ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দেখার কেউ নেই!

প্রকাশিত: ০৬:২২, ৫ নভেম্বর ২০১৬

দেখার কেউ নেই!

বাজারে সব ধরনের শাক-সবজির দাম এখন তুলনামূলক অনেক বেশি। কারণ হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতিকে। অথচ বাজারে এখন নতুন শাক-সবজিতে সয়লাব। চাহিদানুয়ায়ী শাক-সবজির সরবরাহ যথেষ্ট কিন্তু তারপরও কেন এই মূল্যবৃদ্ধি। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি শাক-সবজির দাম বেড়েছে কমপক্ষে ২০ টাকা করে। এবারও সবজির আগাম উৎপাদন ভাল হয়েছে। বাজারে সরবরাহ হচ্ছে। সিন্ডিকেটের কারণে উৎপাদক বাজারে যে দামে সবজি বিক্রি করছেন, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি দামে ক্রেতাকে সবজি কিনতে হচ্ছে। ভোক্তারা বলছেন এই মূল্যবৃদ্ধি স্বাভাবিক নয়। অন্যদিকে কোরবানি ঈদের পর থেকেই অস্থিতিশীল চালের বাজার। যৌক্তিক কারণ ছাড়াই বিভিন্ন ধরনের চালের দাম বেড়েছে, বিশেষ করে মোটা চাল। খাদ্য উদ্বৃত্ত দেশে এ সময় চালের দাম বাড়ার কোন কারণ নেই। ব্যবসায়ীদের গুদামে চাল আছে। বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখতে সরকার খোলাবাজারে ১৫ টাকা দরে চাল বিক্রি করছে। ১০ টাকা কেজি দরে ৫০ লাখ হতদরিদ্র পরিবারকে মাসে ৩০ কেজি করে চাল দিচ্ছে। তারপরও চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বন্যার কারণে সবজির দাম সাময়িক বৃদ্ধির যৌক্তিকতা মেনে নিলেও চালের মূল্যবৃদ্ধি কেন? লবণ, চিনি, আদা, রসুন ও সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার বিষয়টি অনেক পুরনো। এ ধরনের অবস্থা নতুন নয়। প্রতিবছরই এই মৌসুমে সিন্ডিকেট করে বাড়ানো হয় চাল-শাক-সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। এমতাবস্থায় এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরতে না পারলে তা আরও অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছতে পারে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় বাজার পরিস্থিতি দেখার যেন কেউ নেই। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বাজার পরিস্থিতির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কতটুকু ওয়াকিফহাল এই প্রশ্নই এখন সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। এখনই এই মূল্যবৃদ্ধির রাশ টেনে ধরা দরকার বলে আমরা মনে করি। আসলে আমাদের বাজার ঘিরে যে অদৃশ্য সিন্ডিকেট রয়েছে, তা ভাঙতে না পারলে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা যাবে না। বিকল্প বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলার ব্যাপারে সরকারকে সক্রিয় হতে হবে, এমন কথা অনেকবার বলা হয়েছে। কার্যত কোন ফল হয়নি। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিকল্প বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলা গেলে অদৃশ্য সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেয়া খুব একটা কঠিন কাজ নয়। সংশ্লিষ্ট মহলের এদিকে কোন নজরদারি আছে বলে মনে হয় না। একই সঙ্গে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থায় আন্তরিক হতে হবে। মানুষকে স্বস্তিতে রাখা সরকারের অন্যতম কাজ। কিন্তু বাজার অস্বস্তির কারণে সরকারের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়তে সময় লাগবে না। সরকার জনকল্যাণে অনেক কাজ করে চলছে। কৃষি উৎপাদন বেড়েছে। কৃষক বিনামূল্যে সার ও বীজ পাচ্ছে, এমনকি সহজ শর্তে ঋণও পাচ্ছে। তারপরও বলব বাজারে সরকারের কৃষিবান্ধব নীতির তেমন কোন প্রতিফলন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাজার এখনও ভোক্তাদের জন্য সহায়ক হয়ে উঠতে পারেনি কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে। মৌসুম শুরুর আগে বাজারে চালের মূল্যবৃদ্ধি এর উদাহরণ। এই মুহূর্তে সহনীয় বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সরকারের ভূমিকার কোন বিকল্প নেই। সময়মতো যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া গেলে বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকতে বাধ্য ।
×