয়েক বছর আগে ঢাকায় এসেও ভক্ত শ্রোতাদের মাতিয়ে যান তিনি। তিনি ৩৩টি চলচ্চিত্রে কণ্ঠ দেন। তার গাওয়া ও সঙ্গীত পরিচালনায় বিখ্যাত ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘রুদালী’, ‘দামান’, ‘দারমিয়া’, ‘গজগামিনী’ প্রভৃতি। সর্বশেষ ২০০৬ সালে ‘চিঙ্গারী’ চলচ্চিত্রে কণ্ঠ দেন তিনি। বাংলাদেশে ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ নামে যৌথ প্রযোজনায় ছবিতে কণ্ঠ দেন ১৯৭৩ সালে এবং ১৯৭৭ সালে ‘সীমানা পেরিয়ে’ চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেন। এ চলচ্চিত্রের বিখ্যাত গান ‘মেঘ থম থম করে’ এখনও সবার মুখে মুখে। সময়কে দারুণভাবে ছুঁয়ে দিয়ে তিনি গেয়েছিলেন, ‘খোলা চিঠি দিলাম তোমার কাছে, ‘মানুষ মানুষের জন্য’, ‘আজ জীবন খুঁজে পাবি’, ‘বিস্তীর্ণ দু পাড়ে’, ‘সাগর সঙ্গমে’, দোলা হে দোলা’, ‘প্রতিধ্বনি শুনি’, ‘আমায় একটা সাদা মানুষ দাও’, ‘গঙ্গা আমার মা-পদ্মা আমার মা’, ‘জীবন নাটকের নাট্যকার কি বিধাতা পুরুষ’-প্রভৃতি জীবন অনুসন্ধানী গান। ১৯৯২ সালে ভারতীয় চলচ্চিত্রে তার আজীবন অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৭৫ সালে আঞ্চলিক চলচ্চিত্রে জাতীয় পুরস্কার, ২০০১ সালে পদ্মভূষণ পুরস্কার, ২০০৯ সালে সঙ্গীত নাটক একাডেমি এ্যাডওয়ার্ডসহ অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তার গান স্বাধীনতাকামী জনগণের মাঝে যে আশার আলো জাগিয়েছিল তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
×