ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিশুর চাই স্নেহমমতা

প্রকাশিত: ০৬:২২, ৫ নভেম্বর ২০১৬

শিশুর চাই স্নেহমমতা

শিশুর জন্য চাই স্নেহমমতা, নির্যাতন-নিপীড়ন নয়- একথা নতুন করে স্মরণ করিয়ে দিতে হচ্ছে। বিষয়টি কষ্টের, ক্রোধেরও বটে। গত কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিশুদের ওপর, বিশেষ করে মেয়েশিশুদের ওপর যে ধরনের নিপীড়ন চলছে তাতে সন্দেহ জাগে নিপীড়নকারীরা সত্যিকারের মানুষ কিনা! আমাদের সমাজে এ ধরনের ঘটনা একেবারেই অপ্রত্যাশিত, অনাকাক্সিক্ষত। এদেশের মানুষের সুনাম রয়েছে সম্পূর্ণ অপরিচিত ব্যক্তির জন্যও সহমর্মিতার, কেঁদে বুক ভাসানোর। তাহলে শিশুদের ওপর বর্বর নির্যাতন হচ্ছে কিভাবে? সম্প্রতি নওগাঁয় দু’জন মাদ্রাসা শিক্ষক এক শিশু শিক্ষার্থীকে নির্দয় প্রহার করেই ক্ষান্ত হননি, তার কচি হাত ব্লেড দিয়ে ফালি ফালি করে কেটেছেন। ধর্মীয় শিক্ষকের এ কী অধর্ম! অনেকেই স্মরণ করতে পারবেন রাজধানীর এক আরবী শিক্ষকের অপকর্মের কথা। গত বছর চাঞ্চল্যকর ওই শিশুধর্ষণ মামলায় আরবী শিক্ষকটির যাবজ্জীবন কারাদ- হয়। উল্লেখ্য, শিশু ধর্ষণকারীর মৃত্যুদ- মানুষের কাছে কাক্সিক্ষত হলেও এখন আর সে সুযোগ নেই। তারপরও বিষয়টি সমাজে উত্তম দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছিল। কারণ সমাজে খুব কম সংখ্যক ধর্ষকেরই উপযুক্ত শাস্তি প্রাপ্তির উদাহরণ রয়েছে। ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক যা বলেছিলেন তা জাতির বিবেকের উচ্চারণ হলেও নওগাঁর দুই মাদ্রাসা শিক্ষক সেটি থেকে কোন শিক্ষাই নেননি। বিচারক বলেছিলেন, ‘স্কুলের আরবী শিক্ষক হলেন ছাত্রছাত্রীদের ন্যায়নীতি, মূল্যবোধ ও চরিত্র গঠনের সর্বোত্তম শিক্ষাগুরু। অথচ এই শিক্ষক একটা অবুঝ শিশুকে ধর্ষণ করে যে পশুত্বের বহির্প্রকাশ ঘটিয়েছেন তাতে আসামি শুধু শিক্ষক সমাজের নয় বরং মানবকুলের মৌলিক বিশ্বাসের জায়গাটি ধ্বংস করে মানবতাকে ভূলুণ্ঠিত করেছেন।’ এখন প্রশ্ন উঠবে নওগাঁর দুই মাদ্রাসা শিক্ষক পৈশাচিক পন্থায় শিশু নিপীড়ন করে কিসের নজির স্থাপন করলেন? কিছুদিন আগে দিনাজপুরে পাঁচ বছরের এক শিশুর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায় শিশুটির পিতৃতুল্য এক ব্যক্তি। ধর্ষণ এক মারাত্মক ব্যাধি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে আমাদের সমাজে। ধর্ষণ যে বিগত কয়েক বছরে অনেকটা বেড়েছে, তাই শুধু নয়। ধর্ষণের পদ্ধতি ও পরিধিও আশ্চর্যজনকভাবে অভিনব অবয়ব পেয়েছে। ধর্ষণের পাশাপাশি ধর্ষণতুল্য অপরাধের মাত্রাও বেড়েছে। নারী নিপীড়কদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ সমাজের সভ্যদের কাছ থেকে বার বার ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদ-ের কথা উচ্চারিত হয়ে থাকে। এর নেপথ্যের আবেগ ও অনুভূতিকে অস্বীকার করা চলে না। ধর্ষণ তো কেবল একজন নারীর তীব্র অবমাননা নয়, অনেক সময় তা তার মৃত্যুরই নামান্তর। আর শিশু ধর্ষণের বিষয়টি আরও মারাত্মক। অত্যন্ত গর্হিত এ অপরাধের শিকার শিশুটির মনোজগৎ ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশের স্বাভাবিক ধারাটি নেতিবাচকভাবে পরিবর্তিত হয়ে যায়। আমাদের দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনমূলক অপরাধগুলো কঠোরভাবে দমনের উদ্দেশ্যে বেশি কার্যকর বিধান সংবলিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ নামে আইন প্রণয়ন করা হয়। পরে এই আইনের কিছু ধারা সংশোধন করে ২০০৩ সালে প্রণীত হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন ২০০৩। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে শিশু ধর্ষণকারীদের প্রতিহত করার জন্য আরও কঠোর আইন যেমন জরুরী, তেমনি কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগও দরকার। শিশু নির্যাতন রোধের উপায় খুঁজে বের করার জন্য সমাজের বিবেকবানদের সক্রিয় ও সোচ্চার হওয়া চাই। শুধু সামাজিক আন্দোলন নয়, শিশু নিপীড়কদের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক জাগরণও জরুরী।
×